চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাবা (পর্ব উনিশ)

আর ইউ নভেলিস্ট! আর ইউ স্যুররিয়ালিস্ট! না। আমি নভেলিস্ট নই। শুনেছি আপনি অন্ধ। হ্যাঁ। আমি চক্ষুষ্মান নই। ফারুক সামান্য হাসে। বলে- অন্ধের কাছে বর্তমানই তো অন্ধকার সমুদ্র। কেমন করে সে দুরের ভবিষ্যতকে দেখবে। পীর বড় বিষণ্ণ। বললেন যথার্থ বলেছেন আপনি। আমি সেদিন থাকব না। আজ যেমন অন্ধ। তেমনি সেদিন তলিয়ে থাকবো কবরের অনন্ত অন্ধকারে। কিন্তু সবই দেখব আপনার অভিজ্ঞতার পরিক্রমায়। আমি ভবিষ্যতকে দেখতে পাচ্ছি আপনাদের কর্ম্মের প্লান-গ্রাফ শুনে। যেদিন আপনার জিহবা বেরিয়ে আসবে বাইরে; আমাকে শরণের ফুরসতও আর মিলবে না। পীরসাহেব ফারুকের হাতে তাবিজ তুলে দিলেন। বললেন-মানুষের অদম্য মুর্খতা হল-সে ভবিষ্যতকে জানতে পীরের শরণ নেয়। তাবিজ কেবলই বিশ্বাস। অন্ধ বিশ্বাস। ভবিতব্যের নির্দেশ মানুষের কর্মে। কর্মফলও মানুষের কর্মে। মানুষ তার বর্তমান কর্মকে পর্যালোচনা করলেই ভবিষ্যতকে জানতে পারে। এজন্য পীরদের দরকার নেই। ফারুক খুব বিবশ বোধ করতে লাগলো। দেখল বেড়াল দুটি হুজুরের কথায় দাত কেলিয়ে হাসছে। পীর লোকটার কি দুঃসাহস। পিস্তলের উত্তপ্ত সীসার গন্ধ পাচ্ছে। অথচ কি ক্লেশহীন চিত্তে কথাগুলো বয়ান করল। কোন ভয়ডর নেই।

এসব কথাই কি পীরদের পাবলিসিটি স্ট্যান্ট! দু:সাহস না দেখালে পীরদের পীরালিই তো থাকে না। মুখ থেকে আধখানা জিহবা বাইরে বেরুনো-কি বোঝাতে চাইল লোকটা। জিভ বেরুনো কল্পচিত্রটি কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছে না ফারুক। ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে আগে কি কখনও শুনেছে। ছোটবেলায় দাদাজান আইজ্জা-মাইজ্জাকে নিয়ে কি যেন একটা ছড়া বলতেন। আইজ্জা-মাইজ্জা দুই ভাই/ সারা দুন্নই ভাইজ্জা খাই। আইজ্জা-মাইজ্জা অতি বদ/ মানুষের জন্য মহাবিপদ।আইজ্জা-মাইজ্জার ঐক্য/শয়তান আর দানবের সখ্য। দাদাজানের সেই আইজ্জা-মাইজ্জাই কি তবে ইয়াজুজ-মাজুজ। রশীদের সঙ্গে জুটি বেধে সে কি সেই আইজ্জা-মাইজ্জার পার্ট করতে চলেছে। আলীশান ট্যাঙ্ক নিয়ে ফারুক এখন ঢাকার রাস্তায়। চাকা গড়াচ্ছে। এগুচ্ছে ধানমন্ডি-মিন্টো রোডের দিকে। জিভটা নিয়ে মস্ত বিপদই হয়েছে। কোনভাবেই ভেতরে সেধানো যাচ্ছে না। কী মুশকিল। এই ফায়ার-স্কোরিং মিড নাইটে ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকলে চলবে না। হি মাস্ট কাম আউট ফ্রম ফ্যানটাসি এন্ড গেট ইন হার্ড রিয়ালিটি। আর্মস রেভিউলিউশন একটি ধাতব সত্য। মেটাল ট্রুথ। এই সময়ে পীরালি ইন্দ্রজালের মধ্যে আটকা থাকলে ফারুকের চলবে না। তার জিহবা বেরুবে কেন। বরং আজই সে অন্য সকলের জিহবা টেনে বের করবে। এমন হাল করবে-পানি পানি বলে চিৎকার করেও লাভ হবে না। কারবালায় হাসান হোসেনই পানি পান নি। এরা তো কোন ছার! সামনে যা আসবে সব ট্যাঙ্ক আর মর্টারের গোলা মেরে ফর্দাফাই করে দেবে। আজ যদি হিমালয় পর্ব্বতও এসে সামনে দাঁড়ায়-ট্যাঙ্কের চাকায় সব গুঁড়িয়ে দেবে। সব বিধ্বংস।

আজ রোজ কেয়ামত হবে ঢাকাতে। নো মার্সি। আকাশে বাতাসে , শেখ মুজিবের নিজস্ব প্রাসাদে সর্বত্র গোলাবারুদ নিক্ষেপ করবে। ব্লাডি রক্ষীবাহিনী আসুক; মুজিবপ্রেমী আর্মি আসুক,সব ট্যাঙ্কের চাকায় বিধস্ত করবে। এয়ারফোর্স আসুক,গোলা মেরে ধ্বংস করবে। টগবগ করছে ফারুক। তার জিহবা কেন বেরুবে! সে কেন অভিশপ্ত হবে। আর্মিরা রিবেলদের ঠেকাতে আসবে না। জেনারেল জিয়ার সঙ্গে পাকাপোক্ত বাতচিৎ হয়েছে। তার অবস্থান পরিষ্কার। হি ইজ দি কন্ট্রোলার অব আর্মড ফোর্সেস। সফিউল্লাহ ইজ গুড ফর নাথিং। লাফিং পার্সন।