এমন এক দলের মুখোমুখি হতে চলেছেন লিওনেল মেসি, যাদের বিপক্ষে কখনোই গোল পাওয়া হয়নি তার। দলের প্রাণভোমরার এমন পরিসংখ্যানে যদি খানিকটা অস্বস্তিতে থাকে বার্সেলোনা, সেটি বাড়তে পারে আরও একটি পরিসংখ্যান ভেবে। প্রায় অধরা থেকে যাওয়া স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ গেরোও যে খুলতে হবে কাতালানদের।
মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে চেলসির পাশাপাশি আর্নেস্টো ভালভার্দের দলকে জয় করতে হবে ব্লুজদের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজকেও। অনেক কঠিন প্রতিপক্ষের মাঠে হেসেখেলে জয় পেলেও এই মাঠ যেন খেই হারিয়ে ফেলে বার্সা। ২০০৬ সালের পর চেলসির মাঠে যে জয়ের দেখা পায়নি স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটা নিজেদের ঘরে নিয়ে গেছে বার্সা। এসময়ের মধ্যে বারোবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে বার্সা-চেলসি। কিন্তু জয়ের পাল্লাটা হেলে চেলসির দিকেই। ৩ হারের বিপরীতে ৪ জয় ব্লুজদের। যার তিনটি জয়ই এসেছে ঘরের মাঠে।
পরিসংখ্যান দিয়ে যে মাঠের খেলা জয় করা সম্ভব নয়, সেটাও অবশ্য ভালই জানা চেলসি কোচ অ্যান্থনি কন্তের। লিগে নিজের দলের অবস্থা খুব একটা আহামরি নয়। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও চলতি লিগে ব্লুজরা পড়ে আছে টেবিলের চারে। একটু হোঁচট খেলে ফসকে যেতে পারে আগামীর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলার স্বপ্নও।
বার্সা ম্যাচের আগে কন্তের মাথায় বন্দুকের মত তাক করা আছে বরখাস্তের হুমকিও! ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পথ হারালে চাকরিটাও হাতছাড়া হতে পারে ইতালিয়ান কোচের। তাই মুখে না বললেও বার্সার বিপক্ষে জয়ের জন্য বেশ মরিয়া কন্তে।
জয় পেতে সবার আগে বার্সার আক্রমণভাগের দাঁতটা ভোতা করে দিতে হবে। সেটা অনেকখানিই সহজ হয়ে যাবে কেবল মেসিকে আটকাতে পারলে। সেজন্য ধমনিতে ইতালিয়ান রক্ত বয়ে যাওয়া কোচ প্রয়োগ করতে পারেন ইতালিয়ানদের চিরাচরিত অস্ত্রই, যার নাম জমাট রক্ষণ। ২০১২ সালে এই রক্ষণ দিয়েই চেলসিকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন হঠাত কোচের দায়িত্ব পাওয়া আরেক ইতালিয়ান রবার্তো ডি মাত্তেও। সেবার সেমিতে ফণা তোলার আগেই মেসির বিষদাঁতকে অকেজো করে দিয়েছিল ব্লুজরা।
তবে বর্তমান সময়ের সেরা ফর্মে থাকা বার্সাকে কেবল রক্ষণঅস্ত্র দিয়ে আটকানো সম্ভব কিনা সেটা নিয়েও থাকছে প্রশ্ন। চলতি মৌসুমে লা লিগায় এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি ভালভার্দের দল। কেবল মেসিকে আটকালেই যে ঠেকে থাকবে স্প্যানিশ জায়ান্টরা, সেটাও কিন্তু নয়। আর্জেন্টাইন মহাতারকার পাশাপাশি দারুণ ফর্মে আছেন তার উরুগুয়ে সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ। খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার পাউলিনহোও।
শিষ্যদের প্রতি ভাল ধারণা আছে বলেই হয়ত চেলসিকে খুব পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না ভালভার্দে। লিগে টানা দুই ড্রয়ের পর শনিবার এইবারের বিপক্ষে জয় পাওয়ার স্মৃতি নিয়ে লন্ডনের দলটির প্রতি ছুঁড়েছেন কথার তীর, ‘আমি চেলসিকে পরোয়া করি না।’
পরোয়া করেন বা না করেন; আসরের নাম যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তখন দলকে সাবধানেই খেলাতে হবে ভালভার্দেকে। নইলে পরিণামে কী হতে পারে সেটা যেন পরিষ্কার করে দিয়েছেন চেলসির সাবেক খেলোয়াড় অ্যান্থনিও রুডিগার, ‘এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আপনি হয়ত হাসছেন, কিন্তু জানবেনও না কখনো কী হয়ে যাবে! বিশ্বাস না হলে কথাটা লিখে রাখুন!’