চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বিনিয়োগের ভালো সুযোগ থাকলে অর্থ পাচার হবে না

রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিলে মুনাফা পাওয়া যাবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী

অর্থ পাচারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশে বিনিয়োগের ভালো সুযোগ থাকলে এবং বিদেশের তুলনায় বেশি লাভের সুযোগ থাকলে কেউ অর্থ পাচার করবে না।

বুধবার ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকেরা অর্থমন্ত্রীর কাছে অর্থ পাচাররের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজকের অর্থনৈতিক সংক্রান্ত সভায় একটি এজেন্ডা এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

অর্থ পাচারের বিষয়ে গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে। আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হচ্ছেও। অনেকেই জেলে আছেন। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন তেমন নেই।

ওই দিন তিনি আরও বলেছিলেন, কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। নামগুলো যদি আপনারা জানেন তাহলে আমাদের দিন।

অর্থ পাচারের বিষয়ে আজ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচারে আপনাদের যেমন মনে কষ্ট, আমারও তেমন কষ্ট। এটা নিয়ে প্রথমে কিছু কাজ করা প্রয়োজন। আমরা পদ্ধতি দিয়ে জানতে পারি, কারা এগুলো করছে। পদ্ধতির মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নিত করা হলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, কী কী কারণে মুদ্রাপাচার হচ্ছে। একটি হচ্ছে-কিছু কিছু মানুষ আছে যারা আরও বেশি করে বিদেশে মুদ্রাপাচারের চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, যদি বিনিয়োগের ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারি, তুলনামূলকভাবে যদি বেশি লাভ করার সুযোগ থাকে তাহলে কেউ বিদেশে টাকা নিবে না।

অর্থ পাচারকারীদের উদ্দেশে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-এরা অন্যায় করবে, আবার টাকা পাচার করার চেষ্টা করবে বিদেশে ব্যয় করার জন্য। আমরা চেষ্টা করব ওদেরকেও ট্র্যাক করে সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে এবং আইনি ব্যবস্থা নিতে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেখেছি কীভাবে টাকা পাচার হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা এটি জেনেছি। যারা টাকা পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, সেগুলো অনেক পেন্ডিং আছে। কিন্তু সেগুলো যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় তাহলে অনেককে অন্যায় থেকে বিরত রাখা যাবে। অনেকেই জেলে আছে, অপরাধ একটাই টাকা পাচার করেছে। তাদের লেনদেনে কোনো ব্যত্যয় ছিলে বলেই তারা জেলে। কারা জেলে আছেন তাও আপনারা জানেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির মান কি নিম্নমুখী হয়ে যাচ্ছে?

এমন পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তো স্বাভাবিক সময় না। সব কাজই দেরি হচ্ছে। এ সময়ে কাজ করাটা কঠিন, সঙ্গত কারণেই সময় বেশি লাগবে, তা আপনাদের মেনে নিতে হবে। তারপরও মনে করি পরিসংখ্যান ব্যুরো যেভাবে ছিলে, সেভাবেই আছে। তারা সঠিকভাবে যথাসময়ে কাজটি করবে। এটা পরিকল্পনার কাজ, পরিকল্পনামন্ত্রী যথাসময়ে এটি তুলে ধরবেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ধার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কাকে এই ঋণ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়া হলে সারা দেশের মানুষ জানবে। যখন ঋণ দেয়া হবে তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবো। এখন বলবো না। তবে ইনশাল্লাহ আমরা রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করলে অবশ্যই ঋণ দেব। প্রতিবেশি দেশকে সাহায্য করতে পারলে এটা ভাল হবে। সম্পর্ক বাড়বে। এ ছাড়া এর থেকে আমরা মুনাফা পাব। যদি রিটার্ন পাই তাহলে ঋণ দেব না কেন?

করোনার কারণে নানা সুবিধা দেয়ার পরও  ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপির বিষয়ে কীভাবে ওয়ার্কআউট করেছে সেটা আগে দেখে নেই। আমি আজকেই দেখবো, পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে জানাবো। তবে আগের চেয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।