দেশের প্রতিটি মোবাইল অপারেটরই সেবাদানের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এমনটাই উঠে এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পরিচালিত এক জরিপে।
২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় পরিচালিত ‘মোবাইল অপারেটরস কোয়ালিটি অব সার্ভিসেস (কিউওএস) ড্রাইভ টেস্ট’ নামক ওই জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীনফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক – সবগুলো অপারেটরই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে সেবার মানের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে।
জরিপের অধীনে মোট ১৩৫০ কিলোমিটার এলাকায় পরীক্ষাটি চালানো হয়। প্রকাশিত ফলাফলে বিটিআরসি জানিয়েছে, চারটি অপারেটরের মধ্যে কল ড্রপের হার সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের (৩.৩৮ শতাংশ)। অন্যান্য অপারেটরগুলোর কল ড্রপ বিটিআরসি নির্ধারিত সীমার (২ শতাংশ) নিচে রয়েছে।
কল সংযোগে সময়ও লাগে গ্রামীণফোনেই সবচেয়ে বেশি (১০.১৪ সেকেন্ড)। এরপর রয়েছে বাংলালিংক (৭.৬৯ সেকেন্ড) এবং টেলিটক (৭.১১ সেকেন্ড)। শুধু রবিই ৬.১৫ সেকেন্ড নিয়ে বিটিআরসির সর্বোচ্চ কল সংযোগ সময়সীমায় (৭ সেকেন্ড) পাস করেছে।
মোবাইল ডেটার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল। তৃতীয় প্রজন্ম বা থ্রিজি ইন্টারনেট সেবায় বিটিআরসি নির্ধারিত সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতিসীমা ২ এমবিপিএস। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে শুধু টেলিটক (১.৬৩ এমবিপিএস)। এখানে বাংলালিংকের ডাউনলোড স্পিড সবচেয়ে বেশি (৩.৩৮ এমবিপিএস)। তবে আপলোডের স্পিডের পরীক্ষায় উতরে গেছে সবাই।
কিন্তু চতুর্থ প্রজন্ম বা ফোরজি ইন্টারনেট সেবায় সবার গতিই নির্ধারিত মানের হিসেবে ব্যর্থ। এক্ষেত্রে বিটিআরসি ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি ৭ এমবিপিএস ধরলেও গ্রামীণফোনের আছে ৫.৮৮ এমবিপিএস, রবির ৫.৯১ এমবিপিএস এবং বাংলালিংকের ৫.১৮ এমবিপিএস। আপলোডের গতিসীমা সবারই সন্তোষজনক। জরিপকালে টেলিটকের ফোরজি সেবা ছিল না।
রাজধানীর বাইরেও একই ধরনের ড্রাইভ টেস্ট চলছে জানিয়েছে বিটিআরসি। বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর বাইরের জরিপের ফলও দ্রুত প্রকাশ করা হবে।
মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়, এ ধরনের ড্রাইভ টেস্টে টেলিযোগাযোগ সেবার মানের সার্বিক চিত্র পুরোপুরি উঠে আসে না। তবে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার আগে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় কোনো অপারেটরই।
গ্রামীণফোনের জন্য বিটিআরসি’র চার বিধিনিষেধ
সেবার মান সার্বিকভাবে সন্তোষজনক না হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে চারটি সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি)’ বা তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালার অধীনে সংস্থাটি এ নির্দেশনা দেয়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে এসএমপি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
চার বিধিনিষেধের মধ্যে প্রথমেই গ্রামীণফোনের মাসিক কল ড্রপের হার ২ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে বলেছে বিটিআরসি। এরপর গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে অপারেটর বদলানোর সেবা বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৩০ দিন বেঁধে দেয় সংস্থাটি। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক অন্য কোনো অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে গেলে তাকে গ্রামীণফোনের সংযোগেই ৩০ দিন থাকতে হবে। অন্যান্য অপারেটরের জন্য এই সময়সীমা ৯০ দিন।
তৃতীয় বিধিনিষেধ অনুসারে, গ্রামীণফোন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও একক স্বত্ত্বাধিকার চুক্তিতে যেতে পারবে না। আর চতুর্থটি হলো, দেশব্যাপী কোনো মাধ্যমে কোনো ধরনের মার্কেট কমিউনিকেশন বা বাজার প্রচারাভিযান করতে পারবে না গ্রামীণফোন। অর্থাৎ নতুন প্যাকেজ বা সেবার জন্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না এই অপারেটর।