জিয়া পরিষ্কার গ্রিন সিগনাল দিয়েছে। দুদিন বাদেই সেই হচ্ছে চিফ অব আর্মি স্টাফস। সদরে আর্মস ফোর্সেস। তার দোয়া-বরকত মিলেছে। ফারুকের নিজ কানে শোনা অর্ডার-গো এহেড মাই জুনিয়রস। জুনিয়ররা তোমরা এগিয়ে যাও। জিয়া সিনিয়র বলে সিনে থাকছে না। সিনিয়ররা নানাভাবে নানা কমিটমেন্টে জড়িয়ে থাকে। ভদ্রতা, সোশ্যাল এন্ড অফিসিয়াল কানেকশন বলে একটা ব্যাপার আছে। রেভিউলিউশন কখনওই সিনিয়ররা করে না। দুনিয়ার সব পরিবর্তন সবসময় অনুর্ধ বত্রিশের হাতেই হয়েছে। সিনিয়র দিতে পারে শেল্টার। তারা দেবে বৈধতা। জুনিয়র যতবড়ই অঘটন ঘটাক,যত বড় বেয়াদবি করুক,সিনিয়ররা সেটা জাস্টিফাই করবে। ইনডেমনিটি দেবে। এস্টালিস্টমেন্ট দেবে। জিয়ার কথা সত্য। তারপরও সানগ্লাস টু স্টার জেনারেলকে বড্ড শ্রুড এন্ড কানিং মনে হয়েছে। কানিং মানে তো অতি আলগা-চালাক। শ্রুড বাংলাটা কি! তুখোড় ধুরন্ধর। আততায়ী তীরন্দাজ। সে এমনভাবে তীর মেরে লক্ষ্যভেদ করবে, কেউ তাকে দেখতে পাবে না। জুনিয়রের মাথায় কাঠাল রেখে ভেঙ্গে খাওয়া। সিনিয়র জেনারেলের এমনই হওয়া দরকার। সে সব সময় প্রতিপক্ষের সঙ্গে থাকবে। গা ঘেষে থাকবে। বাকশালে থাকবে। শেখ মুজিবের দুপা পেছনে থাকবে। কিন্তু যখন প্রতিবিপ্লব সমাপ্ত; তখন সেই এন্টি রেভিউলিউশনকে বিপ্লব বলে আখ্যা দেবে। এস্টাবলিশমেন্ট দেবে। সব ওয়াদাই কবুল করেছে টুস্টার। ভঙ্গিটা কেবল ধরি মাছ না ছুই পানি। এই যা। তারপরও কেন অভিশপ্ত হবে ফারুক-রশীদ কোম্পানি! পীর লোকটা অতিশয় ভন্ড। পীরালি মানেই ভন্ডামি। ওরা গাছের আগারটা খায়। তলারটাও কুড়ায়। বাদ দেয় না কিছু। বেটা তাবিজ কবজও দিয়েছে। আবার বয়ানও দিয়েছে। তার চালাকি অতি পরিষ্কার। এটা নাহলে ওটা। রিবেল গং সাকসেসফুল না হলে বলবে, বলেছিলাম না জিহবা বেরুবে।

এস্ট্রালজারদের মত ওরা সব অপশনই বলে রাখে। জিহবা বেরুনোর কোন আশঙ্কাই ফারুক দেখছে না। রশীদ স্বয়ং আওয়ামী লীগপার্টির এক ফাউল পাবলিক জেনারেল এবং আর্মি জেনারেলের কাছে থেকে পাকা কথা আদায় করে রেখেছে, ব্লাডশেড এবং অভ্যুত্থানের পর পরই তাদেরকে ইনডেমনিটি দেয়া হবে। চিরস্থায়ী মার্জনা। কখনও কোন আদালতে তাদের বিচার হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত না। মার্শাল কিংবা সিভিল। তারা সব আদালত ও আইনের উর্ধ্বে।দে আর এবাভ ল এন্ড কান্ট্রি। সব শর্ত মঞ্জুর। কোন ফাঁকি ঝুকি নেই। জিহবা তাদের কেন বেরুবে। কে বের করবে। ট্যাঙ্কের চাকা আর কামানের গোলায় সব মিসমার করে দেবে। টোটাল ম্যাসাকার। শেখ মুজিবের নামনিশানা দুনিয়ার বুকে থাকবে না। মুজিব খান্দানের চিরাবসান হবে। নাজাত মিলবে। গোলাম পাকিস্তানিও তাদের সঙ্গে শামিল রয়েছে। অ্যারাব ওয়ার্ল্ডে সে দুর্ধর্ষ কাজ করে চলেছে। ব্লাডি ফাকিং পাবলিক লিডারদের মধ্যে গোলাম একটা মস্ত জিনিয়াস। সে ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট পাক-ই-স্থানের কনফেডারেশনের জন্য তদবির করে চলেছে। ফারুকের বুকের ভেতর অথৈ আনন্দ হট্টগোল করে ওঠে। মুজিব একটা গাদ্দার। হিন্দুস্থান কা এজেন্ট। কিসের স্বাধীন বাংলাদেশ। ইস্ট পাকিস্তানের এই স্বাধীনতা কেউ চায় নাই। সব হিন্দুস্থানি চক্রান্ত। সব হিন্দুস্থানি কায়কারবার। জমহুরিয়া পাকিস্তানই ছিল মহাউত্তম। দেশকে মুজিবমুক্ত করতে হবে। মুজিবিখান্দানমুক্ত করতে হবে। ফ্রিডম ফ্রম মুজিব। বিশ্বাসঘাতক। পাকিস্তানের সঙ্গে বেইমানি করেছে। পিন্ডির গাধাগরু আর্মিশাহীর সঙ্গে চালবাজি করে পাকিস্তানকে দুই টুকরা করেছে। ইয়াহিয়া বাঞ্চোতকে আস্ত একটা ডাংকি বানিয়ে ছেড়েছে। শেখ মুজিবের এই মুজিবি বুঝতেই পারে নাই পিন্ডি। শালারা মাগীবাজ। রান্ডিবাজ। মদবাজ। ইয়াহিয়া ডাংকিটার দুদিক থেকে দুকান ধরে টেনেছে শেখ মুজিব আর ব্লাডি-ভুট্টো। মাঝখান থেকে পাকিস্তান ভেঙে খান খান। দুই টুকরা। এখন এই মুজিবশাহী অসহ্য। এখন দরকার বিপ্লবী সরকার।এই বিপ্লব হবে দুই মুসলিম মিল্লাত ও জমহুরিয়ার ঐক্যের। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন হবে। দুই বাহু জমহুরিয়া হবে।

