চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে জাতি

আগামীকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বিনম্র শ্রদ্ধায় কাল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে জাতি।

১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এদিন সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৬ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহিদ পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিবারের মতো এবারও দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করবে।

এ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। এছাড়াও এদিন বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হলেও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় বিচার এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, আমার পিতার হত্যাকাণ্ড এবং তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল চৌধুরী মইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। আমার বাবার হত্যার সাথে জড়িতদের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাছে বিজয়টা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।

অনেকেই মনে করেন, একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।