নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ যে উন্নতি করেছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
খাদ্য নিরপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসা কৈলাস সত্যার্থী ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেই চ্যানেল আই পরিদর্শন করেন। তার কথায় উঠে আসে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার নানাদিক।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ীকে স্বাগত জানান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।সেসময় কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান রাশেদা কে চৌধুরী। কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে তার স্ত্রী সুমেধা সত্যার্থীও ছিলেন চ্যানেল আই পরিদর্শনে।
চ্যানেল আই নিউজ ম্যানেজমেন্ট টিমের সাথে আলাপকালে নিজের জীবন এবং কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কৈলাস সত্যার্থী বলেন, একজন স্বাধীন মানুষ স্বাধীনতার আনন্দ পুরোটা বুঝতে পারেন না। কাউকে স্বাধীন করে দেয়ার মধ্য দিয়ে সে আনন্দটা পাওয়া সম্ভব। আমি সেই আনন্দটাই পেয়েছি।
চ্যানেল আইয়ের এডিটর, নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সাইফুল আমিনসহ অন্যরা প্রাণবন্ত ওই অালোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রকৌশলী থেকে সাংবাদিক এবং সাংবাদিক থেকে শিশু অধিকার কর্মী হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সত্যার্থী। সেসময় পাশে বসে থাকা স্ত্রী সুমেধার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে তাদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাতসহ প্রেম, বিয়ে এবং সংসার জীবনের গল্পও শোনান তিনি।
সত্যার্থী জানান, পরে শ্বশুর হওয়া সম্পাদকের পত্রিকায় তিনি ডাকে পাঠিয়ে সিরিয়াস বিষয়ে লেখালেখি করতেন। প্রথম যেদিন তিনি ওই পত্রিকা অফিসে গিয়ে তার পরিচয় দেন, তখন কেউ বিশ্বাস করতে চান নি। কারণ তাদের ধারণা ছিলো কৈলাস সত্যার্থী নামের লেখকটির বয়স ৬০/৭০ হবে। অথচ তারা দেখতে পান, সামনে দাঁড়িয়ে ২২ বছরের এক ‘বালক’।
এ কারণে সুমেধা, পরে স্ত্রী হওয়া ‘বালিকাটি’ তাকে ‘বের হয়ে যাও’ পর্যন্ত বলেছিলেন। চ্যানেল আই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় সত্যার্থী হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে জানান, তিনি অবশ্য তার হবু স্ত্রী সুমেধা’র ছবি দেখেই তার বাবার পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলেন কারণ ‘বাবার পত্রিকায় লেখালেখি করা মেয়েটি ওয়াজ অ্যা বিউটিফুল গার্ল।’
ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গিয়ে কৈলাস বলেন, বাংলাদেশ নারী শিক্ষায় যে উন্নতি করেছে তাতে আমি গর্বিত। তবে স্কুলে ভর্তির পর যেনো তারা ঝরে না যায় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
এদেশে স্কুলগুলোতে প্রাথমিকে ২১ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৪৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপের পরামর্শ দেন।
সেসময় মানসম্মত শিক্ষার ও স্কুলের শিক্ষকদের আরও বেশি বন্ধুবৎসল হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এ নোবেল জয়ী।
শিশু শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের আড়াই কোটি শিশু এখনও স্কুলে যায় না। মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল অর্জন করতে হলে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিশুদের একটি বড় অংশ এখনও স্কুলে যায় না। মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। এ ব্যাপারে এখনই বিশ্ব নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন কৈলাস সত্যার্থী।
চ্যানেল আইয়ের কার্যক্রমেও অভিভূত তিনি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সচেতনতা-খাদ্য নিরাপত্তা-প্রকৃতি নিয়ে চ্যানেলটি যে কাজ করছে তা প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন কৈলাস।
তিনি বলেন, শিক্ষা বাজেট-কৃষি বাজেটের মতো কর্মসূচি আমাকে অভিভূত করেছে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও কৃষকরা তাদের দাবি তুলে ধরতে পারছেন।