চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ অভিনীত ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর)। তার বিপরীতে আছেন পরীমনি। চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় করোনার মধ্যেই বড় বাজেটে এ ছবিটি দেশের ২৫ সিনেমা হলে মুক্তির আগে ‘দর্শক হলে আসবে কিনা’ এ নিয়ে ছিল যথেষ্ট সংশয়! তবে মুক্তির পর ভিন্ন চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুধু ঢাকা নয় গাজীপুর, যশোর, রংপুর শহরের হলগুলো থেকেও দর্শকদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে শুটিংয়ে ছিলেন সিয়াম। সেখানে তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় বিগ বাজেটের ছবি ‘দামাল’ এর শুটিং করছেন। সেখান থেকে মুঠোফোনে ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নাটক থেকে সিনেমা এসে আলোচিত হওয়া এ নায়ক…
পোড়ামন ২, দামাল, ফাগুন হাওয়ারের পর ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পেল। সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
গাজীপুরের বর্ষা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সেনা অডিটোরিয়ামের সিনেমা হলে প্রথমদিন দর্শক উপস্থিতি ও সেল খুব ভালো হয়েছে। তবে ম্যাক্সিমাম সাড়া মিলছে অনলাইনের মাধ্যমে। ফোন, টেক্সটে প্রচুর মানুষ ছবি দেখে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। শুটিংয়ে থেকে সব কল ধরতেও পারছি না। বেসিক্যালি ‘বিশ্বসুন্দরী’ সব ধরনের দর্শকদের জন্য বানানো। তাদের ভালো লাগাটাই আসল। যথেষ্ট পজিটিভ রিভিউ পাচ্ছি। অবশ্যই সব ছবির ফলস থাকে। কিন্তু ফলসের চেয়েও বেশি পজিটিভ রিভিউ আসছে। তবে এই সময়েও যে মানুষ সিনেমা হলে আসছে এর চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!
মুক্তির পর সিনেমা হলে ‘দর্শক আসবে তো’ এমন কোনো সংশয় ছিল?
না না আমার কোনো সংশয় ছিল না। দর্শক সিনেমা হলে না গেলে আমি মাইন্ড করতাম না। কারণ, আমি তাদের অবস্থাও বুঝি। এও বুঝি, আমার বাবা-মাকে নিয়ে এই সময়ে বাইরে বের হলে আমার কেমন লাগে! এখন সিনেমা হলে আসতেই হবে এই দাবি কোনোভাবেই করতে পারিনা। আমার মেইন টার্গেট ছিল প্রথম শোতে বা প্রথম দিনে কারা সিনেমা হলে আসে! তারা তো জানে না যে সিনেমা কেমন হলো। প্রত্যাশা শূন্য নিয়েই আসে। তাদের থেকেই মানুষ জানতে পারে সিনেমা কেমন হয়েছে। প্রথমদিনেই মানুষ যে এক্সাইটেড হয়ে এসেছে সেজন্য আমি খুব হ্যাপী। কারণ তারা বিশ্বাস রেখেই এসেছে।
‘বিশ্বসুন্দরী’র কোন দিকগুলো বিবেচনায় এনে কাজ করতে সম্মতি দিয়েছিলেন?
প্রথম দেখেছিলাম গল্প। কাদের জন্য এই গল্প, গল্পটা কতখানি ভালো লাগার মতো, এ গল্প দিয়ে কোন ধরনের দর্শকদের কাছে আমি পৌঁছুতে পারবো- এসব বেসিক জিনিসগুলো মাথায় কাজ করেছিল। আমরা নারীদের প্রধান্য দিয়ে সচরাচর ছবি বানাই না। তাদের কথা ভেবে এবং নারী নির্মাতার মাধ্যমেও এ ছবি নির্মিত হবে এই জিনিসগুলো ভেবেই ‘বিশ্বসুন্দরী’ করতে সম্মতি দিয়েছিলাম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে শেষে সবটুকু ঠিকঠাক পেয়েছেন?
