জয়পুরহাটে ঈদের দিনে ছিরাতুন্নেছা নামে ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া তিন সন্তানকে আটক করেছে পুলিশ।
ওই বৃদ্ধাকে পুলিশ উদ্ধার করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে রাখেন।
সোমবার রাতেই বৃদ্ধার পক্ষে তার নাত বৌ শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে তার শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরদের বিরুদ্ধে মামলা করলে বৃদ্ধার তিন ছেলেকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। আটকরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোজাম্মেল হক।
জয়পুরহাট পৌর শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার বাসিন্দা মৃত নূর মোহাম্মদ মোল্লার স্ত্রী ৮৬ বছরের এই বৃদ্ধার নাম ছিরাতুন্নেছা।
পৈত্রিক সূত্রে সিরাতুন্নেছা দুই কোটি টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি পান বাবার কাছ থেকে। কৌশলে সেই জমি লিখে নেয় ছেলেরা। এরপর শুরু হয় তার উপরে ভরণ পোষণের অবহেলা, মানসিক নির্যাতন আর চরম অমানবিক আচরণ।
ছিরাতুন্নেছার ভাই রবিউল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ১৮-১৯ বছর আগে ছিরাতুন্নেছার স্বামী মারা যায়। এক সময় ছিরাতুন্নেছা ঢাকায় নাভানা কোম্পানিতে ষ্টোর কিপার হিসেবে চাকরি করতেন। পরে জানিয়ার বাগান এলাকায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
ঈদের দিনে ওই বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে যাওযার মধ্য দিয়ে অমানবিকতার চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ ঘটায় ছেলেরা বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
তারা জানান, বৃদ্ধার আহাজারিতে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ২৫ মে রাতে জয়পুরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে রাখেন।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বৃদ্ধার ছেলেরা কৌশলে তাদের মায়ের নামের সব জমি লিখে নেন। এরপর থেকে ছেলেরা ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণে অবহেলা, গালমন্দ, মানসিক নির্যাতনসহ তার প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে মায়ের ভরণপোষণ কোনো ছেলেই আর গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার সকালে জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের পাশে বৃদ্ধা মা ছিরাতুন্নেছাকে ফেলে রেখে চলে যান তারা।
পরে ৯৯৯ নাম্বারে স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মঙ্গলবার দুপুরে বড় ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওই বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব নিলে এবং অন্য ছেলেরা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলে মুচলেকা নিয়ে ছেলেদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।