বাংলাদেশের জন্য জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই একটা বড় হুমকি। এটা আমি আপনি সবাই জানি। জানে বাংলাদেশের আপামর জনগণ, জানে তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্মা, জানে বীরাঙ্গনা নারীর চোখের জল, জানে এক কোটি উদ্বাস্তু প্রাণ, জানে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজন, জানে পুলিশের থেঁতলানো মাথা, জানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। জানে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস-সরকারী ভবন, অফিস, আদালত, জানে রাস্তায় আগুনে পুড়ে মরা বা ঝলসানো শরীরগুলো। কিন্তু জানে না শুধু খালেদা জিয়ার বিএনপিসহ বিশ দল আর ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট !
এমন কি জামায়াতে ইসলামীকে বড় হুমকি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজ, থিংক ট্যাংক ও আইন প্রণেতারা। গত ১২ ডিসেম্বর তারিখে ওয়াশিংটনে হাডসন ইন্সটিটিউট থিংক ট্যাংক আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও ইসলামিতন্ত্র’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। হাডসন ইন্সটিটিউটের মার্কিন আইন প্রণেতা জিম ব্যাংকস বলেন, ‘জামায়াত বাংলাদেশের উন্নতির জন্য একটি হুমকি।’
গত নভেম্বরের ২০ তারিখ মার্কিন কংগ্রেসে ‘বাংলাদেশে কাজ করছে এমন ধর্মীয় সংগঠনগুলো গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ শীর্ষক একটি রেজুলেশনও জমা দেন তিনি। ব্যাংকসের মতে, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশিদের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু ইসলামপন্থী দল দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে বাধা। মৌলবাদী ইসলামিক দলগুলোকে প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।’
একই আলোচনা সভায় হাডসন ইন্সটিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক হোসেন হাক্কানি বলেন যে, জামায়াতে ইসলামীর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রেও তার সমর্থন আছে, যা অনেক বিজ্ঞজন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি বলে মনে করেন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফল বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন হোসেন হাক্কানি।
অথচ বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সহ বিশ দল আর ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবাই মিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জামায়াতে ইসলামী,খুনী-অপরাধী আর জঙ্গিদের হাতে তুলে দেবার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে মূলত চার ধরণের খুনি-আসামীর দল এবং তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। এরা হচ্ছে
(ক) একাত্তরের খুনি দল
(খ) বঙ্গবন্ধুর খুনি দল
(গ) একুশে আগস্টের খুনি দল
(ঘ) সন্ত্রাসী খুনি দল
ঠাকুরগাঁও ২ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে মাওলানা আব্দুল হাকিম। কে এই মাওলানা আব্দুল হাকিম? মাওলানা আব্দুল হাকিম হচ্ছেন তালিকাভুক্ত শীর্ষ চল্লিশ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে একজন যুদ্ধাপরাধী। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এলাকায় আল বদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনিকে সহায়তা করেছিলেন। সে সময় তিনি ছাত্র সংঘের রাজনীতির সাথে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
চট্টগ্রাম ১৫ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে আ ন ম শামসুল ইসলাম। তিনিও তালিকাভুক্ত শীর্ষ চল্লিশ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে একজন যুদ্ধাপরাধী। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আল বদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সে ছাত্র সংঘের সাবেক নেটা ছিলেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সাতক্ষীরা ৪ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে গাজী নজ্রুল ইসলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র সংঘের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিলেন।
খুলনা ৫ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনিও তালিকাভুক্ত শীর্ষ চল্লিশ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে আরেকজন যুদ্ধাপরাধী।
বগুড়া ৩ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী আসামি আব্দুল মোমেন তালুকদারের স্ত্রী মাসুদা মোমিন তালুকদার। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি আব্দুল মোমেন তালুকদার এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন।
আবার, পিরোজপুর ১ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আসামি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সন্তান শামীম সাঈদী।
(খ) বঙ্গবন্ধুর খুনি দল
বিএনপি “ধানের শীষ প্রতীক” শুধু একাত্তরের খুনীদল এবং তাদের পরিবারের হাতেই তুলে দেয়নি। “ধানের শীষ প্রতীক” তুলে দেয়া হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি পরিবারের হাতেও। রংপুর ৩ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে রিটা রহমান। এই রিটা রহমানের স্বামী মেজর (অবঃ) খায়রুজ্জামান হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় ৪ নেতার খুনি।
(গ) একুশে আগস্টের খুনি দল
নেত্রকোনা ৪ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে তাহমিনা জামান শ্রাবণী। তিনি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত আসামী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর এর স্ত্রী।
টাঙ্গাইল ২ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু নিজে খুনি-জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ মদদদাতা। আবার তিনি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী আব্দুস সালাম পিন্টুর আপন ছোট ভাই।
(ঘ) সন্ত্রাসী খুনি দল
রাজশাহী ১ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিন জঙ্গিনেতা “বাংলা ভাই”-এর জবানবন্দি অনুযায়ী জঙ্গিবাদের একজন মদদ দাতা। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের প্রত্যক্ষ মদদে রাজশাহী সহ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে।
একই রকম ভাবে রাজশাহী ২ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে বিএনপি দলীয় রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তিনি “বাংলা ভাই” গ্যাংদের গডফাদার হিসেবে কুখ্যাত এবং জঙ্গিনেতা “বাংলা ভাই”-এর জবানবন্দি অনুযায়ী জঙ্গিবাদের একজন মদদ দাতা। বিএনপি দলীয় রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর প্রত্যক্ষ মদদেও রাজশাহী সহ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে।
রাজশাহী ৫ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে নাদিম মোস্তফা। তিনি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-এর পৃষ্ঠপোষক এবং জঙ্গিনেতা “বাংলা ভাই”-এর জবানবন্দি অনুযায়ী জঙ্গিবাদের একজন মদদ দাতা। তিনিও রাজশাহীতে জঙ্গিবাদের বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
নওগাঁ ১ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে ছালেক চৌধুরী। তিনিও জঙ্গিনেতা “বাংলা ভাই”-এর জবানবন্দি অনুযায়ী জঙ্গিবাদের একজন মদদ দাতা।
নওগাঁ ৬ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে আলমগীর কবির। তিনি বিএনপি সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী। কথিত আছে তিনি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-এর একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। তিনিও জঙ্গিনেতা “বাংলা ভাই”-এর জবানবন্দি অনুযায়ী জঙ্গিবাদের একজন মদদ দাতা হিসেবে কুখ্যাত। তিনি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদের বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
চট্টগ্রাম ৪ আসনে “ধানের শীষ প্রতীক” নিয়ে লড়াই করছে ইসহাক চৌধুরী। তিনি দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতে বসে মোসাদের সাথে গোপন বৈঠক করা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই। ইসহাক চৌধুরী বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদের বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাহলে বিএনপি আশা করছে খুনিদের হাত ধরেই “ধানের শীষ প্রতীক” তাদের জন্য জয়মাল্য নিয়ে আসবে। তাদের চিন্তা-চেতনায় খুনিরাই পারবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে। দেখা যাক, ৩০শে ডিসেম্বর জনগণের রায় কোন্ দিকে যায়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)