বিশ্বজুড়ে বাল্যবিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, গত দশ বছরে আড়াই কোটির মতো শিশুর বিয়ে থামানো সম্ভব হয়েছে। এক দশক আগে পর্যন্ত প্রতি চারজনে একজন মেয়ের বিয়ে হতো ১৮ বছরের কম বয়সে। বর্তমানে তা কমে প্রতি পাঁচজনে একজনে এসেছে। অর্থাৎ কন্যাশিশুর বিয়ের হার গত দশ বছরে কমেছে ১৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ এ তথ্য জানায়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাল্যবিয়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে জানিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের প্রসঙ্গ টেনে ইউনিসেফ বলেছে, ভারতে এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়েছে মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি করে প্রচারের মাধ্যমে।
বাল্যবিয়ের বোঝা এখন সাব-সাহারান আফ্রিকা বা সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর ওপরই বেশি। অঞ্চলগুলোতে আগের চেয়ে অবস্থা আরও খারাপের দিকে। দশ বছর আগে সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রতি পাঁচটি বিয়ের একটি ছিল বাল্যবিয়ে। আর এখন সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি তিনটিতে একটি।
দেশগুলোতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াটাও খুব বেশি প্রয়োজন বলে জরিপের ভিত্তিতে ইউনিসেফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে সেটি বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
পুরো পৃথিবীতে আফ্রিকা অঞ্চলেই বর্তমানে বাল্যবিয়ের সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করলেও সংস্থাটি জানিয়েছে, এরপরও আগের চেয়ে আফ্রিকার কিছু দেশে উন্নতি হয়েছে অনেক। অতীতের তুলনায় ইথিওপিয়া বাল্যবিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছে।
এই পরিবর্তন সম্পর্কে ইউনিসেফের জেন্ডার বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা অঞ্জু মালহোত্রা বলেন, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে যে কোনো হ্রাসের খবরই সুখবর। কিন্তু এখনো অনেক দূর যেতে হবে।
‘যখন একটা মেয়েকে ছোটবেলায়ই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়, তখন সে একই সঙ্গে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক ও চিরকালীন কুপ্রভাব ভোগ করতে শুরু করে,’ বলেন তিনি, ‘একদিকে তার লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ যেমন কমে, অন্যদিকে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হওয়া এবং গর্ভবতী অবস্থায় সংকটের মুখে পড়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’
এছাড়া সমাজেও বাল্যবিয়ের বিশাল প্রভাব রয়েছে বলে জানান অঞ্জু মালহোত্রা। এর ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দারিদ্র্য বৃদ্ধি ঝুঁকিও বাড়তে তাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে বাল্যবিয়ে নির্মূলের শপথ নিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা দরকার বলে মনে করছেন মালহোত্রা, ‘যেন বিশ্বের কোটি কোটি মেয়েশিশুর কাছ থেকে আর তাদের শৈশব ছিনিয়ে নেয়া না হয়’।