দীর্ঘ প্রায় ৭ ঘণ্টা পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্কের পর বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৯’ ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়েছে।
এনডিটিভি জানায়, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দেশটির লোকসভায় ৩১১/৮০ ভোটে বিলটি পাস হয়। এখন তা রাজ্যসভায় পাস হলেই আইনে পরিণত হবে।
লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর পরই অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মূলত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ। এতে বলা হয়, আগের অন্তত ১১ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর ভারতে থাকলে ওইসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য যার ভারতে গেছেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বিলটির পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেন।
পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করার আহ্বানও জানান তিনি।
বলেন, ‘সব উদ্বেগের সমাধান করা হয়েছে। আমরা উত্তর-পূর্বের নাগরিকদের সামাজিক ও ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করব। কারও ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা যথেষ্ট করেছি। প্রতিবাদ এবার বন্ধ হওয়া দরকার।’
তার দাবি, বিল সংসদে পেশ করার আগে ১৪০টি বেসরকারি সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও ১১৯ ঘণ্টা ধরে কথা বলার পর এসব রাজ্যকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
শুরু থেকেই বিলটির তীব্র বিরোধীতা করছে কংগ্রেস, বামসহ বেশ কয়েকটি দল। তাদের দাবি, এই বিল ভারতের সংবিধানের মূল চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
ভারতের সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে মন্তব্য করে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানের সমানাধিকার সংক্রান্ত ১৪ ধরার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন হায়দ্রাবাদের সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, ‘এটা দেশকে ভাগ করার প্রচেষ্টা। প্রস্তাবিত আইনটি আমাদের দেশের সংবিধানের বিরোধী।’
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর এই নেতা দাবি করেন, এই নাগরিকত্ব বিল আরও একবার দেশভাগের কথা বলছে। এটা করা হচ্ছে মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন করার জন্য।
এই বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতেই কেন্দ্র এই বিলটি সামনে এনেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি একই মুদ্রার দু’টি দিক। আমরা পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পরিচালনা করতে দেব না।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অমিত শাহ বারবার বলার চেষ্টা করেন, ভারতের মুসলিমদের সাথে এই বিলের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কোনো ক্ষতি এই বিলে হবে না।
তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এই দলটি ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ না করলে আজ এই বিল আনতে হতো না।
গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-২০১৯’ অনুমোদন দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
বিলটি ভারতের সংসদের দুইকক্ষে পাস হলে প্রতিবেশী এসব দেশের হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সী এই ৬টি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।
এর আগে ২০১৬ সালে আনা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ বিগত লোকসভায় পাস করতে পারলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে রাজ্যসভায় তা পাস করতে পারেনি মোদি সরকার। আবার ক্ষমতায় এসে নতুন করে তা পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।