একটি পাখির যেমন দুটি পাখা থাকে। টু স্টেটস অব পাক-ই-স্থান। পশ্চিমে হিন্দুস্থানের মাথার ওপর পাকিস্তান। আর পূবে হিন্দুস্থানের আন্ডাদুটির তলে ইসলামিক রেভিউলিউশনারী জমহুরিয়া অব বাংলাদেশ। এখানে বসে আন্ডা চিপে দিতে হবে। অন্ডকোষকে ছোটবেলায় ফারুকরা যেন কি বলতো! ওল না ওলান! দুই হাতে দুই বিচি ধরে টান। মালাউনের ইন্ডিয়া তীব্র যন্ত্রনায় ককাঁবে। চেচাঁবে। ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ইন্ডিয়ার মুন্ডু কেটে ফেলতে হবে। খন্ড বিখন্ড করা হবে হিন্দুস্থানকে। কাশ্মীর, পাঞ্জাব,তামিলনাডু ,রাজস্থান সব স্বাধীন হয়ে যাবে। বিচ্ছিন্নতার পথে হিন্দুস্থান। ফারুকের মনে দারুন আনন্দ। খুব খোশ। ইচ্ছে হচ্ছে ঠা ঠা করে হাসে। ফারুক একপর্যায়ে অট্টহাস্য করে উঠল। মধ্যরাতের অমানিশায় রক্ত হিম করা হাসি। পাকিস্তানের সঙ্গে নয়া কনফেডারেশন করা গেলে সবই সম্ভব।রশীদের মস্তকেও জয়েন্ট জমহুরিয়ার জবরদস্ত প্লান রয়েছে। জয়েন্ট ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। এখানে ইসলাম ধর্মকে পারপাজফুলি ট্রেডিং করা গেলে পাবলিক সেন্টিমেন্টও অটোমেটিক তাদের পক্ষে চলে আসবে।

এরমধ্যেই প্রচুর কাজ করেছে গোলাম পাকিস্তানি। এই মাস্টারপ্লান নিয়েই টু স্টার জেনারেল ও মেজররা এগুচ্ছে। ফিল্ড প্রস্তুত। এখনই মেশিনগানের গোলায় সব লন্ডভন্ড করতে হবে। মাথা কেটে ,আন্ডা কেটে সব ছিন্নভিন্ন করা হবে। বিভিন্ন ইসলামি ট্রেডার্স, গোলাম পাকিস্তানি, গুমনাম মুসলিম লীগ লিডার্স, সবাই তাদের সঙ্গে। না, পীরবেটা অতিশয় ভন্ড। জিভ বের হওয়ার কোন আশঙ্কাই ফারুক দেখছে না। আর্মির মধ্যেও ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান দরকার। খোলনলচে পাল্টাতে হবে। প্রো-ইসলামি জমহুরিয়া-রেভিউলিউশন আর্মি ফোর্স চাই। লিবিয়ার গাদ্দাফির মত লোহার মানুষ চাই। মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসারদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা মুজিবভক্ত। তারা রিলিজিয়াস ;কিন্তু রিলিজিয়ন ট্রেডার নয়। ফারুকদের আল্লাহভক্ত মোল্লাহ দরকার নেই। তাদেও দরকার মুল্লাকি-পনায় দক্ষ মোল্লা। পাওয়ার পেলে সব বদলাতে হবে। লিবারেশন অফিসারদের খতম করতে হবে। সব ক’টা প্রোইন্ডিয়ান। জেনারেল জিয়াকে বিশ্বাস করা যায়। মুজিবভক্তিতে সে দাগী নয়। সে হচ্ছে মওকা-বাজ। যদ্দুর শুনেছে সে তার মতই ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা। ফারুক নিজে যেরকম শেষ মুহুর্তে পক্ষ বদল করে মুক্তিযোদ্ধা তকমা লাগিয়ে নিয়েছে। জিয়াও তেমনি হাওয়াই মুক্তিযোদ্ধা। এই হাওয়াই মিঠাই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারররা আজ ঐক্যবদ্ধ। রশীদ সত্যি কাজের কাজটা করেছে। কিসের মুক্তিযুদ্ধ। কিসের ফ্রিডম ফাইটার। সব চক্রান্ত। সব কনসপ্রিসি। সব প্রোইন্ডিয়ান গাদ্দার। যেসব ফ্রিডম ফাইটার আর্মি অফিসার ইন্ডিয়ায় ট্রেনিং নিতে গেছে, সবগুলোর ব্রেনওয়াশ করে দিয়েছে শিখ পাঞ্জাবিরা। শিখ সেই জেনারেল উবান বাষট্টি সাল থেকে আগরতলায় ট্রেনিং দিয়ে চলেছে। এগুলো সব গাদ্দার হয়ে গেছে। আগরতলার ট্রেনিং ক্যাম্পে মালাউনরা শুকরের মাংস খাইয়ে দিয়েছে। কচ্ছপের মাংস খাইয়েছে। ইন্ডিয়ান ঈগলের মাংস খাইয়েছে। এই ফ্রিডম ফাইটারগুলোর খুন বদল গিয়া। ওদের খুন নাপাক হারাম হয়ে গেছে। মালাউনের কাম। ওরা ব্রেন ওয়াশ করেছে অতি গোপনে। কিসের ফ্রিডম ফাইটার! খালি ফুটফাট! আকাশে দুচারটা গুলি মারলেই কি ফ্রিডম ফাইটার হওয়া যায়। ফারুকের মুখ ও হৃদয় বেদনায় নীল হয়ে যায়। এইটা তো ইনডিপেডেন্স না। এটা একটা সিজারিয়ান অপারেশন। ফারুকের পেটে খলবল করে বিবমিষা। আরেকটু হলেই এটা অ্যাবরশন হতে পারতো। ফারুকের মুখটা তেতো হয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে আসে তিতকুটে জিভ। নাহ! এটা বেসিক্যালি এবরশনই। ইলিগ্যাল এন্ড ইম্পসিবল অপারেশন। বাঞ্চোতগুলো ইন্ডিয়ার এই কনসপ্রিসি বুঝতে পারে নাই। আকাট মুর্খ। আস্ত গর্দভ। আরে, পাকিস্তান আর্মির বাল-কর্তনও ইন্ডিয়ান শুয়োর-কচ্ছপখোর আর্মির সাধ্য নয়। একটা পাকিস্তানির সঙ্গে দশটা ইন্ডিয়ানেরও পারার কথা নয়। সব ষড়যন্ত্র ।

