বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ১৮তলা ভবন অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। পরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন।
এদেশে দুর্নীতি, আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন না মানার প্রবণতার বিষয়ে বলে লাভ নেই। হরহামেশা হয়ে আসছে এগুলো। ঢাকা শহরে যদি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ও বিল্ডিং কোড মেনে করা ভবন কেউ যদি খোঁজেন, তাহলে এর পরিমাপ দুই হাতের আঙ্গুল দিয়েই করে ফেলতে পারবেন! বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আমার কোনো কথা নেই।
কিন্তু কথার বিষয় হলো, অনেকেই ভবনটি ভাঙ্গার রায়ে উচ্ছ্বসিত! তবে তাদের সঙ্গে হাততালি দিতে পারছি না। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে, অন্য কোনো দেশে হলে সরকার নিজ খরচে এমন একটি ভবন বানিয়ে দিতো। আর আমরা আছি ভাঙ্গার তালে! এই ভবনটি ভাঙ্গলেই ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম ‘সেরা পরিবেশ বান্ধব’ শহরের তালিকায় উঠে আসবে না নিশ্চয়ই! যেই শহর বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে বিশ্বের সেরাদের তালিকায় আছে, সেখানে পরিবেশের দোহাই দিয়ে লাখো মানুষের রুটি, রুজির ভরসাস্থল এ ভবনটি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই হাস্যকর ও উদ্দেশ্যমূলকই বলতে হবে। বিশেষ করে আমার কাছে তাই মনে হয়।
সবাই বলেছেন, হাতিরঝিলের লেককে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই ভবনের কারণে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বিষফোঁড়া। এছাড়া বিজিএমইএ যাদের কাছে ফ্ল্যাট ও ফ্লোর বিক্রি করেছে, আদালত বিজিএমইএ’কে তাদের অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে এই সেক্টরে এর প্রভাব পড়বে। ওই যে কথায় আছে না, ‘অভাব যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়’, এখানেও তেমনটাই ঘটবে। কারণ, ভবনটি ভাঙ্গলে গার্মেন্টস সেক্টরে, বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতনের ওপর এর প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বে। আর পরিবেশ আর হাতিরঝিল তখন ভালোবাসার মতোই জানালা দিয়ে পালাবে! ভবন ভাঙ্গার জন্য এখন যারা হাততালি দিচ্ছে, লাফালাফি করছে, শ্রমিকদেরকে একবেলা খাবারের টাকা তখন পকেট থেকে কেউ দেবে না! এটাই বাস্তবতা।
বলতে পারেন, গার্মেন্টস সেক্টরে নিয়মনীতি ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না, শ্রমিকদের বিষয় দেখা হচ্ছে না ঠিকমতো। কারখানার মান কিংবা মজুরি, বেতনের বিষয় নিয়েও কথা থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই না, সমস্যা হলে তা সারানোর চেষ্টা না করে বরং মাথাটাকেই কেটে ফেলতে হবে! বরং মাথা ব্যথায় মাথাটা না কেটে তা সারানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এমন ও তো না যে, জমিটা ব্যক্তিমালিকানার, তাই এর মালিকানা সংক্রান্ত ঝামেলা আছে। এজন্য বরং সরকারের ফান্ডে তাদের থেকে ভালো একটা এমাউন্ট নেয়া যেতে পারতো, বা এখনো নেয়া যেতে পারে। এতে লাভ সবারই! বিশেষ করে মালিকপক্ষ ভালো থাকলে শ্রমিকরা ভালো থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর তারা শ্রমিকদের ভালো না রাখলে, বা ভালো রাখার চেষ্টা না করলে তখন তাদের ওপর খবরদারি করার নৈতিক অধিকারটা সরকারের থাকবে, নয়তো নয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)