পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছিল, যার নাম দেয়া হয়েছে বিগ ব্যাং। এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক বিস্ফোরণের সাক্ষী হলেন যাকে সেই বিগ ব্যাংয়ের পর এ যাবতকালের সবচেয়ে শক্তিশালী মহাজাগতিক বিস্ফোরণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণটি ঘটেছে পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটলেও কল্পনাতীত শক্তিশালী ছিল এই বিস্ফোরণ।
এত উজ্জ্বল আলো পৃথিবী থেকে এর আগে কখনো দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিস্ফোরণ চিহ্নিত করার কাজে নিয়োজিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩শ’র বেশি মহাকাশবিদ। এর ফলে এত বেশি তেজস্ক্রিয় গামা রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটেছে যা ৭শ’ কোটি আলোকবর্ষ (এক আলোকবর্ষ = আলো এক বছরে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করে) পেরিয়ে পৃথিবীতে এসে পৌঁছে।
শুধু তাই নয়, বিস্ফোরণটি থেকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে এত বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে যা আমাদের সূর্য তার এক হাজার কোটির বছরের জীবনে হয়তো পুড়িয়ে শেষ করতে পারবে।
চলতি সপ্তাহে এ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক বিজ্ঞানীর দলটি। তারা জানান, এত শক্তিশালী ও উজ্জ্বল বিস্ফোরণ এর আগে কখনো রেকর্ড করা হয়নি।
বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে গামা রশ্মির বিচ্ছুরণ মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তি নির্গমনকারী ঘটনা। এ ধরনের ছোটবড় বিচ্ছুরণ প্রায় প্রতিদিন হলেও বিগ ব্যাংয়ের পর এত বড় মাপের গামা রশ্মি বিচ্ছুরণ এটাই প্রথম বলে গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন এর অন্যতম লেখক ড. জেমা অ্যান্ডারসন।
তিনি জানান, এ ধরনের বিস্ফোরণ শুধু তখনই শনাক্ত করা সম্ভব হয় যখন এর রশ্মিগুলো সরাসরি পৃথিবী লক্ষ্য করে বিচ্ছুরিত হয়। এগুলো কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
সাধারণত অতি বৃগৎ আকারের কোনো নক্ষত্র ভেঙে সুপারনোভা পর্যায়ের বিস্ফোরণ ঘটলে এত বিপুল পরিমাণে গামা রশ্মি বিচ্ছুরণ হয় বলে জানান ড. অ্যান্ডারসন। ‘এ ধরনের বিস্ফোরণের ফলেই তৈরি হয় ব্ল্যাক হোল,’ বলেন তিনি।
ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর হলো অতি বিশাল আকারের তারা বা নক্ষত্র নিজের মহাকর্ষ বলে বিস্ফোরণের মাধ্যমে তুলনামূলক অনেক ছোট বিন্দুতে জমা হওয়া কল্পনাতীত পরিমাণ ভর, যে বিন্দুতে এমন অচিন্ত্যনীয় পরিমাণ মহাকর্ষ বল কাজ করে যে সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না।
এই ‘প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ’টি থেকে পৃথিবীতে গামা রশ্মি পৌঁছেছিল চলতি বছরের জানুয়ারির ১৪ তারিখে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন নির্মিত নিল গেরেলস সুইফট অবজার্ভেটরি এবং ফারমি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপ – এই দু’টো স্পেস স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে বিস্ফোরণ।
বিস্ফোরণটির নাম দেয়া হয়েছে GRB 190114C এবং আবিষ্কারের সাথে সাথেই এর খবর পাঠিয়ে দেয়া হয় পৃথিবীর সব মহাকাশবিদের কাছে।