বেঙ্গালুরু শহরের বেলান্দুর লেকের পাশে আগুন লেগে সৃষ্টি হওয়া প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে পাশের রাস্তাগুলো দিয়ে গাড়ি ও পথচারীদের পথ চলতে অসুবিধা হয়। এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এই ঘটনাতে শহরবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। একে ‘হৃদয়বিদারক দৃশ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। অনেকে বলেছেন এ ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে শহরটির ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
অবশ্য এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড ব্যাঙ্গালুরের এই লেকে নতুন কোনো ঘটনা নয়। শহরের দূষণ বেলান্দুর লেককে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, এতে আগুন লাগলে প্রচণ্ড ধোঁয়া লেক থেকে রাস্তার উপরে এসে রাস্তাকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলে। ফলে গাড়ি চালক এবং পথচারীরা খুব অসুবিধায় পড়েন। বিশেষ করে গাড়িচালকরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালান।
এর আগে লেকটির পানির দূষণ নিয়ে পত্রিকায় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। লেকের ভিতরের শুষ্ক আবর্জনা এবং ঘাস থেকে বিকাল চারটার দিকে আগুনের সূত্রপাত। কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়লা আবর্জনা এবং শুষ্ক ঘাসের কারণে এবার এই আগুন লেগেছে।
বেরান্দুর এবং ভারথুর বেঙ্গালুরের দুটি প্রধান লেক। কলকারখানা এবং নগরবাসির ময়লা, আবর্জনা এবং বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে দুটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। লেকটিকে পরিস্কার করতে সরকার বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দিয়েছেন। স্টেট গর্ভমেন্ট এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় লেকের পানি পরীক্ষা এবং লেক ব্যবহারের উপযোগী করতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো দৃশ্যমান কাজ করা হয়নি।
এই ঘটনায় প্রকাশিত ভারতের এনডিটিভির সংবাদের নিচে মন্তব্য করেন শিল্পপতি এবং শহরটির ক্রমবর্ধমান দূষণ প্রতিরোধে গঠিত নাগরিক সমাজের একটি সংগঠনের প্রধান কিরন মজুমদার শ। তিনি বিষয়টিকে সরকারের চরম উদাসীনতা এবং অনীহার ফল হিসেবে উল্লেখ করেন।
সিনিয়র ফায়ার অফিসার রভি চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রায় সোয়া পাঁচটার মধ্যেই এখানে চলে আসি। এখানে এসেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক কাঁদা থাকায় আগুনের কাছাকাছি যাওয়াটা অনেক কঠিন ছিলো।
আগুন এবং জরুরি সেবার সহকারি পরিচালক কে ইউ রামেশ বলেন, এখন ধারণা করা হচ্ছে লেকের ভিতরে এবং চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুকনো আবর্জনা এবং ঘাস থেকেই এ আগুনের সৃষ্টি হয়েছে।
লেকের চারপাশের উঁচু দালান বাড়ির বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন যে, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অজ্ঞতার কারণে প্রায়ই এই লেকে আগুন লাগে এবং চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
কর্ণাটাক দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান লক্ষণ বলেন, লেকের চারপাশের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিপজ্জনক বেশকিছু কারখানা রয়েছে। লেকের ভিতরে বিষাক্ত কোনো রাসায়নিক বর্জ্য ফেলার কারনে আগুন লেগেছে কি না, বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছি এবং ৬৫০টি এপার্টমেন্ট গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখেছি। বাসিন্দারা আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন যে তারা আর এর মধ্যে ময়লা ফেলবেন না।
তীব্র দূষণের ফলে আগুনের সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রী অনিল মধাব দেব বলেন, আগে থেকেই একরম মন্তব্য করতে পারছি না, যেখান থেকে আগুনের উৎপত্তি সেখানে খতিয়ে দেখে বলতে হবে।
বর্তমান কংগ্রেস সদস্য এন এ হারিস দাবি করেছেন, শহরের লেকগুলোকে রক্ষা করতে সরকার বরাদ্দ বাড়িয়েছে, দৃশ্যমান পরিবর্তন খুব শীঘ্রই চোখে পড়বে।