তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরবর্তী সভাপতি হিসাবে রুপা গার্মেন্টসের এমডি শহীদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে-এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
সংগঠনটির সদস্যদের দুই জোট ফোরাম এবং সম্মিলিত পরিষদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে সভাপতি নির্বাচন করা হতে পারে।
তবে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ তার বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করেছেন। একজন উদ্যোক্তা শহীদুল ইসলামকে সভাপতি না করার বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদও করছেন বলে জানা গেছে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ২০১৪ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকায় এ খাতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্য নেতাকে দায়িত্ব দিতে দুই জোট একমত হয়। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানির মন্দা অবস্থা কেটে গেছে। তাই এখন সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন না করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হওয়াই উচিত।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে ও বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২১ ডিসেম্বর বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিদের সংগঠন ‘এক্স বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফোরাম’র সভায় রুপা গার্মেন্টসের এমডি শহীদুল ইসলামকে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচন করার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে সম্ভাব্য সভাপতি রুপা গার্মেন্টসের এমডি শহীদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ বিষয়টি আমি এখনও নিশ্চিত নই।
বর্তমান পরিষদের কেউ কেউ আপনার বিরোধীতা করছে এমন শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অনেক দিন ধরে বিজিএমইএতে যাই না। অতএব এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি এম এ মান্নান কচি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সবাই যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সভাপতি তিনি হবেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা কিছুটা খারাপ ছিল। ওই অবস্থার উন্নতি করতে ২০১৫ সালে পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, খুব পরিচিত এবং দক্ষ এমন উদ্যোক্তাকে বিজিএমইএর সভাপতি করা হবে। সে সময় পরবর্তী দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতার মাধ্যমে পোশাক ব্যবসায়ীদের দুই জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম থেকে নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসাবে এক মেয়াদে সম্মিলিত পরিষদ আর এক মেয়াদে ফোরাম থেকে সভাপতি হওয়ার কথা।
গত নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন সিদ্দীকুর রহমান। সে হিসাবে এবার ফোরাম থেকে সভাপতি হওয়ার কথা।
একই সঙ্গে যে জোট থেকে সভাপতি নির্বাচিত হবে সেই জোট থেকে পরিচালক থাকবেন ১৯ জন। আর অন্য জোট থেকে থাকবে ১৬ জন।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন উদ্যোক্তার অভিমত, আদালতের নির্দেশমতে ভবন ভাঙ্গা ও নতুন করে তা নির্মাণ করা, ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ, অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের চাপ মোকাবেলা করা, পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিকরাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এ খাতে। এসব মোকবেলা করতে দক্ষ ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার।
বিজিএমইএর একটি সূত্র চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, বর্তমান পরিষদের এক নেতা সম্ভাব্য সভাপতি শহীদুল ইসলামের তীব্র বিরোধীতা করছেন। তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে বর্তমান পরিষদে কিছুটা মত বিরোধ চলছে।
যদিও শহীদুল ইসলাম ২০০৬ ও ২০০৮ সাল এই দুই মেয়াদে বিজিএমইএর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে বিজিএমইএর একজন পরিচালক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সমঝোতার দুই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুই সংগঠন আবার এক হয়ে যাবে। তখন ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচিত হবে। আর পরিচালকরাই সভাপতি নির্বাচন করবেন।
‘তবে এখন তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা ধীরে ধীরে ভালর দিকে যাচ্ছে। তাই এই মেয়াদের পর আর সমঝোতায় সভাপতি নির্বাচন করা ঠিক হবে না।’
সমঝোতায় নেতা নির্বাচন করা হলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যাবে না-এই জন্য কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করলেও পোশাক খাতের সার্থে সরাসরি কিছু বলতে চান না তারা।
বিজিএমএর একজন সাধারণ সদস্য বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচিত হলে খুব ভাল হবে কিংবা নির্বাচনের মাধ্যমে ভাল হবে-এমন নয়। আমরা চাই পোশাক খাতে যোগ্য নেতৃত্ব। তবে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার তো সবার থাকবে। সেটা সবারই বিবেচনা করা দরকার।
সাধারণ সদস্যদের ভোটে সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিজিএমইএর নেতা নির্বাচিত হয়েছিল। সেই সময় সম্মিলিত পরিষদের আতিকুল ইসলাম ১ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে সভাপতি হন। ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান পেয়েছিলেন ১ হাজার ৩৭৭ ভোট।