বিকাশ কর্তৃপক্ষ এজেন্টদের অস্বাভাবিক লেনদেনের সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাসময়ে দেয় বলে জানিয়েছেন বিকাশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন: বিকাশের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স আনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিকাশের যেসব এজেন্টদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে বিকাশ কর্তৃপক্ষই দিয়েছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই তৎপরতায় যেকোন রকমের অনৈতিক ও অস্বাভাবিক লেনদেন থেকে আমাদের এজেন্টরা সচেতন হয়ে যাবে।
সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিকাশের মাধ্যমে যে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন তা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে এমন অভিযোগে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিকাশের নয় এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া ইয়াবা ব্যবসার টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করার অভিযোগে বিকাশ এজেন্টসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে বিকাশ কর্তৃপক্ষ কতোটা সচেতন জানতে চাইলে বিকাশের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিকাশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কতিপয় এজেন্ট এসব অপব্যবহার করছে। সিআইডি যেসব এজেন্টদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছিলাম। আমাদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘অবৈধ ও অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে আমাদের বিশেষ বিভাগ রয়েছে, এটি আমাদের চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। যখনই কোন এজেন্ট অস্বাভাবিক লেনদেনে লিপ্ত হবে তখনই সেটা আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য দেব।’
তিনি বলেন: আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং, হুন্ডি বা অনৈতিক কোন কিছু হোক, তা আমরা কখনোই চাই না। আমরা চাই, সরকারের রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাক, দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হোক।
‘বিকাশ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিআইডি’র সমন্বিত উদ্যোগে এসব অসাধু এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি মোবাইল মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের নিয়মনীতিগুলো মেনে ব্যবসা করতে সকল এজেন্টদের উদ্বুদ্ধ করবে’, বলেন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম।
বাংলাদেশে এখন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিলেও এই খাতের বড় অংশের লেনদেন ব্রাক ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। দেশে এই প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৮০ হাজার এজেন্ট রয়েছে। সবগুলো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট এজেন্ট রয়েছে প্রায় ৬ লাখের বেশি।
বিকাশের জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন জনপ্রিয় হলেও দেশের বাইরে আমাদের কোন শাখা নেই। আমাদের এজেন্টরা বিকাশের চাকরি করে না, তারা বিকাশের ব্যবসায়িক অংশীদার। তারা বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসা করছে। যারা এরকম অপরাধে জড়াচ্ছে তারা বিকাশ ছাড়াও অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের এজেন্ট। আমারা আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের নিজস্ব ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে অসাধু এজেন্টদের তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছি।
‘বিকাশের জনপ্রিয়তা ও এজেন্টের অস্বাভাবিক লেনেদেনের তথ্য সঠিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিকাশের অসাধু এজেন্টদের সংখ্যা বেশি পাচ্ছে।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের এজেন্টের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি, এরমধ্যে বিকাশ এজেন্টের সংখ্যা বেশি। আমরা সব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করছি।