ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ১১ জন বাংলাদেশীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে তিনজন বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীরা হলেন, রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী এবং ড. রূপা হক। তিনজন যথাক্রমে তাদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটের ৬১.২ শতাংশ, ৪৪.৪ শতাংশ, ৪৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি ২৩ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগীতা করে জিতেছেন ড. রুপা হক। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ২৭৮ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। প্রতিযোগীতা করেছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকও, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এক হাজার একশ’ ৩৮ বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
রুশনারা আলী:
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী এমপি রুশনারা আলী। এবারের নির্বাচনেও তিনি লেবার পার্টির হয়ে ব্রিটেনে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি লেবার দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বেথনালগ্রীন ও বো আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় পঁচিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে। রুশনারা পেয়েছেন ৩২ হাজার তিনশ’৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথিউ স্মিথ পেয়েছেন ৮ হাজার সাত ভোট। আর গ্রীন পার্টির এলিষ্টার পলসন পেয়েছেন চার হাজার ৯শত ৬ ভোট। মোট ভোটের শতকরা হারে রুশনারা আলী পেয়েছেন ৬১.২ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্মিথ পেয়েছেন ১৫.২ শতাংশ এবং অপর প্রতিদ্বন্দ্বী এলিষ্টার পেয়েছেন ৯.৩ শতাংশ ভোট।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বুরকী গ্রামের মেয়ে রুশনারা আলী।
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী:
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী।
তিনি এই আসন থেকে মোট ভোট পান ২৩হাজার ৯৭৭ টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের সাইমন মারকাসের চেয়ে এক হাজার একশ’ ৩৮ ভোট বেশী পেয়েছেন। শতকারা হিসেবে মোট ভোটের ৪৪.৪ অংশ। অপরপক্ষে তার সাইমন পেয়েছেন ৪২.৩ শতাংশ। আর এক প্রার্থী লিবারেল ডেমোক্রেট দলের মাজিদ নেওয়াজ পেয়েছেন ৫.৬ শতাংশ।
টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকী দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের মেরটন কাউন্সিলের মিচাম এলাকায় ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ, ব্রুনেই, ভারত, সিঙ্গাপুর, স্পেনে বাল্যকাল কাটিয়েছেন।
ড. রূপা হক:
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী ড. রূপা হক। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই আসনের নির্বাচনে মাত্র ২৭৪টি ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করেন।এই আসনে রূপা হক ২২ হাজার ২টি ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির এঞ্জি ব্রে ২১ হাজার ৭শত ২৮ টি ভোট লাভ করেন। দুই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের পার্থক মাত্র ২শত ৭৮ ভোট। অপর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেট দলের জন বিল। তিনি ভোট পান তিন হাজার একশত ছয়।
নির্বাচনে মোট ভোটের মধ্যে ড. রুপা হক পেয়েছেন ৪৩.২ শতাংশ, এঞ্জি ব্রে পেয়েছেন ৪২.৭ শতাংশ এবং জন বিল পেয়েছেন ৬.১ শতাংশ।
রূপার বাবা-মা ১৯৬০ সালে ব্রিটেনে আসেন। ১৯৭২ সালে লন্ডনের হেমারস্মিথে জন্ম নেয়া রূপা ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি একাধারে লেখক, কলামিস্ট, মিউজিক ডিজে।
রূপা হকের আদি বাড়ি পাবনায়।
এবারের নির্বাচনে ব্রিটেনে মোট ৫০ মিলিয়ন ভোটার ৬শ’৫০টি আসনে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এসব আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম লেখায় ১১ জন বাংলাদেশী। তাদের সাতজনই লেবার পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।