বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় হাত থাকতে পারে, প্রতিবেশী যুবকের এমন ভাবনা থেকে রাজধানীর বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডিউটিরত অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সিকিউরিটি গার্ড মো. শামীম।
রোববার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানার পূর্বধনিরাম গ্রামের দুই প্রতিবেশী ভাই মো. শামীম ও মো. কফিল। শামীম এলিট ফোর্স সিকিউরিটি গার্ডে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে কফিলকে ঢাকা নিয়ে আসে এবং চাকরি দেন। এর কিছু দিন পর কফিলের বিয়ে ঠিক হয় এবং মেয়ে পক্ষ কফিলের সম্পর্কে খোঁজ নিযে ভাল কিছু না পেয়ে বিয়ে ভেঙেও দেয়। কিন্তু কফিল ভাবে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পেছনে দায়ী শামীম। তাই শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে কফিল এবং পরে সফল হয়।
গত ২১ জানুয়ারি বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডিউটিরত সিকিউরিটি গার্ড মো. শামীম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকারী মো. কফিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো।
গত বুধবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানার পূর্বধনিরাম গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে কফিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় হত্যার কাজে ব্যবহৃত কিছু আলামত আসামির নিজ বাড়ি থেকে ও বাকি আলামত রাজধানীর ভাটারা তার মেস থেকে জব্দ করা হয়।
পিবিআই এর এই কর্মকর্তা বলেন: ভুক্তভোগী মো. শামীম প্রগতি স্মরণীর বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে প্রহরী হিসেবে চাকরি করত। শামীম প্রতিদিনের মতো ২০ জানুয়ারি রাত ১০টা হতে ২১ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত এটিএম বুথে ডিউটি করছিল। গত ২১ জানুয়ারি শামীম হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
হত্যা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই উপর দায়িত্ব আসে। মামলাটি তদন্তের সময় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, গুপ্তচর নিয়োগ ও ঘটনাস্থলের এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মো. কফিলকে হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
হত্যাকারী মো. কফিল এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানিতে গার্ড হিসেবে ভুক্তভোগী শামীমের সঙ্গে কর্মরত ছিল। হত্যার দিন শামীম বারিধারা জে-ব্লকের যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ও কফিল একই ব্লকে ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথে রাত্রীকালীন ডিউটি করছিল।
আসামি কফিলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে শাহাদাত হোসেন জানান: কফিল ও শামীম সম্পর্কে প্রতিবেশী ভাই। শামীম এলিট ফোর্সে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে কফিলকে ঢাকা নিয়ে আসে এবং চাকরি দেয়। কফিল ঢাকা এসে ভিকটিম শামীমের বাসায় এক মাস থাকে। শামীমের বাবা-মা কফিলকে বাসায় থাকতে নিষেধ করলে সে বাসা ছেড়ে চলে যায়। পরে রাজধানীর ভাটারায় বসবাসের সময় সাবিনা নামের এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার বেশ কিছু দিন পর কফিলকে সাবিনা তার বোনকে বিয়ের করার প্রস্তাব দেয়।
‘‘প্রস্তাবে কফিল রাজী হয়ে বিয়ে ঠিক করলে এক পর্যায়ে সাবিনার স্বামী কফিলের নিজ গ্রামের ঘর-বাড়ি দেখতে ও কফিল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে যায়। কফিল সম্পর্কে ভালো কিছু না পেয়ে সাবিনা বিয়ে ভেঙে দেয়। আর এই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনে কফিল মনে করতো শামীমের হাত ছিল। বিয়ে ভেঙে দেওয়া, কফিলের ব্যক্তিগত কথা সিকিউরিটি কোম্পানির জোন কমান্ডার শাহীনকে বলে দেওয়া এবং ধার করা দুই হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ায় কফিল ভিকটিম শামীমের উপর ভীষণভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।’’
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরও জানান: হত্যাকাণ্ডের দুই তিন দিন আগে কফিল নতুন বাজার থেকে হত্যার করার জন্য হাতুড়ী, সাদা প্যান্ট, জ্যাকেট এবং মুখোশ কিনে একটি ব্যাগের ভিতরে লুকিয়ে রাখে।
ঘটনার দিন রাতে ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নিয়ে কিছুদূর সামনে গিয়ে পোশাক বদল করে কফিল। পোশাক বদলে ব্যাগটি ইউসিবি বুথের ছাদে রেখে দেয়।
ব্যাগ রাখার পর কফিল বারিধারার জে-ব্লকের ভুক্তভোগী শামীমের যমুনা ব্যাংকের বুথে যায়। গিয়ে দেখে শামীম চাদর মুড়িয়ে শুয়ে আছে। এরপর কফিল পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে শামীমকে গুরুতর জখম করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর কফিল যমুনা ব্যাংকের ভিতরের ক্যামেরা ভেঙে যুমুনা ব্যাংকের বুথ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর অন্য রাস্তা দিয়ে কফিল তার ডিউটিরত পোস্ট ইউসিবি বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নিয়ে খুনের পোশাক বদলে এলিট ফোর্সের পোশাক পড়ে এবং খুনে ব্যবহৃত পোশাক, মুখোশ ও হাতুড়ী তার ব্যাগের ভিতর রাখে। এরপর ব্যাগটি নিয়ে বাসার রুমে রেখে দেয়।
শাহাদাত হোসেন বলেন: শামীমকে নৃশংসভাবে খুন করেও পাকা অভিনেতার মতো আচরণ করে কফিল। শামীমের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ এবং শামীমের লাশ ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া, দাফন করাসহ যাবতীয় কাজে তাদের সহযোগিতা করে।
শামীমকে খুন করার পর আসামি কফিল এলিট ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দেয় এমনকি বকেয়া বেতন ও বোনাসের টাকা নেওয়ার জন্য পর্যন্ত ঢাকা আসেনি।
গত শুক্রবার কফিলকে আদালতে হাজির করা হলে কফিল শামীমকে হত্যায় দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।