চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিশাল বাজেটের ‘খোঁচা তত্ত্ব’!

সকল কৃতি, মেধাবী,সফল এবং যোগ্য ধরণের ব্যক্তিবর্গ তাঁদের জিন্দেগীতে বিশেষ কিছু ছাপ, স্বাক্ষর রেখে যেতে চান। মোঘল সম্রাট শাজাহান তার কত নম্বর স্ত্রীর কত নম্বর সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুমুখে পতিত হবার ট্র্যাজেডিকে ‘ভালোবাসার বিশ্বমিনারে’ পরিণত করতে কি না করেছেন! কত সহস্র কারিগর ও শ্রমিককে কত যুগ পণবন্দী রেখে কত সহস্র মানবিক ট্র্যাজেডি ঘটিয়ে তিনি ব্যক্তিগত ট্যাজেডি জনিত অনুভূতির ‘তাজমহল’ গড়ে তুলেছেন।

আসলে সম্রাটজী পৃথিবীর কাছে একটা ছাপ রেখে যেতে চেয়েছেন।পরে তার তৃতীয় সন্তান ক্ষমতার দানবিক দ্বন্দ্বে তাকে একটি দূর্গে যেখানে বন্দী করে রেখেছিলেন, সে দূর্গের জানালা দিয়ে ঐ দূরে যমুনার ওপারে দেখা যেতো সেই ‘তাজমহল’।

মমতাজ কেন্দ্রিক মমতা-ভালোবাসা-ট্র্যাজেডির চেয়ে ক্ষমতাদ্বন্দ্বের ট্র্যাজেডি যে কী অমানবিক, নিষ্ঠুর, ক্রুর, কুটিল- জীবনের শেষ বিশটি বছর সম্রাট শাজাহান (সমগ্র দুনিয়ার বাদশা) তা হাড়ে হাড়ে, কোমরে-হাঁটুতে, ঘাড়ে-গর্দানে-গিঁটে গিঁটে তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। অমন তাজমহলে গিয়ে পৃথিবীর এক নম্বর মহাতারকাও জীবনজুটি নিয়ে ছবি তুলে সার্থক করেন তাদের স্ব স্ব ভালোবাসাময় অনুভূতি।

দুনিয়ার পরম আশ্চর্য নির্মাণ-স্থাপত্য এবং আবেগ অনুভূতির এক নম্বর ছাপ কিংবা স্বাক্ষর রেখে গেছেন সম্রাটজী।১৯৭১ সনের ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বিমান আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ভারত তাদের এই পুরাকীর্তি এবং আয়-উপার্জনের উৎসটিকে পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল যেন আকাশ থেকে না বোঝা যায়। তখনতো আর ‘ড্রোন’ ছিলোনা! ছাপ আর স্বাক্ষরের কথা দিয়ে শুরু আজকের বয়ানটি। আসলে উদ্দিষ্ট বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বয়স্ক-তরুণ’ অর্থমন্ত্রী, যিনি ১৬ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্যাকাশে মেঘ-বৃষ্টি-ঝড়-রোদ্দুরের দায়ভার বহন করেন। বোধ করি বর্তমানে বাংলাদেশে তিনি এক নম্বর আলোচিত-বিতর্কিত ব্যক্তি। দারুণ রকমের আশাবাদী এবং দুর্দান্ত সাহসী সিদ্ধান্ত প্রণেতা মানুষ তিনি।

বিগত সাত বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার একই স্থানে ধরে রাখার মৌলিক কৃতিত্বে উদ্ভাসিত তিনি। সাহস করে তাই বাজেটের আকার বিশাল থেকে বিশালতর করে তুলতে তিনি আকুল এবং ব্যাকুল।এমনি পটভূমিতে তিনি মন্ত্রণালয়ে এক ত্বরিত কর্মতৎপর বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যারা শুধু বিশাল বাজেটের রসদ তথা ভ্যাট-ট্যাক্সের নব নব উৎসের সন্ধান দিয়ে চমৎকৃত করে দিচ্ছিলেন ঐ মন্ত্রণালয়ের দরবারটি। তেমনি একটি উৎস খুঁজে পাওয়া গেলো ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়’। ওদের ঘাড়ে সাড়ে সাত শতকরা হারে চাপিয়ে দাও ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স, মূল্য সংযোজিত কর, ভ্যাট তথা মূসক।

