বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তার কথা উঠলেই এখন সবার মনে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টি। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অসতর্কতা, অথবা ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংক ও ক্যাসিনোর কারসাজিকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
যাকেই দোষ দেই না কেনো, মূল কথা হলো অত্যন্ত দক্ষ কয়েকজন হ্যাকার জটিল কিছু ম্যালওয়্যার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কম্পিউটারগুলোকেই আক্রান্ত করেছে। এর ফলে জালিয়াতির অর্ডারগুলোকেও সুইফটের বৈধ আর্থিক লেনদেনের অর্ডার মনে করে প্রসেস হয়ে টাকা চলে যায় চোরদের হাতে।
ম্যালওয়্যার জাতীয় সফটওয়্যারগুলো এতটাই উন্নতমানের ছিলো যে, ব্যাংকের কেউ টেরই পাননি তাদের চোখের সামনে এত বড় চুরির ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির মতো এত বড় ঘটনা থেকে আমরা সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার হামলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কী শিক্ষা পাই?
বাংলাদেশ ব্যাংকে হওয়া সাইবার হামলাটি আরও ভয়াবহ হতে পারত। হ্যাকাররা মোট ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার সরানোর পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বেশিরভাগ লেনদেনের অর্ডার আটকে দেয়া হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা ছিলো না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এর আগে সুইফট কিছুটা গোপনেই তার গ্রাহকদের জানিয়েছিলো, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুইফটের সঙ্গে সংযুক্ত অফিস, কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক থেকে অবৈধ উপায়ে বার্তা পাঠিয়ে সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুধু ব্যাংক নয় গত জানুয়ারিতেও অস্ট্রেলীয় একটি মহাকাশ বিষয়ক সংস্থার ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার হ্যাকারদের হাতে চলে যায়। একইভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, পুলিশ বিভাগ, এমনকি কিছু পৌর সরকারও সময়ে সময়ে অর্থের বিনিময়ে চুরি যাওয়া তথ্য ফেরত পেতে হ্যাকারদের হাতে জিম্মি হয়েছে। সেই ২০০৭ সালে এস্তোনিয়া বিশ্বের প্রথম দেশব্যাপী সাইবার হামলার শিকার হয়।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক জালিয়াতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো পৃথিবী জুড়ে অনলাইনে আর্থিক লেনদেনসহ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলোকে আমরা যতটা নিরাপদ মনে করি, সেগুলো আসলে ততটা নিরাপদ নয়।
একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোটি কোটি ডলার লুট এখন হলিউড ফিল্মের কাহিনী থেকে বেরিয়ে বাস্তবে রূপ নিয়েছে, আর এই কাজ করতে মাত্র কয়েকজন দক্ষ হ্যাকারই যথেষ্ট যারা যখন-তখন তথ্য লুকিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়ার বুদ্ধি রাখে।
আন্তঃদেশীয় অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা যতদিন থাকবে, হ্যাকার ও জালিয়াতরা সেখানে ফুঁটো খুঁজতেই থাকবে। এই ভয়ে লেনদেন বন্ধ করে দিলেও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এটাই আমাদের সাইবার নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ।