বিশ্ব জুড়েই বড় ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের ইংগিত স্পষ্ট হয়ে আসছে। ২০১৫ সালের পুরোটাই জলবায়ুর নানান ধরনের ব্যতিক্রমী আচরণ দেখে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে এল নিনোর প্রভাবে কোথাও প্রচন্ড খরা আবার লা নিনার কারণে কোথাও তুষার ঝড় ও মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি। এর প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশংকা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ফসলের উৎপাদন এক পর্যায়ে অর্ধেকে নেমে আাসতে পারে।
বিষুব রেখার প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার আশেপাশের বায়ু মন্ডল ও মহাসাগরের তাপমাত্রা উঠানামাকে এল-নিনো চক্র বা সংক্ষেপে বলা হয় এনসো। স্প্যানিশ শব্দ লা-নিনার মানে হলো ছোট বালিকা যার প্রভাবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, আর এল নিনো মানে ছোট বালক যা প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের উষ্ণতার নাম।
এল নিনোর উষ্ণতায় এখন আফ্রিকা জুড়ে চলছে খরা, অন্যদিকে আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে হচ্ছে তুষারপাত, আবার কোথাওবা অন্য সময়ের চেয়ে গরম। গত কয়েক বছরে সারবিশ্বেই কোথাও হয়েছে সুনামী জলোচ্ছ্বাস আর বন্যা আবার কোনো কোনো দেশ পুড়েছে দাবানলে। জলবায়ুর এতো বেশী পরিবর্তনে আতংকিত বিশ্ববাসী। জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেসব দেশ সেই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন যে কোন সময়ে এই এল নিনো আর লা নিনোর পরিবর্তন হতে পারে, এইটা মনে রেখে কাজ করতে হবে, আগে যেখানে পাঁচ বছর ছয় বছর পর এই ফেজের পরিবর্তন হতো, সেটা এখন এক বছর দু বছর কিংবা ছয় মাসে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বাতাসের গতিবিধি যেটা জলীয় বাষ্প বহন করে যার মাধ্যমে শীত বসন্ত বর্ষা নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা এখন ক্রমান্বয়ে অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৫টি দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার যে অঙ্গীকার করেছে তার কোন ভাবেই বাস্তবায়িত হবে না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো উত্তপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী। যার ফলে দেখা গেছে ২০১৫ সাল পৃথিবীর ঐতিহাসিক যতো রেকর্ড আছে সব ভেঙ্গে প্রায় সব এলাকার জন্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত সময় গেছে। আমরা যদি এই শতাব্দীর শেষে দুই ডিগ্রী যদি সম্ভব হয় দেড় ডিগ্রীর কাছে রাখতে পারি তাহলে আমদের সুবিধা, কিন্তু প্যারিসে সম্মেলনে বলা হয়েছে সব দেশগুলো যা যা করতে পারবে সেগুলো যোগ করলেও আমরা তিন ডিগ্রীর আগে থামতে পারব না।
জলবাযুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে বাংলাদেশেকে আনতে হবে নতুন কৃষি প্রযুক্তি। মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
তিনি বলেন যে গতিতে জলবায়ু প্রতিদিন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে ঠিক সেই গতিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছে না। আশঙ্কতা মূল ঐ জায়গাতেই। এই ধারণাটা করা হচ্ছে যে পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে যে গতিতে ফসল উৎপাদন নিম্নমুখী হবে, সেই ব্যাপারে আমাদেরকে আরো অনেক বেশি তৎপর হওয়া দরকার কৃষক পর্যায়ে, মাঠ পর্যায়ে, গবেষণা পর্যায়ে, সরকারের ফান্ডের ইস্যু গুলোতে এবং বিদেশে যে সমস্ত সর্বোচ্চ চর্চা রয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশগুলো যেভাবে তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে সেই জায়গাতে আমাদের গুরুত্ব বেশী হওয়া দরকার।
কেবল কৃষিতেই নয় সার্বিক ভাবে দেশের মানুষকে জলবাযুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচাতে জরুরী হয়ে পড়েছে এ খাতে গবেষণা আর বিনিয়োগ বৃদ্ধি। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী আর সিনেমায় যে ধ্বংসের ছবি দেখে আতংকিত হয় তা যেনো বাস্তবে না হয় এ আশা বিশেষজ্ঞদের।