চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিজয়ের দিনে স্বল্পদৈর্ঘ্যে দুই নির্মাতার শুরু

বিজয় দিবসে ছোট দৈর্ঘ্যের নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটছে দুই তরুণ নির্মাতার। একজনের চলচ্চিত্রের বিষয় মানবিকতা এবং অন্যটির বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। একজনের নাম রানা মাসুদ এবং অন্যজনের নাম সিফাত ই রাব্বী। একটি চলচ্চিত্রের নাম ‘নিবাস’ এবং অন্যটি ‘বীর বিচ্ছু।

শেষ করেছেন দুই তরুণের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। এখানেও চরিত্র নিয়ে নিবিড় নিরীক্ষা। একটিতে ডাকাত থেকে মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তর। আর অন্যটিতে মানবতার বিনাশকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

রানা মাসুদ ও ‘নিবাস’ কথা: একনিষ্ঠ একলব্য মনে করেন নিজেকে তানভীর মোকাম্মেল এর। নিজের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ শেষে উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথিও করেছেন গুরুকে। এ জন্য গুরুদক্ষিণার মত বিষয়।

১৬ ডিসেম্বর শনিবার  রানা মাসুদের পরিচালনায় সন্ধ্যা ৭টায় পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার কক্ষে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নিবাস’-এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা, একুশে পদকপ্রাপ্ত তানভীর মোকাম্মেল।সমতলের মানুষ কিভাবে পাহাড়ি মানুষদের ঠকায়,বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করে কিভাবে প্রতিনিয়ত তাদের দমিয়ে রাখা হয়। অভ্যস্ত করে তোলা হয়। এমন বিষয় নিয়েই  গড়ে উঠেছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নিবাস’-এর গল্প।

‘লাল সালু’ থেকে তানভীর মোকাম্মেল এর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। প্রায় ১৭ বছর। নাম তার রানা মাসুদ। তিনি মনে করেন, তার যে চলচ্চিত্র ভাবনা বা চিন্তার ধরণ তার সবটা তানভীর মোকাম্মেল প্রভাবিত। আর এতে তিনি গর্ববোধও করেন।‘লালন’ চলচ্চিত্রে কাজ করার সময় পরিচয় হয় প্রখ্যাত অভিনেত্রী শমী কায়সার এর সঙ্গে। তার সঙ্গে যোগ দেন ধানসিড়িতে। শুরু করেন বিজ্ঞাপন নির্মাণ। এরপর নির্মাণ নিজের প্রতিষ্ঠান ফেরিওয়ালা। সব মিলে ৩০০ এর মত বিজ্ঞাপন-চিত্র নির্মাণ করেছেন।

থিয়েটার আরামবাগে কাজ করেছেন। শান্তিনগরে বড় হয়ে ওঠা প্রায় মাস্তানীর জীবনে থিয়েটারের পথ দেখিয়েছিলেন এক বড় ভাই। যার কল্যাণে শিল্পের পথে যাত্রা শুরু। ৭ বছর আগে ঠিক করেছিলেন সন্তোষ রায় এর গল্প থেকে নির্মাণ করবেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। অনেক সুযোগ থাকা স্বত্বেও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি। এমনকি এত দীর্ঘ ক্যারিয়ারে করেননি কোন নাটকের কাজ।  স্বল্পদৈর্ঘ্য আরও কয়েকটি করে নিজের যোগ্যতা যাচাই করে ২০২০ সালে নিজের পরিচালনায় প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান। বিজয় দিবসে ১৫ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘নিবাস’ চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত বিজয় দিবস আর দ্বিতীয়ত গুরু প্রধান অতিথি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই এ মুহূর্তে।

সিফাত ই রাব্বী ও ‘বীর বিচ্ছু’ : রংপুরের ছেলে সিফাত ই রাব্বী। বাবা প্রফেসর মো. মোজহার আলী ও মা প্রফেসর সৈয়দা শাহারা ফেরদৌস। দুজনেই শিক্ষক। রংপুর কারমাইকেল কলেজ এলাকায় বেড়ে ওঠা তরুণ রাব্বীরও স্বপ্ন রয়েছে শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু মাথায় চলচ্চিত্রের নেশা সেওতো কাটানো যাচ্ছেনা। যা মাথায় ঢোকে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সঙ্গে জড়িয়ে চলচ্চিত্র জুড়ে যায় ভাবনায়। নাট্যকলায় পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজে চলে যাওয়া। সেখান থেকে মাস্টার্স।

প্রাতিষ্ঠানিক কাজের অংশ যখন নির্মাণ হয় তখন তা কাজে লাগান রাব্বী।বিষয় হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। বাবা-মায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে শুনতে বড় হওয়া রাব্বীর ভালোবাসা এবং ভালোলাগার জায়গাও মুক্তিযুদ্ধ। এর আগে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। শাহরিয়ার শহীদের সহকারী হিসেবে তৈরি করেছেন দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য। একটি কুড়িগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘নাগেশ্বরী ৭১’ এবং অন্যটি ‘সাবাস বাংলাদেশ’।

এদিকে তার প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যখন সরকারের এটুআই প্রকল্প (এক্সেস টু ইনফরমেশন) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এতে অর্থায়নে এগিয়ে আসে তখন তা পোয়াবারো হয়ে দাড়ায়। যা অনুদান হিসেবে এসেছে তার বাইরেও অর্থ লেগেছে। সামনে বিয়ে করবেন কিন্তু আগে চলচ্চিত্রটি শেষ করতে হবে লক্ষ্যে কাজ করেছেন তিনি। হবু বধূ দাঁড়িয়েছেন এ কাজের সহযোগী হিসেবে। একমাত্র বড় বোন ডাক্তার। তিনি দাঁড়ান ভাইয়ের পাশে। বাবা-মা তো আছেনই।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বকনিষ্ঠ যোদ্ধা যাকে কোলে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমা অনুষ্ঠানে সেই শহীদুল হক লালুর বীরত্ব কাহিনী অনুপ্রেরণা হয়ে গল্পের আকারে উঠে এসেছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিতে।

বিজয় দিবসে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে ৩৫ মিনিটের ‘বীর বিচ্ছু’। বিজয় দিবসে আত্মপ্রকাশ নিয়ে সিফাত ই রাব্বী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এটা আসলে স্বপ্নের মত ব্যাপার। আত্মপ্রকাশ যদি বিজয় দিবসে হয় তার চাইতে বড় কি আর হতে পারে?’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে আত্মপ্রকাশের কারণ হিসেবে বলিষ্ঠ কণ্ঠে তরুণ রাব্বী বলেন, আমি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। তার আগে এগুলো হাত মকশো প্রক্রিয়া।’