ষোলই ডিসেম্বর নাকি বিজয় দিবস। ডাইলের বিজয় দিবস। শালার পুতেরা এখন কি করে! ইন্ডিয়ান আর্মির ইস্টার্ন কম্যান্ড ষোলই ডিসেম্বর ভিকটরি ডে পালন করে। এটা ভাবলেই ফারুক দিলের মধ্যে বেয়োনেটের খোঁচা খায়। খুব রক্ত ক্ষরণ হয়। বালছালের ভিক্টরি ডে। আরে, ইস্টার্ন ওয়ার ফিল্ডে টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড ইন্ডিয়ান ওয়্যার কিল্ড।বিশ হাজার মালাউন আর্মি খতম করেছে পাকিস্তান। লেকিন, পাকিস্তানি আর্মির কয়জনকে শিখরা খতম করতে পেরেছে। কে কাকে বেশী মারতে পেরেছে! ইস্ট পাকিস্তানে খালবিল নদী নালা না থাকলে একটা ইন্ডিয়ান আর্মিও জিন্দা জান নিয়ে ফেরত যেতে পারত না। মুর্দার আবার জিৎ কিসের! পাকিস্তানিরা হচ্ছে পাহাড়ে পর্ব্বতে ট্রেনিং-এ জবরদস্ত। খালবিল টুনি খাল তো তারা দেখেই নাই। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কিংবা কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খান যদি গোড়ার দিকে ইস্ট পাকিস্তানে একটা মিলিটারি একাডেমী খুলতেন, কাকুল-কোহাটের সঙ্গে ঢাকা-চিটাগং-এও একটা খুলতেন, পাকিস্তানকে দুই টুকরা স্বয়ং খোদাও করতে পারত কিনা সন্দেহ। তখন ইস্ট পাকিস্তান আর্মিই ইন্ডিয়ার বিহার, আসাম উড়িষ্যা চিবাইয়া খেয়ে ফেলত। এইসব মুক্তিযুদ্ধ চুক্তিযুদ্ধ হতই না। শেখ মুজিব নামে কোন প্রানী পয়দাই হত না। ইয়াহিয়া-টিক্কা হাজারটা বঙ্গাল মারতে পারল; টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড মালাউন আর্মি মারতে পারল, আর একটা শেখ মুজিবকে মারতে পারল না।

নাহ। ইয়াহিয়া-টিক্কাকে একদম মাফ করা যায় না। নো মার্সি। পাকিস্তান আর্মির থ্রি চিয়ার্স মানে থ্রি ডব্লিউজ। ওয়াইন, উওমেন এন্ড ওয়ার। ওয়ারের ভিকটরি পয়েন্ট হচ্ছে দ্য আলটিমেট টার্গেট। ইয়াহিয়ার জন্য সেই পরম লক্ষ্য ছিল শেখ মুজিবকে খতম। ওয়াইন ও উওমেনে মত্ত ইয়াহিয়া সেই লক্ষ্যভেদ করতে পারে নাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেমন হিটলারের ডিফিট খাওয়ার কথা না। তেমনি ইন্দোপাক ওয়ারে পাকিস্তানের পরাজয়ের কথা নয়। সব তকদীরের খেল। ব্যাড লাক। ইয়াহিয়া গোড়াতে মুজিবকে ফিনিশ করে দিলে এই চান্দমারি মিস হয় না। ইয়াহিয়া টিক্কা যে কাজ পারে নাই, এখন ফারুক-রশীদ সেই আনফিনিশড রেভিউলিউশন করে দেখাবেই। কোন ব্যাতিক্রম হবে না। প্রো-লিবারেশন আর্মি অফিসারদের ওপর ফারুকের রাগ কমছেই না। খুব গজরাচ্ছে। বাঙ্গাল এই অফিসারগুলো হচ্ছে চাঁড়াল-চামুন্ডা। ইন্ডিয়ায় গিয়ে ঘোড়ার পেশাবেরও ট্রেনিং পায় নাই। যা ট্রেনিং সবই পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমীতে। গাদ্দাররা কচ্ছপ-শুয়োরের হারাম মাংস খেয়ে সেই ট্রেনিং পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই কাজে লাগিয়েছে। ফারুক কিছুতেই ট্যাঙ্কের ওপর স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। ইচ্ছে হচ্ছে, কচ্ছপখোরদের এক্ষুনি গিয়ে লাত্থায়। ওয়াক থু। কোন সাচ্চা দিল মোসলেম কি শুয়োরের মাংস খেতে পারে। খুব ভাল হয় প্রো-লিবারেশন অফিসারদের একলাইনে দাঁড় করিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতে পারলে। তাদের এককাপ কফি তো দূরের কথা, একটা বিড়িও টানতে দেয়া হবে না। আর্মিতে কোন কমিউনিস্ট রাখা যাবে না। তাহের মাস্ট বি কিলড। আর্মিতে সে ক্লাশলেস সিস্টেম চালু করার ইন্ধন চালাচ্ছে। সবই ভাওতাবাজি।ইন্ডিয়া আছে নেপথ্যে। ইন্ডিয়ার হচ্ছে দশমুখ। সব সময় একটার পর একটা ফ্রন্ট ওপেন করে। সবার আগে তাহেরকে দিতে হবে গুলিতে। তাহের একটা ক্যান্সার। ক্যান্সারের জীবাণু এক জায়গায় থাকে না। ছড়িয়ে পড়ে সারাদেহে। তাহের সেইরকম সংক্রামক। টু স্টার জেনারেলের সানগ্লাস ভীষন পছন্দ ফারুকের। এই জেনারেলটা পারবে। সে নিজেকে ঢেকে রাখতে জানে।