বিশ্বব্যাপী মৃত্যদণ্ডকে বিতর্কিত বলেছেন লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মাজহার। ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, মানবাধিকারীদের কারণে নয়, মৃত্যুদণ্ড আদৌ সর্বোচ্চ শাস্তি কিনা সে বিষয়েও ফোজদারি অপরাধশাস্ত্রে বিতর্ক বহুদিনের।
ফরহাদ মাজহারের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো:
“উইকিপিডিয়ায় দেখলাম জুডিশিয়াল মার্ডার কথাটার মানে হচ্ছে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার।
বলা হয় ‘জুডিসিয়াল মার্ডার’ কথাটা এসেছে ১৭৮২ সালে জর্মন justizmord –এর ইংরেজি অনুবাদ হিসাবে। বাংলায় এর অনুবাদ হতে পারে ‘আইন বা বিচারের ভণিতায় হত্যা’। বৈচারিক প্রহসন। এমন ভাবে আইন করা যা কোন স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া বা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে না, আইনটি তৈরি ও বিচারের ব্যবস্থাটাই করা হয় অন্যায় ভাবে কাঊকে ফাঁসি দেবার উদ্দেশ্যে।
অগাস্ট লুডভিগ ফন স্লোজার (August Ludwig von Schlözer) কথাটা ব্যবহার করেছিলেন এনা গোল্ডির Anna Göldi মৃত্যদণ্ড প্রসঙ্গে। ইউরোপে এই সেদিনও ‘ডাইনি’ অভিযোগে মেয়েদের পুড়িয়ে মারা হোত। অভিযোগ যাই থাকুক তাকে একটি ‘দানব’ জাতীয় চরিত্রে পরিণত করার সঙ্গে জুডিশিয়াল মার্ডারের ধারনার একটা যোগ আছে। দানবীয় শক্তি হিসাবে কাউকে প্রতিষ্ঠিত করা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা প্রতিষ্ঠিত করা গেলেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিচারের চেয়েও ন্যায়বিচারের কোন নিয়ম বা বিধানের তোয়াক্কা না করে এমন আইন করা সম্ভব যাতে অতিপ্রাকৃত দানবীয় অপশক্তি হিসাবে অভিযুক্তকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয়।
জুডিশিয়াল মার্ডার বা ‘আইন বা বিচারের ভণিতায় হত্যা’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। একটি সমাজের সাংস্কৃতিক ও মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে যার সংযোগ ঘনিষ্ঠ। এটা একটি লক্ষণ যা দিয়ে একটি সমাজকে আমরা বুঝতে পারি। সুইজারল্যাণ্ডের এনা গোল্ডি ইউরোপের ‘শেষ ডাইনী’ শিরশ্ছেদ করে যার ১৭৮২ সালে যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
ডাইনি মারার সেই ইউরোপও আর নাই। আর বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ডও এখন তুমুল বিতর্কিত। শুধু মানবাধিকারীদের কারণে নয়, মৃত্যুদণ্ড আদৌ সর্বোচ্চ শাস্তি কিনা সে বিষয়েও ফোজদারি অপরাধশাস্ত্রে বিতর্ক বহুদিনের।
খবরগুলো আমাদের হাতের কাছে থাকলেও আমরা জানিনা বা জানার চেষ্টা করি না।”