সাইফুল্লাহ সাদেক: বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের একটি আবাসিক হোটেলে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করেন কবির আহমেদ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি এই হোটেলে আছেন। সেই সুবাদে বিএনপি কার্যালয় কবির আহমেদের খুব চেনা। বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীর সঙ্গেও তার একরকম আলাপ-পরিচয় আছে। দলটির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে ক্ষমতা হারানোর সময় পর্যন্ত দুটি বিপরীতমুখী চিত্রই দেখা হয়েছে তার। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো প্রাণহীন আর বিমূর্ষ কার্যালয় এর আগে দেখেছেন কি না মনে করতে পারছেন না কবির আহমেদ। কার্যালয়টির দিকে তাকিয়ে দেখলে সবকিছুতে কেমন যেন খাপছাড়া ভাব মনে হয় কবিরের।
প্রায় একই মনোভাব বিএনপি কার্যালয়ের পাশের ফুটপাথের চা বিক্রেতা সগিরের। একসময় ক্ষমতার ছড়ি ঘোরানো বিএনপি নেতাকর্মীদের সেই দম্ভোক্তি এখন চোখে পড়ে না বললেন তিনি।
‘খুব ঝাড়ি দিয়ে কথা বলতো। ইচ্ছা হলে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতো না। এখন এমন করে না’।
কার্যালয়ের বাইরে টাঙানো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তাদের সন্তান তারেক জিয়ার ছবিগুলোতে আগের মতো জৌলুস দেখতে পান না সগির।
‘বিএনপি অফিসের আগের মতোন হুলস্থুল অবস্থা দেহি না। নেতাগো আসতে দেহি না খুব একটা’।
কবির আহমেদ কিংবা সগিরের মতো আরও অনেকে বলছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের আগের অবস্থা এখন আর নেই, কার্যালয়ের সেই জমজমাট চেহারা হারিয়ে গেছে। একসময় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের মিলনমেলা বসতো কার্যালয়ে। কিন্তু সেই চিরচেনা ছবিটা এখন অদৃশ্য। খুব একটা কার্যালয়ে যান না কোন সিনিয়র নেতা। তাদের আনাগোনা সংবাদ সম্মেলন নির্ভর হয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনের সময়ই তারা আসেন। শেষ হলে কার্যালয় ত্যাগ করেন। ক্ষমতার পালাবদল যে কতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার সম্মুখ দৃষ্টান্তই যেন দেখতে পাচ্ছেন সবাই।
কার্যালয়ে প্রবেশ মুখেই এই পরিস্থিতির প্রমাণ মিলল। ওপরে উঠার জন্য পুরানো সেই সরু সিঁড়ি। সিঁড়ির দু’পাশে লেপ্টে আছে ময়লা, পানের পিক, আর সিগারেটের খণ্ডিত অংশ। গন্ধ আটকাতে নাক চেপে তিন তলায় উঠতে দেখা গেলো কয়েকজনকে। সংবাদ সম্মেলনের কক্ষটির চেয়ার-টেবিলগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফাঁকা পড়ে আছে। কক্ষটির এক কোণায় বসে দুয়েকজন ঝিমুচ্ছেন। ভেতরের কক্ষে যেতেই কয়েকজন নেতাকর্মীর দেখা মিলল।
খানিক পরে দেখা মিলল কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আব্দুল আউয়ালের। তিনি বলছিলেন, ‘অফিসে সবসময় নেতাকর্মীদের কোলাহল থাকে। আজ ম্যাডামের কোর্টে হাজিরা ছিলো। সবাই সেদিকে ব্যস্ত বলেই অফিস ফাঁকা মনে হচ্ছে। তবে এটা সত্য যে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা। কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন থাকলে অনেকেই কার্যালয়ে আসতে সাহস করে না। দেশটি তো আদতে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত’।
একটু পরই আসলেন জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে। বসে বসে পত্রিকা উল্টাচ্ছিলেন তিনি।
বিএনপি কার্যালয় কি প্রতিদিন এমনই ফাঁকা থাকে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবসময় জমজমাট থাকে। দুপুরে খাবারের বিরতিতে কম থাকে। তবে সকালে গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো। অনেককে ঢুকতে দেয়নি। তাই আজ একটু নেতাকর্মী কম। স্বভাবত অফিস কখনো খালি থাকে না’।
কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের প্রস্তাবিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামও গাইলেন নিজেদের কার্যালয়ের স্তুতি।
‘সবসময় পরিপূর্ণ থাকে অফিস, ম্যাডামের হাজিরা আছে বলে সবাই ওখানে গেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় বরং নেতা-কর্মীরা কার্যালয়মুখী ছিলো না। মাঠে-ময়দানে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। এখন নেতাকর্মীদের তেমন কোন কাজ নেই। তাই কারণে-অকারণে কার্যালয়ে আসেন’।