আজ বাইশে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম মহাপ্রয়াণ দিবস।
গান, কবিতা, গল্প, নাটকের অমর সব সৃষ্টি দিয়ে বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গণে বাংলাকে অধিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছেন তিনি।
বাঙালির সাহিত্য জগতে বহুমাত্রায় সমৃদ্ধ একজন রবীন্দ্রনাথ আলোকবর্তী হয়ে থাকবেন আরো হাজার বছর।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনন্য সাধক পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস বলেই বাইশে শ্রাবণ বাঙালি জীবনধারার সঙ্গে একাত্ম।
১৮৬১ তে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জন্ম নেয়া রবীন্দ্রনাথ আট বছর বয়সে কবিতা রচনা করে বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন নতুন বারতার। ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রথম কবিতা যখন প্রকাশিত হয় তখন রবীন্দ্রনাথ ১৬ বছরের বালক। চিত্তকর্ষণ করে শিল্পের যেখানে স্পর্শ করেছেন যাদুর কাঠি সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিস্ময়কর এক শিল্পপ্রাণ।
কবি ঔপন্যাসিক গল্পকার গীতিকার সুরকার নাট্যকার নির্দেশক চিত্রকর কোন উপাধিতে না ভূষিত করা যায় রবি ঠাকুরকে। প্রজা অন্ত:প্রাণ রবীন্দ্রনাথ সমাজের উঁচু আসনে বসেও ঐন্দ্রজালিক মায়ায় নতুন নতুন সৃষ্টিতে নিমগ্ন ছিলেন আমৃত্যু। আর বাঙালি আকণ্ঠ নিমজ্জিত তাঁর শিল্পরসের অমৃত সুধায়।
প্রেম প্রকৃতি আর জীবনের প্রতি বাঙালির বোধকে রবীন্দ্রনাথ ছুঁয়ে দিয়েছেন আধুনিকতার পরশে। পৃথিবীতে বিরল সৌভাগ্যের তিনিই একমাত্র কবি যার রচিত গান দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি বর্জন করেছেন অবলীলায়।
ঋজু দেহের অধিকার রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন সুস্বাস্থ্য ভোগ করলেও অর্শ্ব রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী থাকেন জীবনের শেষ চারটি বছর। ১৯৩৭ এ জ্ঞান হারিয়ে কোমায় চলে গেলেও মানসিক দৃঢ়তায় ফিরে আসেন চেতনালোকে।
পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বার অসুস্থ হয়ে পড়লে ফিরে আসা হয়নি আর জীবনরথে। জন্মের আট দশক পেরিয়ে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণে এসে ইতি ঘটে মধুময় জীবনের।
তার নিজ হাতে গড়া রবীন্দ্রভারতী ও শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয় তারই মুক্তা ঝরানো বিপুল কর্মকাণ্ডের দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে, প্রতিটি বাঙালির তরে।