প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যখন গণতন্ত্রহীনতা, হত্যা, গুম, খুনের কথা বলে তখন মনে হয় তারা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে না। নিজেদের আসল রূপ দেখে না। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার কেড়ে নেয়ার সূচনা করেছিলো জিয়াউর রহমান। দেশে অগনতান্ত্রিক ধারার শুরু করেছিলো জিয়া অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে জেলহত্যা দিবসে উপলক্ষ্যে এক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বেহেশত থেকে তা দেখে বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের জাতীয় চার নেতার আত্মা শান্তি পাবে।
আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে কেউ সফল হয়নি, হবেও না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীনতা এনেছি। একে অর্থবহ করতে হবে। জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মীকে হত্যা করেও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। যে দল মাটি মানুষের কথা বলে উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্ষমতাদখলকারীরা এর ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষমতা বাংলাদেশ রাখে। এসময় সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারানোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা পারি এটা ক্রিকেটে দেখালাম। মাত্র তিন দিনেই খতম। তারাও দেখলো বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারর কেমন হুঙ্কার দিত পারে। বিজয় আনতে পারে।
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা-ক্যু বারবার হয়েছে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিপারে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা-ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে রাজাকরদের হাতে পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান এর শুরু করেছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে অবৈধ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সংঘটিত হত্যা-ক্যুর কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আসা খন্দকার মোশতাকের সরকার ছিলো অবৈধ সরকার। রেডিওতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে এরপরে আসলো আরেক অবৈধ সরকার। এই বাংলাদেশে ১৯ বার ক্যু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসার, আওয়ামী নেতা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতার ফলে বারবার ক্যু হয়েছে। সেনাবাহিনীর অনেক অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের অপরাধ তারা জানে না। বিমান বাহিনির ৫৬২ জন অফিসার হত্যা করা হয়েছে।
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও জিয়া জামায়তকে সুযোগ দিয়েছিলো।
স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোটদানের ক্ষমতাও জিয়া ফিরিয়ে দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যে চেতনার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিলো তার একেবারে উল্টোপথে তারা দেশকে পরিচালিত করেছিলো।
‘জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন’-এমন দাবির বিরোধীতা করে তিনি বলেন, অনেকেই বলে জিয়া গণতন্ত্র এনেছে। জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময় প্রতিরাতেই কারফিউ ছিলো। জিয়া কি কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিলো? এটা কেমন গণতন্ত্র?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধাবি ছাত্রদের হাতে পুরস্কারের সাথে সাথে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া শুরু করেছিলো জিয়া।”
খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সমালোচনা
বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ লুট করে খালেদা জিয়া ও তার পুত্ররা সম্পদের পাহাড় গড়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান নাকি কিছু রেখে যায়নি ভাঙ্গা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া। তাহলে তাদের পরনে ফ্রেঞ্চ শিফন, ইতালিয়ান ফার্নিচার, শতশত কোটি টাকার বিলাস বসন আসে কিভাবে? নাকি জিয়ার ভাঙ্গা স্যুটকেস জাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিলো। হাত বাড়ালেই সব কিছু পাওয়া যেতো।
“এই সম্পদ বাংলাদেশের জনগণের।”
খালেদা জিয়া এবং তার পুত্রের দুর্নীতির উল্লেখে আমেরিকা-সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং কেসে তাদের বিচারের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। “খালেদাতো এতিমের টাকা চুরি করে।” দাবি করে তিনি বলেন, কোর্টে হাজিরা দিতে ভয় পায় খালেদা। মনে অপরাধ বোধ না থাকলেতো মামলা মোকাবেলা করতে ভায় পাওয়ার কথা না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০০১ এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের অত্যাচারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর মতো বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী মেয়ের অত্যাচার, গণধর্ষণ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রাস্তায় মিছিলে নারীসহ নেতাকর্মীদের অত্যাচার করা হয়েছে।
বেইমানের ঘরের সন্তানেরাতো বেইমানীই শিখবে
’৫৮ এর পর এবং ’৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ দল ত্যাগকারীদের জিয়াউর রহমান দলে ভিড়িয়েছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় এদের কথা শুনে হাসি পায়। বেইমানের ঘরের সন্তানেরাতো বেইমানই শিখাবে।
১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।