নিজের আকাঙ্খাকে গোপন রাখতে জানে। প্রো-রেভিউলিউশন আর্মিকে নিষ্ঠুর না হলে চলবে না। জিয়াকে প্রচন্ড ধূর্ত মনে হয়েছে তার। তাকে বিশ্বাস করা যায়। তার দ্বারা সবই সম্ভব। তার সঙ্গে চার ঘন্টার লম্বা প্রি-প্লান পার্টি হয়েছে। কোন উত্তেজনা সে দেখায় নি। সব কথা গভীর মনোযোগে শুনেছে। অতি সুচতুর। মিলিটারি স্ট্রাটেজির কামিয়াবির শর্তগুলোর কথা বলেছে। পেছনে শত্রু রেখে এগোয় ব্লাডি সিভিলিয়ান। মিলিটারি নয়। মিলিটারি সব সময় সব শত্রুকে খতম করে অগ্রসর হয়। যখন নতুন কিছু করতে চাইবে, পুরানা কোন চিহ্নই রাখবে না। সব ডেস্ট্রয় করে দেবে। তারপর নতুন ইট বসাবে। ডেমোক্রেসি শ্যুড বি প্রডিউসড। নতুন জেনারেশন যেন কল্পনাও করতে না পারে, একসময় সেখানে অন্য কিছু ছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় একটা ইসলাম ট্রেডিং করপোরেশন খোলার কথাও হয়েছে। সেকুলার কনস্টিটিউশন থাকবে না। এটার মধ্যে ইসলামী জজবা পুশ করতে হবে। ফারুকের মধ্যে টগবগাচ্ছে প্রবল উত্তেজনা। কখন সে পৌছাবে বত্রিশ নম্বরে। সবকিছু গুড়িয়ে চুরমার করে পিষবে ট্যাঙ্কের নীচে।

ইয়ার আজিজ খান। মিয়া আজিজ খান। পদমর্যাদায় সামান্য বরকন্দাজ হলেও দাজ্জাল শাহীশিবিরে তারা দুজনেই অত্যন্ত কদরদার। নজরদার। ইয়ার আজিজ হল ডেরাগাজী খানের খানসেনা। আর মিয়াজিজের সাকিন লারকানায়। দুই খানসেনার ইয়ারি-দোস্তি বাঙ্গালস্থানের ফৌজীশালায় এসে। ঠাট্টা-তামাশা পরিহাস সকলেরই প্রিয়। শয়তান-দাজ্জালদের আরও বেশী প্রিয়। দাজ্জালশালায় জেনারেলরা পর্যন্ত তাদের দুজনকে বিচিত্র আনন্দে ইয়াজুজ খান-মিয়াজুজ খান বলে ডাকে। ইয়াজুজ অতি সুদর্শন। টকটকে ফরসা। রক্তিম গাল ও গাত্রচর্ম। রক্ত যেন চামড়া ফেটে বেরুবে। তার চোখে সবসময় সুরমা। কড়া গাঢ় সুরমা। সুরমার গভীর রেখার মাঝে চোখ দুটি পঞ্চমীর চাঁদের মত ফুটে থাকে। দেখতে অতি নেককার। দ্বীনদার। দ্বীনের একটি হেকমতি লাইন সে হাতড়ে-আঁকড়ে নিয়েছে। খতনা করা তার নেশা। নিয়াজির অতি গুনমুগ্ধ। নিয়াজিও তাকে দেখলে বিরল প্রকৃতির হাসে।বলে, কিতনে আউরত শিকার কিয়া হ্যায় শেরা। কখনও জানতে চায়, ইয়াজুজ খান, মালাউনকো খতনা কিয়া তো আচ্ছে। লেকিন,বাঙালকো কতল কিয়া কি নেহী। ইয়াজুজ খুব লজ্জা পায়। সে কেবলি সুন্নতে খতনায়ই মশগুল। কতলে ফরজ একটাও আদায় করতে পারে নি। খুবই বেশরম কি বাত। হাশরের দিন তার কি যে মুসিবত হবে! কেমন করে যে মুখ দেখাবে! গোলাম পাকিস্তানি তার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে এই দুশ্চিন্তা। মিয়াজুজ এক্ষেত্রে অনেক কদম অগ্রসর। বেলুচিস্তানেই টিক্কার সঙ্গে ছিল। কতলও করেছে ঢের। বালুচি নারী শিকারও করেছে অনেক। এজন্য টিক্কা চাক্কা খাঁর সে অতি প্রিয়ভাজন। কাউকে বলাৎকার করার ফরমান পেলে সে কল্লা কেটে এনে হাজির হয়। তার চেহারা-সুরতও সুদর্শন গেলমানের। তার আবিষ্কার-বাঙ্গাল জেনানার খতনা হয় নি। নাপাক জেনানা। তাই সহবত-বলাৎকার করে সে গোছল দেয়।পাকসাফ করে নিজেকে। টিক্কা চাক্কা খান অত্যন্ত মেহেরবান। ইয়াজুজ-মিয়াজুজ দুজনেই তার খুব-পছন্দ। নিয়াজি-জানজুয়াও মাশাল্লাহ। দুই রতনকে ছাড়া তাদেরও চলে না। দাজ্জালদের ভোগবিলাসে যত বেগম চালান আসে। সবাইকে সালাম-আদাব করে আদব-লেহাজের সঙ্গে বেগম-হারেমে পৌঁছে দেয় দুই রতন। তারপর দাড়িয়ে থাকে বাইরে। জাঁদরেল দাজ্জালদেও বিচিত্র সব শখ। শরাবে আকন্ঠ বুঁদ না হয়ে তারা শিকার করতে পারে না। শরাবের যোগান সব সময় রেডি রাখতে হয় তাদেরকেই। জেনারেলরা পেগের পর পেগ গিলে যায়, ইয়াজুজ-মাজুজ তখন শোকর আলহামদুল্লিলাহ বলে তাল বাজায়। জেনারেলরা নানারকম নামে ডাকে এই অপূর্ব খুবসুরত আউরত বেগমদের। যে চালানগুলো শরীফ পরিবার থেকে এসেছে, তাদেরকে বলে গার্লফ্রেন্ড। কাউকে বলে-কামওয়ালী আউরত। কেউ রান্ডি,মালকিন,ইয়ারি,মাল বিচিত্র সব কোড ব্যাবহার করে তারা। কিন্তু ইয়াজুজ-মিয়াজুজ সবাইকে অত্যন্ত শরীফ নজরে দেখে। সকলের সঙ্গে আদব-লেহাজ বজায় রাখে। ওরা