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, বিশাল বাজেটের স্বার্থে এখানে ওখানে খোঁচা মেরেইতো সংস্থান করে নিতে হয়। তিনি শুধু সেই খোঁচাটুকুই মেরেছেন নির্দোষ এবং সৎ উদ্দেশ্যে।কিন্তু হায়রে। বিধি যে ইতোমধ্যে ‘বামপন্থী’ বনে গেছেন। কে জানতো, এমনি খোঁচা থেকে এমন ইনফেকশন হয়ে যাবে যা অচিরেই টিটেনাস কিংবা গ্যাংগ্রিনে পরিণত হবার হুমকি সৃষ্টি করে দেবে!

প্রায় চুরাশি বছরের এই প্রবীণ ব্যক্তি, এখন কাজে বেরোবার বেশ আগে থেকে যার হাত-পা বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, কী অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাত দিন, কিছুতেই কিছু নয়। তার নামের একটি অংশ ব্যবহার করে অধুনা সোশাল মিডিয়ায় কটু-কাটব্যের যে দূষিত ঝর্ণাধারা দেখলাম এ ক’টা দিন, তাতে মনে হলো, সুযোগ থাকলে কাছে গিয়ে বলি, ওহে ৪৭ বছর বয়সে আকষর্ণীয় ‘আমলা’ চাকুরি ছেড়ে দেয়া হে একাত্তরের দীপ্র কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা, দয়া করে নিজে থেকেই ছেড়ে দিন ঐ মন্ত্রীসভার সবচেয়ে সংবেদনশীল দপ্তরটি।

পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নন, আপনিও।যতটুকু বুঝি এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নেবেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে ‘পরিহার্য’ করে তুলতে। অর্থমন্ত্রীর ‘খোঁচাতত্ত্ব’ বেমক্কা জায়গায় প্রয়োগের জন্য আজ প্রধানমন্ত্রীকে ‘পশ্চাদপসরণের’ দ্বিতীয় নজির স্থাপন করতে হলো। প্রথমটি ছিল একদল তোষামোদ-তোয়াজকারী-কূটলোকের মন্ত্রণায় ‘আড়িয়াল বিল’কে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়ার ফলে সৃষ্ট গণবিদ্রোহের কাছে নতিস্বীকারের সময়ে।তা দেশে যে ‘একদলীয় স্বৈরাচারী’ ব্যবস্থার মধ্যেও জনমতের কাছে মাথা নত করার ‘গণতান্ত্রিক উদাহরণ’ সৃষ্টি হলো, তা যে সামগ্রিক বিচারে একটি বড় অগ্রগতি, এটা তেমন করে ‘গণতন্ত্রপ্রেমী’দের কাউকে বলতে শুনছি না।

তবে সোশাল মিডিয়ায় এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খাস-ছাত্র সংগ্রামের ইনস্ট্যান্ট সাফল্যে নানারূপ তত্ত্বের মহা ইনস্ট্যান্ট উদ্ভবে রীতিমতো কিংবা রীতি বহির্ভূতভাবেই হোক- ভড়কে গেছিরে ভাই! ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’- প্রবচনটি একটু ভদ্রভাবে ঘুরিয়ে নিলে ‘প্রয়োগের পর তত্ত্ব’ সৃষ্টির এই সোশাল মিডিয়া উৎসবে কেমন বিদিশা হয়ে গেছি। একজন আঁকিয়ে শিল্পী বললেন খিচুড়ি-তত্ত্বের কথা। অর্থাৎ সবকিছু চলছে প্রাইভেট স্টাইলে, বিশ্বায়িত পুঁজি, জীবন চালাচ্ছে চলছে পুঁজিবাদের ইশারা আর হুকুমে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনও।

