কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। সব ক্ষেত্রে যখন প্রশ্নপত্র ফাঁস একটা রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এরকম কোন অভিযোগ ছাড়া রেকর্ড প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে একটা পরীক্ষা অবশ্যই আশার খবর। পিএসসি এবার বেশি সতর্ক থাকায় এমনটা সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমরা পিএসসি এবং এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিককে অভিনন্দন জানাই। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে সকল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস যে বন্ধ করা সম্ভব, সেটা এ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে। এবারের বিসিএসে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী পরীক্ষার আসনে বসেছে। এমনকি এবার আগের চেয়ে এক লাখেরও বেশি প্রার্থী। সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী পরীক্ষা দিলেও পদের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ২৪টি। তবে, পিএসসি আড়াই হাজার জনকে বাছাই করবে। সমসংখ্যক প্রার্থীকে বাছাই করা হবে নন-ক্যাডার পদের জন্য। কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা টাকার বিনিময় ছাড়া চাকরি পাওয়া সম্ভব বলেই তরুণরা ক্রমেই বিসিএসের দিকে ঝুঁকছে। নতুন পে-স্কেলে বেতন-ভাতা অনেক বাড়ায় নতুন প্রজন্ম এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সরকরি চাকুরি বিশেষ করে বিসিএসমুখি। এটা এ ইঙ্গিতও দেয় যে বিসিএস অভিজাত শ্রেণি থেকে মুক্ত হয়েছে। সেটা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ঘটতে শুরু করেছে। পাকিস্তান আমলে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকুরি মূলতঃ অভিজাত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ তখন লেখাপড়াতেও এগিয়ে ছিল অভিজাত শ্রেণি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় সেই বৈষম্য দূর হতে শুরু করে। এখন অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য আগের মতো আর নেই। যে কারণে অজ পাড়াগাঁর একটি ছেলে বা মেয়েও দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে সরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে উচ্চপদের চাকুরির স্বপ্ন দেখতে পারে। এটি অবশ্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একটি বড় দিক। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের শুধুই বিসিএসমুখি হওয়া নিয়ে কিছু সমালোচনাও আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই লেখাপড়ার চেয়ে বিসিএসের প্রস্তুতিকেই মূল করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে এই চরম সত্যটি আরেকবার স্মরণ করে বলেছেন: বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মন আর গবেষণায় নেই, বরং কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় তার পেছনে ছুটে। তিনি বলেন: গবেষণার জ্ঞান এখন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি। তারপরও মাত্র দুই হাজার পদের বিপরীতে ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি প্রতিযোগী, এমনকি চাকরিপ্রার্থী সকল তরুণের কথাও ভাবতে হবে। সকলের জন্যই কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা টাকার লেনদেন ছাড়া চাকরির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ৩৮তম বিসিএসে যে দুই বা আড়াই হাজার প্রতিযোগী সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন, তারা জনসেবার মানসিকতা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাবেন বলেও আমাদের বিশ্বাস। আর বৃহৎ অংশের যারা এখানে নিয়োগ পাবেন না, তারাও যে একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেছেন এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। আমরা মনে করি, বিসিএস পরীক্ষায় পাস করা সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি নয়। পরিকল্পনা, সদিচ্ছা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে যার যার অবস্থান থেকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো সম্ভব।