রান্ডিকেও বলে বেগম। শরীফ-আউরত-গার্লফ্রেন্ডকেও বলে বেগম। খাদিমরাজা-জাঞ্জুয়া অতি সুদর্শন। তাদের গার্লফ্রেন্ড জুটে যায় সহজেই। জাঞ্জুয়া আর এক শরীফ বেগমের লটরপটর খুনখারাপি আর নির্মমতার মাঝেও বেশ রসময় ঘটনা ফৌজীখানায়। কিন্তু রহিম খার বড়ই দুর্ভাগ্য। তাকে চালান নিতে হয়। একটাও শরীফ লেড়কি সে শিকার করতে পারেনি। লোকটাও বদখত। ইয়াজুজ মাজুজ রুমের বাইরে দাঁড়িয়েই টের পায়, আউরতের নেশায় যতই মশগুল হোক না, রহিম খাঁর মর্দানি বেশ দুর্বল। শরাব গিলতেই থাকে। রুমের বাইরে এসে বলে, আউর এক বোতল লে আও। একসময় ঢুলতে ঢুলতে বেরিয়ে আসে। নাপাক-হারাম সব খিস্তি-খেউর করে। মাদারচোদ। মাদারফাকিং। চিৎকার করে বলতে থাকে, ইয়ে রান্ডি কো আভি আভি নিকালো। সিনে মে গুলি মারো। ফিনিশ কর দো। বহুত জিল্লতি দিয়েছে; ওকে আর বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই। দাজ্জাল-জলসা হলে ওদের দুজনের হাজিরা অত্যাবশ্যক। খেদমতগার হিসেবে তারা তুলনাবিহীন। মিয়াজুজের চেহারায় বেশ অনেকটা গেলমানি থাকায় সে আদর সোহাগও পায় জেনারেলদের। দাজ্জাল-জলসা সে এক কান্ড বটে। জশন হয়। জলুস হয়। টেবিলের ওপর রঙ্গীন ইরানি গিলাফ ছড়িয়ে হরেক রকম ব্রান্ডি, ওয়াইন রাখা হয়। ভাবখানা যেন এমন পবিত্র পানীয় আর হয় না।জান্নাতি মাল। শরাব সেখানে হালালে খাস; তবে সর্বশেষ জলসায় আউরত ছিল হারাম।টিক্কা চাক্কা, নিয়াজি, রাও ফরমান, জানজুয়া,আহসান,রহিম খান, খাদামরাজা,এনামাল,পাঙ্খোয়া সবগুলোই এসেছিল। কর্নেল, মেজরও এসেছিল বেশ কিছু। কয়েকটা গোলামের বাচ্চাও সারা শরীরে জাফরানের রস চুইয়ে তসরিফ এনেছিল। জলসাটা ছিল ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধে ভরপুর। লোবানের গন্ধ তীব্র। কখনও আগরবাতির গন্ধ । কখনও পচা চাপাতার গন্ধ। কখনও মড়া পোড়ানো কাঠ কয়লার ঝাঁঝালো গন্ধ। কর্পুরের গন্ধও আসছিল মাথা জ্বালা ধরিয়ে। ইয়াজুজ মিয়াজুজ ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি বিচিত্র এই গন্ধের উৎস কি! আর এসবের সঙ্গে নানারকম শরাব মিলেমিশে নরক গুলজার। ইয়াজুজ মুর্দার গন্ধও পাচ্ছিল। কিন্তু কিসের লাশ। কাদের মুর্দা। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারে নি। মুর্দার দুর্গন্ধ পেয়ে ইয়াজুজ অজানা আশঙ্কায়ও ভুগছিল। এটা কোন অবস্থাতেই ভাল আলামত নয়। শেখ মুজিবের মুন্ডুপাত করছিল দাজ্জালরা। রাজা খাদিমদার বেশ কয়েক পেগ গিলে ফেলেছে। সে বার বার পিস্তল উচিয়ে ছুটে যাচ্ছিল। শরাব জলসাতেই কতল করে মুজিবকে। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল, মুজিবকে বাগেই পেয়েছে। এক্ষুনি ফায়ার করে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিল বলে। বিট্রেয়ার, গাদ্দার। হঠাৎ করে সে একটা চেয়ার নিয়ে সেটার ওপর দাঁড়াল। চোস্ত উর্দুতে বক্তৃতা দিতে শুরু করল। বলল, হাম লোগ আভি আভি মুজিবকো মার দেঙ্গে। এক্ষুনি ওটাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে।ওকে কতল না করলে কওমে পাকিস্তানকে আর সেইভ করা যাবে না। ইয়াহিয়া খান সাব আভি বলো, মুজিবকে ঝুলিয়ে দিতে। নো কোর্ট মার্শাল। নো কোর্ট। নো মার্সি। নো ডিলে। মুজিব জিন্দা রহেগা তো পাকিস্তান খতম হো জায়েগা। হা হা করে হাসে খাদিম রাজা। তারপর কাচু মাচু হয়ে কাঁন্দে। আই মেইড এ গ্রেট মিসটেক। বিরাট ভুল করেছি আমি। কেমন করে এই মস্ত ভুল করলাম। সাত মার্চই তাকে খতম করতে চেয়েছিলাম। ওর বাসাবাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। ট্যাংক-মর্টার দিয়ে গুড়িয়ে চুরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। বাঞ্চোত। সেদিন ভুল করেছি আমি। পাকিস্তান এই জন্য কোনদিন মাফ করবে না আমাকে। ইতিহাসে এই ভুল লেখা থাকবে। শরাবের নেশার ঘোরে সে সত্যিই কাঁদছে।