বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়ের নাম দক্ষিণ কোরিয়া। অর্ধশত বছর আগেও দেশটি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিলো, অথচ আজ তা সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম। এর রাজধানী সিউল নানাধরনের ব্যবসা বাণিজ্যের আধার। ম্যানহাটনের আকাশ ছোয়া ভবনের গৌরবকে অতিক্রম করার তীব্র প্রতিদন্দ্বিতায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীটি।
তবে দেশটির উন্নতির পথ ছিলো একেবারেই ভিন্ন। একসময় ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন থাকার অতীত ইতিহাস দেশটির সমৃদ্ধির পথে কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। ১৯৬০ এর দশকে দেশটির নেতৃত্বে ছিলেন একনায়ক শাসক এবং তিনি ব্যবসায়ী নেতাদের শুধু শিল্প কারখানা তৈরির নির্দেশনা দিতেন, যা তার দেশটির অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করে।
বিবিসির সিউল প্রতিনিধি স্টিভ ইভানস এমন তিনজন নারী দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিকের সাথে কথা বলেছেন, যাদের কর্মজীবন এবং সাফল্যের কথা দেশটির গতিশীল অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে।
রোমি হান
‘প্রয়োজনীয়তাই নতুন কিছু আবিষ্কারের পথ তৈরি করে দেয়’ এমনটাই বিশ্বাস রোমি হানের। হাটু গেড়ে বসে শক্ত মেঝে হাত দিয়ে মোছে পরিষ্কার করতে তিনি ঘৃণা করেন। আর তাই তিনি তৈরি করেছেন মোছার কাজে ব্যবহারযোগ্য একটি যন্ত্র, যা গৃহস্থালী এ সকল কাজের যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে।
তার এই পরিত্রাণের পথ তৈরি করা যন্ত্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি সাধারন কাপড়, যার সাথে একটি ছোট পানির ট্যাংক রয়েছে এবং একটি উত্তপ্তকরণ যন্ত্র রয়েছে, যা মেঝেতে বাষ্প স্প্রে করে।
এটা এত ভালো কাজ করতো যা তিনি বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেন। এই ‘বাষ্প-কাপড়’ এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে হান কর্পোরেশন। হানের এই প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করছেন ৮০ জন কর্মী। এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তার বাৎসরিক আয় প্রায় ১২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (৯৩৩ কোটি টাকা)।
হান বলেন, “অধিকাংশ গৃহিনীকে হাত এবং হাটুতে ভর দিয়ে প্রতিদিনই মেঝে মুছতে হয়। আমি এই সমস্যা থেকে কোরিয়ান গৃহিনীদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম।”
গোয়েন লী
গোয়েন লী একজন শিক্ষক এবং তিনি বাৎসরিক ৫০ লক্ষ ইউএস ডলার (৩৮ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) আয় করেন। শিক্ষার প্রতি ব্যাপক আগ্রহান্বিত অর্থনীতির দেশে তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে রূপান্তর করেছেন।
তিনি এক মাসে ক্লাসরুমে ১ হাজার জনকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেন এবং ২ লাখ মানুষকে অনলাইনের মাধ্যমে এই শিক্ষা প্রদান করেন। তার এই শিক্ষার ব্যাপারে চীনের মানুষজনের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করে তিনি অনলাইনে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
ভালো চাকরির জন্য কোরিয়ান এবং চীনারা ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করায় লীর এই ব্যবসায়ের ব্যপক প্রসার ঘটেছে। তার অধীনে একজন ড্রাইভার এবং ইন্টারনেটে অনুসন্ধানের জন্য কয়েকজন সহযোগী রয়েছেন।
লী বলেন, “আমি যখন প্রস্তুত হয়ে ক্লাসরুমে আমার শিক্ষার্থীদের সামনে দাড়াই, আমি আত্মবিশ্বাসী এবং স্বস্তি অনুভব করি।”
চ্যাং হিউন-সুক
১৭ বছর আগে চ্যাং হিউন-সুক একটি খাবারের ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন, যেখানে তিনি ডিপ-ফ্রাইড চিকেন ঝাল সসে মেখে বিক্রি করতেন। এখন তিনি এই ব্যবসা থেকে বছরে প্রায় তিন লাখ ইউএস ডলার (দুই কোটি ৩৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা) লাভ করেন।
চ্যাং তার অতীতের দারিদ্রের নির্মমতার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তার এমনও দিন গেছে যখন তিনি তার শিশু সন্তানের জন্য দুধের যোগান দিতে পারেননি। তাই আজকে যখন তিনি অনেক টাকা উপার্জন করছেন তখন টাকার সুখকে উপলব্ধি করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
সোচো কেন্দ্রিয় মার্কেটে তাদের দোকানটি সকাল নয়টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চালু থাকে। সপ্তাহের সাতটি দিনেই। দোকানে অধিকাংশ সময়ই তিনি থাকেন।