দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে ছয় মাসের মধ্যেই ভাঙতে হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নান্দনিক ভবন ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’। ভবনটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আগ্রহের শেষ নেই। অনেকের জিজ্ঞাসা এত বড় ভবনে সংগঠনের কার্যালয় ছাড়া আর কী কী আছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিএমইএ ভবনে সংগঠনটির নিজস্ব অফিস ছাড়াও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানির অফিসসহ বেশ কয়েকটি অফিস রয়েছে ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে। এরমধ্যে চারটি ফ্লোর বিজিএমইএর। বাকিগুলো বিক্রি করা ও ভাড়া দেওয়া। আর আয়তনের দিক থেকে এর মোট আয়তন দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট ব্যবহার করে বিজিএমইএ। বাকি এক লাখ ২০ হাজার বর্গফুট বিক্রি করা হয়েছে।
দুইটি বেসরকারি ব্যাংক ছাড়া বাকি সব ফ্লোরই বিক্রি করা হয়েছে বিজিএমইএ’র সদস্যদের কাছে। অনেকটা সুলভমূল্যে এসব ফ্লোর কিনে নেন তারা। প্রায় ১১ জন পোশাকমালিকের অফিস রয়েছে এখানে। এর মধ্যে বর্তমান কমিটির সভাপতি, সহসভাপতি, সাবেক দুই সভাপতির মালিকানাধীন অফিস আছে।
জানা গেছে, বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের বান্দো ডিজাইনের অফিস, সহ-সভাপতি ফেরদৌস পারভেজের ক্রিয়েটিভ গ্রুপের অফিস ও আরেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবুর রাইজিং গ্রুপের অফিস, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের একোয়া মেরিনের অফিস, সংগঠনের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের অফিস রয়েছে এখানে।
যাদের কাছে এসব ফ্লোর বিক্রি করা হয়েছে; তাদের নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। নির্মাণে সহযোগিতা হিসেবে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম কিস্তি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কোন ফ্লোরে কী আছে:
ভবনের নিচে রয়েছে দু’টি বেইজমেন্ট। যেখানে প্রায় ২শ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা আছে। নিচ তলায় (দুই বেইজমেনন্টের ওপরে) রয়েছে বিজিএমইএর নিজস্ব সাব স্টেশন। ভবনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে এখানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক হাইভোল্টেজ জেনারেটর। রয়েছে অভ্যর্থনা কেন্দ্র। ভবনে রয়েছে উচ্চ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি লিফট। এর একটি বিজিএমইএ সদসদ্যের জন্য সংরক্ষিত।
২য় তলায় রয়েছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের শাখা, বিজিএমইএর নিজস্ব ল্যাবরেটরি ও অডিটরিয়াম। ৩য় তলায় রয়েছে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের শাখা। ৪র্থ ও ৫ম তলায় বিজিএমইএর নিজস্ব অফিস। ৬ষ্ঠ তলায় রয়েছে প্রাইম ইনস্যুরেন্স, পিপলস গ্রুপ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিটিওএ), জার্মানিয়া করপোরেশন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিস লিমিটেড (আইটিএস) ও ইজি সেলারি’র অফিস।
ভবনের ৭ম তলায় রয়েছে বান্দো ডিজাইন ও একোয়া মেরিনের অফিস। এছাড়া রয়েছে ক্লিপটন গ্রুপের অফিস। ৮ম তলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাঁকা’র দফতর। ৯ম তলায় সাভার গ্রুপ ও শিপা গ্রুপের অফিস। ওই ফ্লোরে আরও প্রায় চারটি অফিস স্পেস ফাঁকা পড়ে আছে। ১০ম তলায় রূপা ফ্যাশনের অফিস।
১১ তলার একাংশ কিনেছে ওসমান গ্রুপ। এ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাসেল গার্মেন্টের অফিস রয়েছে সেখানে। বাকিটা খালি রয়েছে। ১২, ১৩ ও ১৪ এ তিনটি তলার মালিক শীর্ষ গার্মেন্টস কোম্পানি দুলাল-ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। বিজিএমইএ’র পর ডিবিএল গ্রুপই ভবনের বৃহত্তম অংশের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছে প্রায় ২৮ হাজার বর্গফুট, যেখানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন কর্মী।
১৫ তলায় রয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের অ্যাপারেল ক্লাবের কার্যালয় ও সম্মেলন কক্ষ। সুইমিং পুলসহ খেলাধুলার নানা ধরনের সুবিধাও রয়েছে এই তলায়। সব মিলিয়ে পুরো ভবনে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভবনে বিজিএমইএ ছাড়া আর কাদের অফিস রয়েছে জানতে চাইলে সংগঠনটির সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এখান থেকে চলে যাব। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
এদিকে ৬ মাসের মধ্যেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর এই ভবনের বিভিন্ন অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের চাপা কষ্ট বিরাজ করছে। মুখে ব্যক্ত না করলেও আকার-ইঙ্গিতে অনেকেই তা প্রকাশ করছেন।
ইতোমধ্যেই সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্ধারিত সময়ে তারা ভবন ছেড়ে দিবে। নতুন অফিসের সরকারের কাছ থেকে উত্তরার ১৫ নং সেক্টরে ৫ বিঘা জমি বরাদ্দ পেয়েছেন তারা। যতদ্রুত সম্ভব সেখানে চলে যাবেন তারা।
রাজধানীর হাতিরঝিলের পরিবেশের ক্ষতি করাসহ নিয়ম না মেনে বহুতল এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ১৫ তলা ভবনটি ৬ মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গত ১২ মার্চ এই নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর ৮ বছর পর ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।