বাঞ্চোত বাঙ্গাল। সব মিট্টিমে মিশিয়ে দেয়া দরকার। আই মেইড এ গ্রেট হিস্টরিক্যাল মিসটেক। সাত মার্চেই রেসকোর্সে ম্যাসাকার করা উচিত ছিল। ইয়াহিয়া খান তো অর্ডার দিয়েছিল, মিলিয়ন মিলিয়ন বাঙ্গাল খতম কর দো। এটা কাপুরুষের জাত। দরকার হয়,এক মিলিয়ন খতম কর। জরুরত হ্যায় তো তিন মিলিয়ন খতম কর, ওরা তোমার হাতের থু থু চেটে খাবে। খাদিমরাজার খুব আফসোস। কেন সে সাত মার্চ তারিখে ম্যাসাকার করল না। তার বিশাল ট্যাঙ্ক বহর ছিল। গোলা বারুদ ছিল। সেদিন সব মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারত। বাঙ্গালরা লাঠি বৈঠা লগি দিয়ে কিছুই করতে পারত না। একটা পাকিস্তানি আর্মিও মারতে পারত না। হায় হায়। এ কেমন ভুল করল সে। জেনারেল রহিম খাঁও বক্তৃতা দেয় অতিশয় কড়া। মুজিব কো লটকা দো। অভি আভি লটকা দো। খাদিম রাজা একটা না-মর্দা কা আউলাদ। কেন সে মুজিবকে লটকাল না। কেন সে ফিনিশ করে দিল না। দিলে কিচ্ছুটি হত না। বাঙ্গাল না-মর্দ কা কওম। সব লোগ কাওয়ার্ড। কোনও মর্দ নেই এই দেশে। সব মাগী লোগ। মুজিবকে লটকে দিলে টু শব্দটি করত না। রহিম তেড়ে যায় খাদিমের দিকে। মুজিবকে চাইলেই এখন লটকানো যাবে না। কিন্তু গাদ্দার-নাকাম খাদিমকে সে খুন করে ফেলবেই। পিস্তল বের করে রহিম। টিক্কা চাক্কা খা গিয়ে রহিমকে নিরস্ত করে। স্টপ স্টপ। এটেনশন। লেফট রাইট লেফট। স্টপ। টিক্কা বলে, মুজিবরকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। নো মার্সি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অবিলম্বে তাকে ফেরত আনা হবে। গাদ্দার। যে রেসকোর্স ময়দানে বসে মুজিব আজাদী এলান কিয়া,সেই ময়দানে ওকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। কেয়া বোলা, বাংলাদেশ আজাদ হো গিয়া।

হারাম বাঙ্গালাদেশ স্বাধীন হো গিয়া। হা হা । ওর বাংলাদেশকে পুন্দ মে পুশ কর দেগা। যে তর্জনি উচিয়ে সে পাকিস্তানকে শাসিয়েছে, মুজিবের সেই আঙ্গুল টেনে ছিঁড়ে নেয়া হবে;আগুনে পোড়ানো হবে। বেয়োনেট দিয়ে ক্যাচলানো হবে। বিপুল তালি বাজাতে থাকে জেনারেলরা। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার , মেজর, ক্যাপ্টেনদের মধ্যে উৎসাহ কম। তাদের হাতে তেমন জোর দেখা গেল না। টিক্কা চাক্কা বলল, এক্ষুনি সে ইয়াহিয়া খানকে মেসেজ পাঠাচ্ছে, হয় মুজিবকো লয়ালপুরমে লটকা দো। নয় তো ঢাকা পাঠাও। এখানেই ওর চৌদ্দ গুষ্ঠির কবর হবে। ওর বাড়ি সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করা হবে। দরবার মহলে দজ্জালজলসায় লাশের গন্ধ তীব্র ও প্রকট হয়ে উঠছে। খাদিমের কন্ঠে বিলাপের সুর। মাঝারি গোছের অফিসারগুলো নিষ্প্রাণ। তারা কেউ কেউ যথেষ্ট শরাব পানে মশগুল নয়। কাসব খান নামে একটা মেজর মওকা পেতেই জানতে চাইল, জেনারেল স্যার, হোয়াট’স আওয়ার গোল!খিক খিক করে উঠল টিক্কা। নও জোয়ানো, উই নিড অনলি ভিক্টরি। পাকিস্তান আর্মি নেভার ডিফিটেড। খাও দাও। মৌজ বানাও । কিন্তু জয় আমাদের চাই ই। বাঙ্গালকো মিট্টিমে মিলাদো। মিলিয়ন সে মিলিয়ন খতম কর দো। আর্মস এমুনেশন হাম দেগা। কিতনে ট্যাঙ্ক চাহিয়ে। কিতনে গোলি চাহিয়ে। হাম দেগা। লেকিন ভিক্টরি ইজ এ মাস্ট। নো ডাউট এবাউট ভিক্টরি। হামনে তো বোলাথা, আদমি নেহি , ইস্ট পাকিস্তান কা মিট্টি চাহিয়ে। যিতনি খুন চাহিয়ে বহা দো। কতল কর। খতম কর। বাঙ্গাল আউরত কো রান্ডি বানাও। খানকি বানাও। নয়ি পাকিস্তানকা আবাদ করো। ইয়ে মালাউন কা খানকা হ্যায়। ইসকো মুসলিমাবাদ বানাও। মালাউনাবাদ কো ইসলামাবাদ বানাও। আইয়ে শরীফজাদা ইধার আইয়ে। টিক্কা চাক্কা খা তার হাতের ডান দিকে বসা কিছু বাঙ্গাল গোলাম পাকিস্তানী লিডারকে আহবান করল। আইয়ে প্রফেসর আইয়ে। একটা গোলাম পাকিস্তানি ঠ্যাং লেংচাতে লেংচাতে টিক্কার পাশে তসরিফ নিল। তার মুখ ভর্তি কাল দাঁড়ি। তাতে শকুনের মুখের উৎকট দুর্গন্ধ। মাথায় কিস্তিটুপি। সে মুখটা একটু খুলতেই তীব্র ঝাঝালো গন্ধ দরবারে ছড়িয়ে পড়ল। টিক্কা ভর্ৎসনা করল তাকে, কেয়া হ্যায় মেরে ইয়ার ,মিসওয়াক কিয়া নেহি। পিয়া নেহি। ব্রান্ডি পিও। দো দো, ইসিকো দো পেগ ব্রান্ডি দো। হাসছে সে গোলামকে নিয়ে। তুম তো গোলাম-ই-আজম আছো। বোলো প্রফেসর , তুমহারা লজিক বোলো। হামনে দেরাদুন মিলিটারি কলেজকে লজিক কা স্টুডেন্ট থা। থোড়া ইয়াদ আভি হ্যায়। বলাৎকার কা কেয়া ফতোয়া হ্যায় তুমহারা পাস!