চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বুধবার থেকে করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৩ টায় ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

সোমবার ৩ টায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন অবহিতকরণ ও ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, করোনাকালীন সময়ে নানা রুপ উদ্যোগ আছে এবং তার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  করোনার সময়ে প্রত্যেক করোনা রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। সবচেয়ে আনন্দের বিষ এসময়ে সরকার ৬ হাজার ৯‘শ ৯০ জন চিকিৎসক, ৫ হাজার ৯২৪ জন সিনিয়ার স্টাফ নার্স, ৩৮১ জন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।  সারাদেশে ১৩৩টি পরীক্ষাগারে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে।

ভারত থেকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী হিসেবে ২০ লাখ ডোজ এবং আজকে সকালে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছেছে।  আন্তর্জাতিক নীতি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসরণ করে সামনের সারিতে থাকা কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তৈরি ভ্যাকসিনেশন অ্যাপ ‘সুরক্ষা’ এর বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, অ্যাপটি তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় তৈরিকৃত যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে হস্তান্তর করা হবে।

অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধনের বিষয়ে বলা হয়, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে পারবেন।

‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন ভ্যাকসিন নিতে হবে।

পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে, যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে।

এই ১৮টি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে নাগরিক নিবন্ধন, সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনুমোদিত সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীর মুক্তিযোদ্ধা; সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য; সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা।

এছাড়া রয়েছেন সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী; ধর্মীর প্রতিনিধি (সকল ধর্ম); মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি; বিদ্যৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিস্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মত জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী; রেল স্টেশন, বিমান বন্দর ও নৌ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী; জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।

জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।

মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর দীর্ঘমেয়াদী রোগ বা কো মরবিডিটি আছে কি না, থাকলে কোন কোন রোগ আছে।

সেখানে আরেকটি ঘরে জানাতে হবে পেশা এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কি না।

তারপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা সিলেক্ট করতে হবে। সব শেষে ফরম সেইভ করলে নিবন্ধনকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওটিপি। সেই ওটিপি কোড দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে।

নিবন্ধন হয়ে গেলে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে লগ ইন করে এসএমএস এর মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।

এসএমএস এ যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখে ভ্যাকসিন কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত ভ্যাকসিন দান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সারা দেশে এই গণ টিকাদান শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তার আগে ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সেদিন আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম উপস্থিত ছিলেন।