টাইগ্রিস নদীর তীরে বেয়ে গড়ে ওঠা ১২ হাজার বছরের পুরানো জনপদ তুরস্কের হাসানকেইফ শহর। শহরের বুক চিড়ে দাড়িয়ে আছে তিলোত্তমা নগরীর প্রাচীন হাজার খানেক প্রাচীন গুহা, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং সমাধি। টাইগ্রিস নদীতে লিসু বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তুরস্ক সরকারের নেয়া বিতর্কিত উদ্যোগের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এ প্রত্মতাত্তিক সমৃদ্ধ শহর।
শহরের প্রত্মতাত্তিক সমৃদ্ধি ও জনগণের আপত্তির মুখে বাঁধ দিয়ে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা ভাবছে তুরস্ক সরকার৷
পরিবেশবিদরা হাসানকেইফ শহরটি রক্ষায় নানা রকম উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। শেষমেশ শহরটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালতে আবেদন করা হলেও কোনো লাভ হয়নি।হাসানকেইফে শহরের বাসিন্দাদের তীব্র বিরোধিতার মুখেই সেখানে ২০০৬ সালে লিসু বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার।
এমনকি আগামী ৮ অক্টোবরের মধ্যে শহরের বাসিন্দাদের শহর ত্যাগ করতে সময় বেধে দিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে শহরটি ধ্বংস হতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় বাকি রয়েছে।
বিতর্কিত ওই লিসু বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ হওয়ার পরে এটা হবে দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম বাঁধ যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৪ হাজার দুইশত গিগাওয়াট। তবে প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল।
বাঁধ নির্মাণের ফলে সেখানকার প্রায় হাজার খানেক বসতি গুহা, শতাধিক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং ৮০ হাজার মানুষ স্থানান্তর হবে। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে যার ফলে অসংখ্য বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে।
হাসানকেইফ শহর রক্ষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ওই শহরের বাসিন্দা রিদভান আয়হান বলেন, ‘শহরের রক্ষা করার জন্য ২০০৬ সালে গ্রাসরুট নামে একটি সংঘটন গড়ে তোলা হয়। আমরা আন্দোলন করলেই আমাদেরকে আটক করা হয়। এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই।’
অন্যদিকে হাসানকেইফ শহরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দেশটির সরকার ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০০ বাড়ি নির্মাণ করেছে। এখানকার বাসিন্দাদের আগামী ৮ অক্টোবরের আগেই সেখানে যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে প্রায় পাঁচটি পরিবার স্থানান্তর হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ছয়টি করে পরিবার স্থানান্তর হচ্ছে।
নতুন করে হাসানকেইফ শহর তৈরি করা হলেও সব ঐতিহ্যবাহী ভবন সরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে অনেক কিছুই হারিয়ে যাবে চিরতরে৷
টাইগ্রিস নদী তুরস্ক থেকে ইরাকের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে৷ ফলে ইরাকেও নদী অঞ্চলে খরা দেখা দেয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷ তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় তুরস্ক নিজেই৷ বাঁধের ভাটিতে যেমন খরা দেখা দেবে, উজানে জলমগ্নতার কারণে বাস্তুচ্যূত হবেন লাখো মানুষ৷
এই বাঁধের ফলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলেও ডুবে যাবে টাইগ্রিস নদীর দুই পাশের বিশাল এলাকা৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ-পূর্বের শহর হাসানকেইফ৷ ১২ হাজার বছরের পুরনো এই শহরটির প্রায় পুরোটাই ডুবে যাবে টাইগ্রিসে৷
আগের আসল হাসানকেইফে প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকতো৷ পর্যটনকে কেন্দ্র করে খাবার, স্যুভেনিরসহ নানা ধরনের ব্যবসাও জমে উঠেছিল৷ কিন্তু নতুন স্থানে সরিয়ে নেয়ায় পর্যটনে প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা৷ তাদের ধারণা, আসল স্থান থেকে সরিয়ে ফেলায় আগ্রহ হারাবেন পর্যটকরা৷