সময় তখন দুপুর ২টা। রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্থ ‘প্রবীণ নিবাস’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রমে সামনে গিটার কাঁধে দাঁড়িয়ে আছেন শিল্পী পাপি মনা। বৃদ্ধাশ্রমের সামনে কী করছেন? জানতে চাইলে এই শিল্পী উত্তরে বললেন, এখানে গান করতে এসেছিলাম। বৃদ্ধাশ্রমে যারা আছেন তাদের সাথে সকাল থেকে আড্ডা দিতে এসেছিলাম। তাদেরকে বিনোদিত করতে এসেছিলাম।
বৃদ্ধাশ্রমে বিনোদন? বিষয়টি পরিষ্কার করলেন পাপি মনা। বললেন, বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন তাদের বেশির ভাগই এখানে আসেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে। পৃথিবীতে হয়তো তাদের অনেকেই আছেন, কিন্তু জীবন সায়ান্হে এসে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রিয়জনকে কাছে পান না। দিন দিন তারা আরো একা হয়ে পড়েন। প্রিয়জন থেকে দূরে থাকা, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া এইসব মানুষকে একটু বিনোদন যোগানোর আয়োজন করেছিলেন শারমিন সুলতানা নামের একজন। তার ডাকেই সাড়া দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে আজকের মতো অসাধারণ একটা দুপুর কাটাতে পারলাম।
কোনো পারিশ্রমিক কি পেয়েছেন? প্রশ্নই আসে না। বিনে পয়সায় এইসব অকৃত্রিম মানুষকে একটা গান শোনানোর সুযোগ পেয়েছি এটাইতো বড় পারিশ্রমিক। পাঁচমিশালি একটি গানে মুগ্ধ হয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের অতিথিরা। অন্তত কিছুক্ষণের জন্য তাদেরকে আনন্দিত হতে দেখেছি এটাই বা কম কিসে! বলছিলেন পাপি মনা।
গান শোনানোর উছিলায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অনেকের সাথে আাড্ডার বিষয়টিও জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা বলে মনে করেন এই শিল্পী। বললেন, এটা সত্য যে বৃদ্ধাশ্রমে বেশির ভাগই মানুষই আসেন নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, কেউ আসেন অভিমান করে, আবার কেউ বা বাধ্য হয়ে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেই প্রবল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। অনেকেতো মনে করেন, এখানেই নাকি তারা স্বাধীন। আমি যখন গান গাইছিলাম তখন বেশ কয়েকজনকে দেখলাম গানের সাথে সুর মেলাতে।
পাপি মনা ছাড়াও বৃদ্ধাশ্রমে সকাল-দুপুরের এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার পাশাপাশি এতে গান পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম মাসুম। ব্যতিক্রমি এই আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন ড. আবুল হাশেম, ড. সুলতান হোসেন, ডা. আমানউল্লাহ এবং অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শারমিন সুলতানা।