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করি। কিন্তু কাজে যাওয়ার পর বাস্তবতা দেখা যায় ভিন্ন। তখন আর কাউকে দোষ দিতে ইচ্ছে করে না। কারণ, সবাই তাদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ‘সেরা কাজ করছেন নাকি করছেন না!’- এরচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সেরা কাজ দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা! কিছু তো অপূরণীয় জিনিস থেকে যায়। পরের কাজের জন্য এটা বুঝে নেয়া সম্ভব হয় যে, এবার হয়নি হয়তো পরের বার হবে।
‘বিশ্বসুন্দরী’র মাধ্যমে প্রথমবার আলমগীর এবং দ্বিতীয়বার চম্পার সঙ্গে কাজ করেছেন। আলমগীর-চম্পা-সিয়াম এই দুই প্রজন্মের শিল্পীর রসায়নটা কেমন হয়েছে?
হ্যাঁ, এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া মনে হয়। চম্পা ম্যাডামের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতে পেরেছি। ব্যাক টু ব্যাক তার সঙ্গে দুটি কাজ করতে পেরেছি। শান ছবিতেও তিনি আছেন। অন্য একটি পজিটিভ দিক হচ্ছে ‘বিশ্বসুন্দরী’র মাধ্যমে প্রথমবার আলমগীর স্যারের কাছাকাছি যেতে পেরেছি। তিনি খুবই হ্যান্ডসাম একজন মানুষ। তিনি তার অনেক অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। কিছু সাজেশনস দিয়েছেন। সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। এই অভিজ্ঞতাগুলো ভোলার মতো নয়।
‘বিশ্বসুন্দরী’র চিত্রগ্রাহক হলেন খায়ের খন্দকার। তিনিই মনে হয় আপনাকে নাটক থেকে সিনেমায় নিয়ে আসায় ভূমিকা রেখেছেন?
অবশ্যই তাই। তখন ঈদের জন্য আমি বান্দরবনের থানচিতে মাহফুজ আহমেদ ভাইয়ের পরিচালনায় একটি নাটকের শুটিং করছিলাম। খায়ের ভাই ছিলেন ওটার সিনেমাটোগ্রাফার। শুটিংকালীন তিনি বলছিলেন, রায়হান রাফী নামে একজন নতুন ছেলের কাছে সুন্দর একটি গল্প রয়েছে। তোমাকে গল্পটা শোনাতে চায়। আমি প্রথমে নাটক মনে করে বলেছিলাম, অনেকগুলো কাজ তো ঈদে যাবে। থাক, আর না করি। তখন খায়ের ভাই বলেছিলেন- এটা নাটকের গল্প না। সিনেমার গল্প শোনাবে। আগে থেকে শতভাগ শিওর ছিলাম, আমার ফিল্ম করা হবে না। নিজের কোনো প্রস্তুতি ছিল না আর পরিবার থেকেও অনুমতি পাবো না। কিন্তু রায়হান রাফী এবং প্রযোজক আবদুল আজিজ ভাই তারা কনফিডেন্ট ছিলেন। তারাই আমার বাবা মায়ের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তবে খায়ের ভাই না থাকলে এই যোগসূত্রটা হয়তো হতো না।
‘বিশ্বসুন্দরী’র শুটিংকালীন নাকি আপনার স্ত্রী অবন্তীর অপারেশন ছিল। তাও শুটিং ছেড়ে আসেননি। উনি নিশ্চয়ই রাগ করেছিলেন?
নাহ তার মধ্যে রাগ বা অভিমান সেভাবে দেখেনি। বরং ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তির প্রথমে দিনে প্রথম শো সে সিনেমা হলে গিয়ে দেখে এসেছে। অবন্তী আমার পেশাকে বোঝে এবং শ্রদ্ধা করে। কিন্তু অপারেশনের সময় স্বামী না থাকলে একজন স্ত্রী অভিমান করবে এটাই স্বাভাবিক। অবন্তীর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমি একটু বেশি অভিমান করতাম। তবে আমার সারাজীবন খারাপ লাগবে যে, অবন্তীর গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে আমি পাশে থাকতে পারিনি।
বর্তমানে ‘দামাল’-এর কাজ সৈয়দপুরে। শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন?
দারুণ সুন্দর অভিজ্ঞতা। অনেকদিন পর দেখলাম প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্য একটাই, ভালো সিনেমা বানানো। ফরিদুর রেজা সাগর ভাই, ইবনে হাসান খান ভাই, আবু শাহেদ ইমন ভাই থেকে পরিচালক রায়হান রাফী ও তার টেকনিক্যাল টিমসহ শিল্পী নির্বাচন সবকিছুই টু দ্য পয়েন্ট। আমরা ঠিকঠাক ভাবে এভাবেই শেষ করতে চাই। জানি না কতো ভালো হবে!