বিভিন্ন হাসপাতালে তিন লাখ পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি বলেন, ‘সব হাসপাতালেই সমান পরিমাণ পিপিই লাগবে না, যেখানে যে পরিমাণ লাগবে সেখানে সে পরিমাণ দেয়া হচ্ছে।’
রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে নিজের বাসা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমাদের হাতে আড়াইশ’ ভেন্টিলেটর চলে এসেছে। সেগুলো আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে হস্তান্তর করেছি এবং আমদানী করার মাধ্যমে দেশে আসার পথে আছে প্রায় সাড়ে ৩০০ ভেন্টিলেটর। অনেক বড় বড় দেশেও এতগুলো ভেন্টিলেটর থাকে না। আমরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়েছি বিধায় বাংলাদেশ ভালো আছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বলা হচ্ছে করোনা নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি নেই।, এটা সঠিক নয় । গত জানুয়ারি থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমানবন্দরে স্ক্যানিং জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু প্লেন কমানো বা বিদেশিদের আগমন ঠেকানোর কাজ তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের না! যারা এখনো আসছেন সেটাও ঠেকানোর ক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, আমাদের এই ব্যবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়ী। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে। সেটা তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মেকআপ করতে পারবে না। এ ধরনের কথা থেকে বিরত থাকা উচিত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, আইইডিসিআর, আইপিএইচ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতাল, চিলড্রেন হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও Idesh নামের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে PCR টেস্ট করার জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তুত আছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
‘ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগে PCR টেস্ট সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিস হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে PCR মেশিন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অন্য বিভাগগুলোতেও করোনাভাইরাস পরীক্ষা চালু হবে।’
সরকার ঠিকমতো ও সঠিক সময়ে ‘পদক্ষেপ’ নেওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ভালো আছি। আমরা চাই, সকলে মিলে নিয়মকানুন মেনে চললে আমরা ভালো থাকব, ভালো থাকতে চাই। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। কাজেই ভালোটা আমরা রাখতে চাই। সকলে মিলেই কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ, এই করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও মানুষ ভালো থাকবে।’
অনলাইনে দেওয়া বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা গতকালকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। তাঁরা আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আরো ১০টি দেশ ছিল। জাতিসংঘও সন্তুষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে আমরা প্রতিদিন জানাই। তিনিও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা কম কেন? সংখ্যা বাড়লে কি আমরা খুশি হই? আমরা কি চাই বেশি বেশি লোক সংক্রমিত হোক? আর বেশি বেশি লোক মৃত্যুবরণ করুন? আমরা চাই, দেশে লোক সংক্রমিত না হোক, লোক মারা না যাক। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।’
এ ছাড়া তেজগাঁওয়ে গণস্বাস্থ্য ও আকিজ গ্রুপের যৌথ হাসপাতাল তৈরিতে স্থানীয়দের বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। কেউ ভবন দিচ্ছে, পিপিই দিচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘আকিজ গ্রুপ ভবন তৈরি করে দিতে চায় এবং তাতে সমস্যা না হয়, সেটা দেশবাসীর জন্যই সুবিধা হবে। আমাদের প্রয়োজন না হলে ব্যবহার করব না। আমাদের অনেকগুলো হাসপাতাল চিহ্নিত করা আছে। এরপরও প্রয়োজন হলে সেখানে রাখা যাবে। আমাদের মনে হয়, জনগণের সহনশীল হওয়া উচিত।’
গত কয়েক দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সেভাবে মিডিয়ায় দেখা না যাওয়ায় ফেসবুকে গুঞ্জন শুরু হয়। সেই সূত্র ধরে আজকের সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়, তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন কিনা।
উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি তো কাজ করছি। করোনাভাইরাসে আমি নিজে আক্রান্ত নই। সেটি আমি টেস্টও করে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি সেইভাবে কোনো রকমের আক্রান্ত নই, বিধায় আমি কোয়ারেন্টিনের কথা বলব না, বাট আমি আছি। যেভাবে অন্যরা আছে সেভাবেই আমি আছি।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরাসরি কোনো জবাব না দিলেও বিষয়টি নাকচ করে দেননি।
তিনি বলেন, আপনারা যেটি শুনেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো অনেক বড় মন্ত্রণালয়। তাদের ওখানে অনেক লোকজন আসা-যাওয়া করে, ডাক্তার আসা-যাওয়া করে, বাইরের লোক আসা-যাওয়া করে, আমরা তো কাজ করি। কাজেই তাদের কারও হতে পারে।