তবে দাবীটি একেবারে ‘সমাজতান্ত্রিক’। শিক্ষা কোন পণ্য নয়। অতএব নো ভ্যাট। শিল্পীজনাবের ভাষায় এটি ‘খিচুড়ি’র মতোই একটি ব্যাপার। কেউ কেউ বললেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাকের মতো। ওরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোকিল মালিকগোষ্ঠীর স্বার্থে লড়াই করে সেই মালিকদের ঘাড় থেকে সাড়ে সাত কেজি ওজনের ভার সরিয়ে দিলো। এই আন্দোলনের মাঝে মাঝ বয়সী একজন একালের চলচ্চিত্র পরিচালকও ঝাঁপিয়ে পড়লেন নিজের ‘ভাষাতত্ত্ব’ লড়াইয়ের অস্ত্র নিয়ে। ভায়া অনেককাল ধরেই ঘরে বাইরে আমরা যেভাবে কথা বলি, হুবহু তা-ই নাটক সিনেমার ভাষাতে নিয়ে আসার তত্ত্বীয় এবং প্রায়োগিক সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

এবারের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জাগরণে ‘ইহা পাবি- উহা পাবি- ভ্যাট পাবিনা’ ধরনের একজন নারীবাহিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে সোশাল মিডিয়া ভুবনে তর্ক-বিতর্কের ধূলোঝড় বয়ে গেছে। এই সমালোচনার জবাবে সম্মানিত চলচ্চিত্র পরিচালক মহোদয়ও ক্ষিপ্র ও দীপ্র বচন গড়লেন, যার মর্ম নিম্নরূপ: এটি একালের ভাষা। একালের ছাত্র তরুণদের ভাষা। এটি আক্ষরিকভাবে যারা নেয়, তারা শিল্প বোঝে না, সাহিত্য বোঝে না, নান্দনিক রসের ভান্ডার তাদের ঠনঠনা। এটি পূর্বতন জাতীয় ধরণের আন্দোলনের ‘চামড়া তুলে নেবো আমরা’ ইত্যাদি স্লোগানের চেয়েও অনেক শালীন। জানিনা ‘সৃজনশীল’ ভায়ার এমনি বিশ্লেষণধারা লড়াইয়ে বিজয়ী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজ কতটুকু প্রভাবিত।

এক্ষেত্রে প্রবীণ এই অধমের নিবেদন: ঘরে বাইরে-একান্তে আমরা যেসব কথা বলি, তার সবই কি নাটক-সিনেমা-উপন্যাসের সংলাপে নিয়ে আসা যায়? ওটা যে ভায়া আপনি কেন, কেউ পারবে না! তাহলে তো সীমারেখা টানতেই হবে। সেটা কোথায় তা যে যুগ-যুগান্তর, কাল-কালান্তরের জনমানুষেরাই ঠিক করে নেবে! এক্ষেত্রে কেন, সবক্ষেত্রে একটি বাক্য এই লিখিয়ের ভারি পছন্দের: ‘পুরানো যা তার সবই মন্দ নয় / নতুনের সবই ভালো তা-ও নয়।’কেউ কেউ বলছেন, যাক ভ্যাট-ভ্যাট ফ্যাট-ফ্যাট বন্ধ হলো! এটা কারো জয় কিংবা পরাজয় নয়। এটা জাস্ট ওয়ান শট গেম। কানসাট, শনির আঁখড়া, ফুলবাড়ির মতোই সেটা দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে এমনটা কিছু ঘটেনি, ঘটবেও না। এমন তত্ত্বীয় উপসংহার মনে হয়েছে ‘সুইপিং’- বিপরীতে এমন মন্তব্যও দেখেছি ফেসবুকে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মনে করা হতো ‘ফার্মের মোরগ-মুরগী’। এবারের আন্দোলনে ওরা প্রমাণ করে দিলো ওরা ঝড়-বৃষ্টি-রোদের দেশী ভার্সনই। ওরা ভিন জগতের কেউ নন। আন্দোলনে যে স্বাতন্ত্র্য ওরা রেখেছে, তা অনবদ্য। বিতর্কিত দু’একটি ছাড়া ওদের দাবী পেশের অভিনবত্ব অভিনন্দনযোগ্য। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোজনের পর এবারই ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী’ একটি নবসত্ত্বা নিয়ে নবগ্রীবার বিভঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়ালো।

