বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ‘খুন’ বলেই আদালতে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড ওই ঘটনাকে আমি ‘দুর্ঘটনায় মৃত্যু’ বলতে চাই না, এটাকে আমি বলব ‘খুন’।
‘কারণ, শিক্ষার্থীরা ওই সময় রাস্তার পাশে নিরাপদ দূরত্বে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখন বাস চালক বেপরোয়া ভাবে বাসটি চালিয়ে রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর উঠিয়ে দেয়।’
একপর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ঘটনার মর্মান্তিক ছবি দেখান রিটকারি এই আইনজীবী।
আদালতকে তিনি আরো বলেন, ‘মাই লর্ড। এমন না যে ওই শিক্ষার্থীরা রাস্তা পার হচ্ছিল বা রাস্তার মাঝে ছিল। শিক্ষার্থীরা তখন রাস্তার থেকে উপরে নিরাপদ স্থানে ছিল। তার পরেও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে যেটা করা হল সেটা এক কথায় ‘খুন’। আর এরকম ঘটনা এখন আমরা একের পর এক দেখছি।’
এরপর হাইকোর্ট নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের এক সপ্তাহের মধ্যে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা দিতে বাস মালিককে নির্দেশ দেন। এবং ওই ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি তার খরচও মালিককে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সাথে নিহতের দুই পরিবারকে কেন দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আর ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন আগামী ২ মাসের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আর গাড়ির চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয় এবং সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ কী পদক্ষেপ নিয়েছে? সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বিআরটিএ’কে নির্দেশ হাইকোর্ট। এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামি ১২ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে রাজধানীর র্যােডিসন হোটেলের উল্টো দিকে কুর্মিটোলায় ফ্লাইওভারের ঢালে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির দিয়া খানম। এঘটনায় আহত হন আরও কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী একদল শিক্ষার্থী ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় মিরপুরের দিক থেকে আসা জাবালে নূর বাসটি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর উঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় নিহত এক শিক্ষার্থীর বাবা মামলা দায়ের করেছেন। এরই মধ্যে ওই বাসের ড্রাইভার-হেলপারসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
আর ওই ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সোমবার হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক), বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি এবং জাবালে নূর পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়। সে রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্ট রুল সহ একাধিক আদেশ দেন।