মেয়ে, তুমি এত বোকা কেন? কিছুটা হয়রানির শিকার না হয় হয়েছোই, তা প্রকাশ করার দুঃসাহস তুমি কেন দেখাতে গেলে?
তাও আবার কিনা ক্ষমতাবান সোনার ছেলেদের বিরুদ্ধে! তোমার তো কপাল ভাল যে কিছু চড় চাপড় খেয়েছো, ওরা তোমার শরীরের এদিক ওদিক হাতিয়েছে কেবল। চিল শকুনের মত তোমার শরীরটাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ভাগাভাগি করেনি। তোমার নিষ্প্রাণ দেহ এখানে সেখানে পড়ে থাকেনি। এসব তো এখন পানিভাত। বুক চিতিয়ে করে বেড়ায়, কিছু হয় না। মেয়ের সামনে মা’কে, মায়ের সামনে মেয়েকে, মা-মেয়ে দুজনকেই একসাথে গ্যাং রেপের কাহিনী ভুলে গেলে? সে তুলনায় তোমার সাথেতো কিছুই করেনি বলা যায়। তাও তুমি তাদের দিকে আঙ্গুল উঁচাও!
মেয়ে, তোমার সাহস তো কম না !! কেমন হলো এখন! কী পেলে?
সেদিন যে শারীরিক ও মানসিক হ্যারেসমেন্টের শিকার তুমি হয়েছো, তার চেয়ে একশগুণ বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার তুমি হলে মুখ খুলতে। সেদিন যে অপমানিত হয়েছো তার চেয়ে হাজারগুণ অপমানিত হতে হলো আজ শুকরগুলোর মুখোশ ধরে টান দেওয়াতে ।
কী মনে হয় তোমার- আমরা এমন লাঞ্চনার শিকার হইনি? এসব তিক্ততার অভিজ্ঞতা কি আমাদের হয়নি? বিকৃত পুরুষের কদাকার চেহারা কোন মেয়ে না দেখেছে! এমন কোন একটা মেয়ে কি আছে যে এমন নোংরা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি? একজনও আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না । সেদিনও কিন্তু বহু মেয়ে, মহিলা তোমার মত একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনই শুধু তোমার মত সামনে এসেছে। বেশিরভাগই নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে।
কত ঘেন্না, কত অপমান, কত ক্ষোভ যে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছি! চুপচাপ গা কামড়ে হজম করে গিয়েছি। কেন? একারণেই। জানতাম ফলাফল আমার বিরুদ্ধেই যাবে। দুজন সহমর্মিতা দেখাবে, কয়েকজন প্রতিবাদ করবে তো একশ জন আসে তেড়ে। হাজারজন জুটে যায় নির্যাতিতেরই চারিত্রিক বিশ্লেষণ করতে। অপমানটা লক্ষ গুণ হয়ে ফেরত আসে। চুপ থাকলে তবু লজ্জা সীমিত গণ্ডিতে থাকে। ঘেন্নাটা নিজের মধ্যে লুকায়িত থাকে। এসব দেখেও কেন চুপ থাকা শিখলে না, মেয়ে!
সেদিন তো তবু হায়েনারা সংখ্যায় অল্প ছিলো। এখন লক্ষ লক্ষ হায়েনার নখরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছো নিজের ভুলেই!
নিজের সন্মানের দিকে না তাকিয়ে কতগুলো মানুষরূপী পশুর মুখোশ খুলতে চেয়েছো যেন আরো দশটা মেয়ে বাঁচে! কী পেলে? উল্টো পালে পালে নেকড়ের হাত থেকে বাঁচতে নিজেকেই গর্তে লুকাতে হলো। কাজেই হজম করতে শেখো মেয়ে।
মুখে তালা লাগাও। শরীরে লোহার বর্ম লাগিয়ে চলতে শেখো। লজ্জা, অপমান, কষ্টগুলোকে ঘেন্নার আকারে জমাট বাঁধিয়ে রাখতে শেখো। হৃদপিণ্ড যদি ছিন্নভিন্নও হয়, মেয়ে, তুমি চুপই থাকো।
বরং সম্মিলিতভাবে জোর দাবি তুলি এসব নারী দিবস, মা দিবস আর কন্যা দিবস বন্ধ করার। এত ভণ্ডামি আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)