অতএব খবর আছে। এমনি বিশ্লেষণে অধমের বিনীত নিবেদন:আমাদের ভ্যাট নীতি-প্রণেতারা আসলে ঠিক এ জায়গাটি অনুধাবনেই মস্ত ভুল করেছেন। ‘ফার্মের লাইভস্টক’ প্রাণী গোছের অতি বড় লোকের সন্তানেরা শুরুর দিকে দেশী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেও এখন সে পর্ব বিগতপ্রায়। এখন ও-এ লেভেলের পরই পৃথিবী জুড়ে অর্থনেতিক উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে হা-করা গহরে ওরা পতিত হয় বিপুল অর্থভান্ডার নিয়ে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ঠাঁই দিতে পারছেনা বলেই গজিয়ে উঠছে, গড়ে উঠছে ব্যাঙের আমব্রেলার মতো এখানে সেখানে ওখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নামের অনেকটা ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী বেচারারা একটু খানি জায়গাও পায়না নিঃশ্বাস ফেলতে। নিম্নবিত্ত-স্বল্পবিত্ত-মধ্যবিত্ত ধাঁচের পরিবারগুলো হাড্ডি পানি করা উপার্জনের সর্বশেষটুকু ব্যয় করে সন্তানদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাঁই না পাওয়ার কারণে প্রাইভেট ঘুপচি মার্কা বিশ্ববিদ্যালয়েও পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। এদের সংখ্যা বিপুল। অর্থনীতির এই বাস্তব জরিপ অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছাবার কেউ নেই। অতএব খোঁচাটি আসলে পড়েছে খোদ আওয়ামী এবং বিএনপি ভোটার সমাজে।

সমাজকে যদি ফিফটি-ফিফটি ধরি, তবে অর্থমন্ত্রী নিজের দলীয় সমাজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বুকেই ভ্যাট-সিদ্ধান্তের ছুরি মেরেছেন পরিস্থিতিতে এমনটাই প্রতিভাত হয়েছে। এরই ভেতর ফেসবুকে একটি শ্রেণীতত্ত্বও পেয়েছি। ‘বুর্জোয়া সরকার’ পোশাক শ্রমিক আর তেল গ্যাস আন্দোলনকে যখন তখন পিটিয়ে বেড়ায়। আর ভ্যাট সংগ্রামের কাছে মাথা নত করে তিনদিনেই আসলে একই শ্রেণীতো! কথাটির ভেতর সত্যতা খুঁজে পাই বেশ। তবে এবার জমবে আসল খেলা। দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সেবার মনোভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে কী? না, হয়নি।

এ খাতে মুফতে মুনাফা, অতএব ঝাঁপিয়ে পড়ো। পঞ্চাশ কোটি টাকার স্থায়ী জমি কিনে দু’শ পঞ্চাশ কোটি টাকা দেখাও। বোর্ড মালিকেরা মিলে দু’শ কোটি টাকা হাপিশ করো। মাসে দু’টো বোর্ড সভা করে লাখ রুপিয়া কামাও। এভাবে, ওভাবে, সেভাবে কামাও। বড় দলগুলোকে চাঁদা দাও, ওরা বেশি নড়বে না, হাম হুম করবে, তেমন কিছু ব্যবস্থা নেবে না। টিউশন ফি বাড়াও বছর বছর।

