আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোট ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাটের হার দেড় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এতে ছোট ফ্ল্যাট কেনার খরচ বেড়ে যাবে। স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবিত বাজেটের পর আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানান।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দেয়া হলেও সেসবের কিছুই রাখা হয়নি প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে। বরং যেসব প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, তাতে নিম্ন ও মধ্য বিত্তরা আবাসন বিমুখ হবে। কারণ ফ্ল্যাট নিবন্ধের ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাবে ছোট আকারের ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে পারে। এতে এই শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, রেজিষ্ট্রেশন ফি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে সেখানে কি করা হয়েছে তা এখনও আমরা জানিনি। জেনে সংবাদ মাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে। সরকারের কাছে কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হবে।
তবে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাটের হার বাড়ানোর প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে কিছুটা সমস্যা হবে। ছোট ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এটি বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে, আগামী অর্থবছর থেকে ছোট ফ্ল্যাট (১ থেকে ১১০০ বর্গফুট) কেনায় খরচ বাড়তে পারে। কারণ আগে এ ধরনের ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাট ছিল দেড় শতাংশ, আগামী বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ শতাংশ।
অন্যদিকে মাঝারি আকারের (১১০১-১৬০০ বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনার খরচ কমতে পারে। এক্ষেত্রে ভ্যাটের হার আগে ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে এই ধরনের ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
অবশ্য বড় ফ্ল্যাট (১৬০১ থেকে বেশি) নিবন্ধনের ভ্যাট হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে।
এছাড়া যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন তাদেরও খরচ বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনঃনিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সাধারণত ছোট আকারের ফ্ল্যাটই বেশি কেনাবেচা হয়। কিন্তু এ ধরনের ফ্ল্যাটেই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আমি মনেকরি এটা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক।
সংগঠনটির প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাজেটে প্রত্যাশার কিছুই পাওয়া যায়নি। ছোট ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাট কেনার প্রতি বিমুখ হবে।
তিনি বলেন, ছোট ফ্ল্যাটের খরচের বিষয়টি বিবেচনা করা অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ মাঝারি ফ্ল্যাটে সুবিধা দেয়া হলেও এর সুফল বেশি পাওয়া যাবে না।
বাজেট বিষয়ে দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে করে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান আবাসন খাতের এই ব্যবসায়ি।
শুধু ফ্ল্যাটের ব্যয় বৃদ্ধি নয়, ফ্ল্যাট কেনার পর ঘর সাজানোর আসবাবপত্র কিনতে গেলেও আগামী অর্থবছর বাড়তি চাপে পড়তে পারে ক্রেতারা।
২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আসবাবপত্র উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে আসবাবপত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী অর্থবছর থেকে তা ৭ শতাংশ হারে প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। আর বিপণন পর্যায়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট পরিবর্তন করে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয় বাজেটে। এটিও ফ্ল্যাট বা আবাসন ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাক বাজেট আলোচনায় অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ সুবিধার পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে আবাসন খাতে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করার দাবি জানিয়েছিল রিহ্যাব। অর্থাৎ, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি, গেইন ট্যাক্স কমিয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা, সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎসে কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে ৫ বছরের ডেভেলপারদের অব্যাহতি এবং আবাসন খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক অংক সুদে দীর্ঘমেয়াদী পুন:অর্থায়ন চালু এবং ২০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনসহ মোট ১২টি প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।