চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘বিশ্বে প্রতি দশজনের একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত’

বিশ্বের প্রতি দশজনের একজন ব্যক্তি দুরারোগ্য কিডনি রোগে ভুগছেন বলে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মেডিস্কেপ মেডিকেল নিউজ। প্রথমবারের মতো কিডনি রোগের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বিশ্বের ১২৫টি দেশের মানুষের (মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৩ শতাংশ) উপর পরিচালিত সমীক্ষার ভিত্তিতে এই আটলাস প্রকাশিত হয়। সমীক্ষাগ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বর এর মাঝে। যা এ বছর মেক্সিকো শহরের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজির বিশ্ব কিডনি পলিসি ফোরামে উপস্থাপিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে কিডনি রোগ নির্ণয় ও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য সব থেকে বেশি অর্থ ব্যয় করা হলেও এই দেশগুলোর প্রতি তিনজনের একজন কিডনির রোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। যা শতকরা ২৯ শতাংশ।

অন্যদিকে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর প্রতি তিনজনের দুইজনই কিডনি রোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় দেখেন। যা প্রায় শতকরা ৫৯ শতাংশ। এছাড়া বিশ্বের মোট প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় কিডনি রোগে ভুগেছেন।

বিশ্ব কিডনি স্বাস্থ্য আটলাসের সহকারি লেখক ও কানাডার এডমন্টনের আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আমিনু বেলো মেডিস্কেপ মেডিকেল নিউজকে বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় কিডনি রোগে ভুগেছেন। অনেকে আবার এ রোগ যে তাদের আছে তা সম্পর্কে জানেনই না।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী কিডনি রাগ নিরাময়ে সফলতার বিষয়ও উঠে আসে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ সফলতার হার ৭ শতাংশ, আফ্রিকাতে ৮ শতাংশ, উত্তর আমেরিকায় ১১ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপে ১২ শতাংশ। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মধ্যে কিডনি নিরাময়ে সব থেকে বেশি সফল দেশ সৌদি আরব এবং বেলজিয়াম। দুটি দেশই ২৪ শতাংশ সফলতা পেয়েছে। এরপরেই রয়েছে পোল্যান্ড (১৮ শতাংশ), জার্মানী (১৭ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (১৬ শতাংশ) এবং সিঙ্গাপুর (১৬ শতাংশ)। এই তালিকায় সব থেকে নিচের দিকে রয়েছে নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডস। দুটি দেশই মাত্র ৫ শতাংশ সফলতা পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সফলতার হার ১৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপ্রদানকারীদের মধ্য থেকে এটি জানা যায় যে দেশটির সরকার কিডনি রোগকে বেশি গুরুত্ব দেয় না। এর পিছনে দেশটির নীতি নির্ধারকদের সচেতনার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ডা. বেলো।

প্রতিবেদনের আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ে দুরারোগ্য কিডনি রোগ (সিকেডি) নির্ণয় এবং পরিচর্যার সুবিধা কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। গ্লোমারুলার ফিলট্রেশনের মাধ্যমে সিরাম ক্রেটেনাইনের পরীক্ষার সুবিধা মাত্র ১৮ শতাংশ দেশে পাওয়া যায়। অপরদিকে প্রোটেইনুইরা মেজারমেন্ট পরীক্ষার সুবিধা পেয়ে থাকে মাত্র ৮ শতাংশ দেশের মানুষ। এই শূণ্যস্থান পূরণ করতে কাজ করার পরামর্শ দেন ডা. বেলো।

ওই প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস ব্যাতীত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কিডনি রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক নেই। আফ্রিকার মোট দশটি দেশের মধ্যে নয়টিতেই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক নেই। দ্রুত ডায়ালসিস দরকার বা প্রতিস্থাপন দরকার এমন রোগীদের সঠিক তথ্য জানাতে সক্ষম হয়েছে ৪১ শতাংশ দেশ।