এদিকে নবজাগ্রত প্রাইভেট ছাত্রসমাজ সৃজনশীল ছাত্র আন্দোলনে এখন বিজয়ীর গৌরবে। মালিকদের অবাধ মুনাফাবৃত্তির ওপর এখন নব প্রতিবাদ জেগে উঠবেই ন্যূনতম এটুকু আশা করা যায়। লুটেরা পুঁজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের যারা পথ খুঁজি, তারা যদি কিঞ্চিৎ আশাবাদী হই, ভাই, দয়া করে ওয়ান শট গেম বলে নিরাশ করবেন না। নিজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী সংগ্রামের রূপরেখা দেখছিলাম। একবারও মনে হয়নি সরকারবিরোধীদের উস্কানীতেই ওদের চোখ মুখে বিদ্রোহের অবয়ব সৃষ্ট হয়েছে। মনে হয়নি ওরা ‘ফার্মের …’।

চৌষট্টি থেকে পঁচাত্তর ছাত্র আন্দোলনে শামিল ছিলাম বিংশ শতাব্দীতে। ভ্যাট সংগ্রামীদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে প্রবীণ রক্তে নবীন স্পন্দন অনুভব করেছি। বছর কয়েক আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক আন্দোলনের চেহারা দেখেছি কাছে থেকে। এরা একালের। এরা অন্যরকম। কিন্তু বিদ্রোহের মৌলিক রং এক। ওদের সাহস গাড়ীভাঙ্গার লঘুত্বে পরিণত হয়নি। ওদের দৃঢ়তার সঙ্গে ধৈর্যের যে মহিমা দেখেছি, তা আশান্বিত করেছে। এমন মোহন দৃশ্য দেখাবার উৎস যে অর্থমন্ত্রী, অন্ততঃ এ কারণে তাঁর কাছে সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা। অর্থমন্ত্রীর বয়স, আমলা বৈশিষ্ট্য, আলটপকা মন্তব্য তাঁর ইতিবাচক অর্জনকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে।

বিশাল শিক্ষকসমাজকে ‘তথ্য’ শব্দটির বদলে ‘জ্ঞান’ বলে ফেলে আগুন জ্বেলে দিয়েছেন তিনি। সরকারের ভেতরের বাইরের লুটেরা মহাজনেরা একযোগে খুশিতে বাগবাগ। শকুনেরা অপেক্ষমান। সাবেক বিশ্ব ব্যাংক প্রধানকে ’হতভাগা’ বলার হিম্মতি অর্থমন্ত্রী আজ বেমক্কা ’খোঁচাতত্ত্ব’ প্রয়োগে নিজের ভ্যালু মাইনাস হওয়ার পরিস্থিতিতে পদ্মফুল-সন্তদরবেশ-ইনকিলাবি মহল আজ একযোগে আনন্দ সুধার আসর বসাতে মাতোয়ারা হয়ে যাবে।

দেশে ‘পরিবেশ আন্দোলনের জনক’ হিসাবে গণ্য ব্যক্তিত্ব আজ শিক্ষা মহলের পরিবেশ হঠাৎ এমন করে অগ্নিময় করে দেবার উৎস হবেন, ভাবাই যায়নি! কিন্তু ‘শিক্ষা পণ্য নয়’ ঐ আপ্ত বাক্যটির কী হবে? বিগত ছয় দশক ধরে দেখে আসছি অর্থের অভাবে কতো সহস্র প্রতিভা ঝরে পড়েছে এদেশে অকালে। পড়ছে এখনো। অদম্য আর ক’জন! ভ্যাট উঠুক না উঠুক, শিক্ষা আজ পণ্য।স্বাস্থ্যও আজ পণ্য। পুরো গ্লোব জড়ে গ্লোবাল লড়াই এবং মানবিক ব্যবস্থা না হলে মানষের মৌলিক চাহিদা পণ্য হয়েই থাকবে! অধিকার? দূর হনুস্ত !