করোনাকালে একবছরের বেশিসময় ধরে বন্ধ দেশের শিক্ষাঙ্গন। শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবাই ঘর বন্দী হয়ে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কোনোরকমে টিকিয়ে রেখেছে শিক্ষাজীবন। কয়েকদফা খোলার প্রস্তুতি নিলেও করোনার ওঠানামায় তা আর হয়ে উঠেনি। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণাও এসেছে।
চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে মোট দেড় কোটি। প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে তিনমাসে আসবে এই ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন প্রথমেই দেয়া হবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীসহ সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নিশ্চিতের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
চীনের ভ্যাকসিন গত ৭ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদনের আগে এই ভ্যাকসিন ৪০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছিল। কোনো বড় ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি সাধারণ জ্বর, অ্যালার্জি টাইপ লক্ষণ ছাড়া। সিনোফার্মের ভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৮০% এর কাছাকাছি কার্যকর বলেও তাদের পরীক্ষায় উঠে এসেছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও স্বাস্থ্যগত নানা নিরীক্ষার পরেই মানবদেহে প্রয়োগের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন এসেছে।
ভারতের কাছ থেকে প্রথম দফায় ভ্যাকসিন পেলেও চুক্তি অনুসারে কাঙ্খিত পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ। দ্রুতই আসে সাফল্য, চীন ও রাশিয়া দুদেশই রাজি ভ্যাকসিন দিতে। এছাড়া কিছু ফাইজারের ভ্যাকসিনও আসছে দেশে কোভ্যাক্স কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। সবমিলিয়ে বেশ ইতিবাচক অবস্থায় দেশের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম।
সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার মারাত্মক সংক্রমণের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম নানা কায়দায় চালু আছে, তারমধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ। বাংলাদেশও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। যদিও আগেই শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ভ্যাকসিনই একমাত্র কার্যকর পদক্ষেপ। ভ্যাকসিন প্রাপ্তি ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত আবারও প্রাণ ফিরে পাবে আর শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে পারবে, এই আমাদের প্রত্যাশা।