মোস্তাফিজুর রহমানের পছন্দের ফরম্যাট টি-টুয়েন্টি! বল হাতে ছোট সংস্করণে দেশে-বিদেশে বেশ সফলও বাঁহাতি পেসার। কিন্তু টি-টুয়েন্টির কোন আসর এলেই ইনজুরি বাগড়া দিয়ে বসে টাইগার তরুণের নিয়তিতে। বিপিএলের গত আসরে খেলা হয়নি, ফিজ অনিশ্চিত এবারও। চোট নিয়ে সাউথ আফ্রিকা থেকে ফিরেছেন। মাঠে ফিরতে এখনও সপ্তাহ তিনেক অপেক্ষা করতে হবে তাকে।
কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকায় বিপিএলের গত আসরে খেলা হয়নি মোস্তাফিজের। ৪ নভেম্বর যখন বিপিএলের আরেকটি আসর মাঠে গড়াবে, রাজশাহী কিংসের পেসার তখন থাকবেন আরেকটি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়। প্রোটিয়া সফরের সময়কার অ্যাঙ্কেল ইনজুরিটা তাকে সহসাই মুক্তি দিচ্ছে না।
কিম্বার্লিতে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন ওয়ার্মআপ সেশনে ফুটবল খেলতে গিয়ে গোড়ালির চোটে পড়েন ফিজ। ওয়ানডে সিরিজ শেষে দেশে ফিরে এসেছেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সঙ্গে। ব্লুমফন্টেইনে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল যখন টি-টুয়েন্টি সিরিজে খেলতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, মোস্তাফিজ তখন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীস চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সুস্থ হয়ে ওঠার মিশনে।
বুধবার শুরু হয়েছে ফিজিওথেরাপি। মোস্তাফিজ ছুটি চাইলেও ভালভাবে চিকিৎসার জন্য চাওয়া মঞ্জুর হয়নি। বিসিবির একাডেমি ভবনে থেকেই তাকে করে যেতে হবে মাঠে ফেরার যুদ্ধ। দেবাশীস মনে করছেন, পুরোপুরি ফিট হতে লাগতে পারে আরও ৩ সপ্তাহ। আর শতভাগ ফিট না হলে বিপিএল খেলার ছাড়পত্র দেবে না বিসিবির মেডিকেল বিভাগ।
দেবাশীস চৌধুরী বললেন, ‘স্ক্যান রিপোর্ট বলছে এই ইনজুরিটা গ্রেড-২ স্প্রেইন বা মডারেট টাইপ অব অ্যাঙ্কেল স্ট্রেইন। মোস্তাফিজের ব্যাপারে আমরা তাই সাবধানতা অবলম্বন করব। আগামী দু’দিন ও শরীরের ওজনটা অল্প পরিমাণে বহন করবে। রেগুলার ফিজিওথেরাপির সঙ্গে কিছু ব্যায়াম চলবে। দুই সপ্তাহ পর আমরা ওকে পর্যবেক্ষণ করব। তারপর পরবর্তী ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা ঠিক করা হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এটা লেটারেল অ্যাঙ্কেল স্ট্রেইন, খুব খারাপ ধরনের ইনজুরি। যথাযথ পুনর্বাসন যদি না হয় এবং খেলায় ফেরে, তাতে ভবিষ্যতে একই ইনজুরি আবার ফিরে আসতে পারে। আমরা চাইব মোস্তাফিজ পুরোপুরি সুস্থ হয়েই ফিরে আসুক। সেজন্য যদি বিপিএলের কিছু ম্যাচ মিস করতে হয়, করুক।’
ক্যারিয়ারের শুরুর সময়ে দুইবার বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়লেন মোস্তাফিজ। সাউথ আফ্রিকায় ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি সিরিজ মিস। বিপিএলের সিলেট পর্বে খেলা হচ্ছে না। সেটা একরকম নিশ্চিত। মোস্তাফিজ অবশ্য হতাশায় মুষড়ে যাননি। মানসিকভাবে চাঙা ও ইতিবাচক থাকায় সেটি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠায় সহায়তা করবে বলে মনে করছেন দেবাশীস।
‘ওর সবচাইতে প্রিয় খেলা টি-টুয়েন্টি, ও এখানে ভাল পারফর্মও করে। গত বছর বিপিএল মিস করেছে। এবছরও মিস করছে। আমরা ধারনা করেছিলাম সে হয়ত মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। যেটা হয়ত ওর পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ওর ব্যক্তিত্বটাই এমন যে, ওর সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছে ব্যাপারটা স্পোর্টিংলি নিচ্ছে, হাসিখুশির মধ্যে আছে। হয়ত একটু খারাপও লাগছে। যে পরিমাণ ধারণা করেছিলাম ওরকম মানসিক বিপর্যস্ততা তার মাঝে দেখিনি। ইতিবাচক আছে। আমি নিশ্চিত সেটা ওর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।’
আসছে জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেটায় চোখ রেখে মোস্তাফিজকে নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকি নেওয়া হবে না বলে জানালেন দেবাশীস, ‘সুস্থ হওয়ার পরও বোলিং অনুশীলনের জন্য ওকে কিছুদিন সময় দিতে হবে। শেষের দিকে পুনর্বাসন ও বোলিং অনুশীলন হয়ত একসঙ্গে চলবে। সবমিলিয়ে ৩ সপ্তাহের মতো সময় লেগে যাবে। এর আগে পুরোপুরি ফিট মোস্তাফিজকে হয়ত আমরা পাব না। আর পুরোপুরি ফিট না হলে খেলানোর ঝুঁকি আমরা নিবো না।’