গোলাম তার দাঁড়িতে হাত বুলায়। দাড়িতে সে অতি পছন্দ এক সুবাস মেখেছে। অতি-পছন্দ অবশ্য তার নয়। ভুট্টো যখন ঢাকায় তসরিফ এনেছিল। হোটেল ইন্টারকনে গোলাম গিয়েছিল মার্চ ক্র্যাকডাউনের পরে। তার মগবাজারের ডেরা থেকে বেশী দূরে নয়। লেংচাতে লেংচাতে হামাগুড়ি দিয়ে সে হাজির। ভুট্টো ভাবী পাকিস্তানকা সদরে জওয়ান। ভুট্টো সমাদরই করেছিল। কোলাকুলি গলায় গলায়। গোলামকে নিয়ে সে ছাদে উঠল ইন্টারকন্টিনেন্টালের। জগন্নাথ হল , কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব দেখা যাচ্ছে ছাদ থেকে। আগুনের ধোয়া উড়ছে। পাকিস্তানি আর্মির উল্লাস। ফৌজী শকটের শব্দ । বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে হাজারো মৃত্যুর চাপা কান্না। ভুট্টো খুব খোশ। গোলাম জানত, কচি ডাব নারকেলের লেই লারকানার জমিনদারজাদার বড্ড প্রিয়। সে একটা ফ্লাস্ক ভর্তি করে লেই নিয়ে এসেছে। ছাদে বসে ফ্লাস্কটা বের করল। ভুট্টো বলল, কেয়া হ্যায় মেরে ইয়ার। এনি লোক্যাল ওয়াইন। নো, আই ডোন্ট ড্রিংক দেশী মাল। বলেই হাসছে। কিন্তু গোলাম তাকে লেই দেখাতেই সবিস্ময়ে তাকাল ভুট্টো। তার চোখ চক চক করছে। বলল, প্রফেসর, তুম বহুৎ চালাক আদমি আছো। আই লাইক ইট।

দুজনেই লেই খাচ্ছে। আর হাসছে। আগুন দেখছে। হাসছে। গোলাম বলল, ইস্ট পাকিস্তান কা কোই আদমী মুজিব কা সাথ নেহি। সব কুচ হিন্দুস্থান কা কনস্প্রিসি। ভুট্টো মুখ বিকৃত করে হাসে। তুম প্রফেসর সাচ বাত নেহি বোলতা। ইউ আর ভেরি কানিং। মুজিব কো জো ম্যান্ডেট মিলা, ক্যায় সে মিলা। গোলাম বলে, মালাউন লেকো কো খেল হ্যায় বেরাদারেনে ইসলাম। মালাউন কা খেল। শেখ মুজিব ভি মালাউন আদমি হ্যায়। বলে মুখ চিবিয়ে চিবিয়ে হাসে। খুব খুশি হয়েছিল ভুট্টো। তার সহচরকে কানে কানে কি যেন বলল। কিছুক্ষণ পরে লোকটা একটা ছোট্ট শিশি নিয়ে এল। বোতলটা খুরমা আকৃতির। সেটি গোলামের হাতে তুলে দিল সে। বলল, এটা মালাউনকা সেন্ট নেহি। জিউ-নাসারা কা সেন্ট নেহি। ইয়ে খাস সৌদী আরাব কা সেন্ট হ্যায়। ক্রাউন প্রিন্স ফয়সাল আমাকে দিয়েছে। সেই খাস জিনিস তোমাকে দিলাম। নায়েবে আমিরের মত মাথা ঝুকিয়ে কুর্নিশ করে গোলাম সেটা গ্রহণ করল। সৌদী কা খাস মাল। তার মনটা খুশ খুশ হয়ে গেল।আজ এই দাজ্জাল জলসায় গোলামের শরীরে সেই সৌদিআনা খোশবু। চারপাশে নজর আন্দাজ করে সে । গলাখাকাড়ি দেয়। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। নাহামুদুহু নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম। আরবীতে আরও কয়েক ছত্র বলে সে। শরাবীরা বড্ড কৌতুহল নিয়ে লাশ-গন্ধিঅলাকে দেখছে। কি বলছে সে। বুঝতে পারে না তারা। তার শরীর থেকে মরা শকুনের গন্ধ আসছে কেন, বুঝতে পারে না তারা। আম্মা বাদ। গোলাম উর্দু-ইংরাজি মিলিয়ে বলে, তিলোয়াত এ কারনে করলাম, আপনারা যা করছেন তাতে শরীয়ার হুকুম আছে। আপনারা শরীয়ার জায়েজ ও হালাল হুকুমই পালন করছেন। জান্নাতের দরওয়াজা আপনাদের অতি সন্নিকটবর্তী। শহীদানেও জান্নাত। গাজী-জিন্দার জন্যও জান্নাত। একটা মুসলিম মিল্লাতে মালাউন-খুন বইতে দেয়া যায় না। এই খুন পরিশুদ্ধ করা দরকার। যদি আমরা জশনে-মুসলিম বীর্য দিয়ে এই নাপাক বেখোদা শঙ্কর বাঙ্গাল-কওমকে হালাল না করতে পারি, ইস্ট পাকিস্তান অচিরেই আইয়ামে জাহিলিয়ত হয়ে যাবে। মুর্তিপুজা, শহীদমিনারপুজায় কওম ভরে যাবে।

শরীয়া-এ হাকাম বলছে, যদ্দিন যুদ্ধ চলবে, তখন পুরো বাঙ্গাল কওমকা আউরত গনিমতের মাল। তারা কওমের মালিক পাকিস্তানি ফৌজ দ্বারা ভোগ্যা হলে তা নাজায়েজ- বেশরীয়তি হবে না। যুদ্ধাবস্থায় তারা গনিমতের মাল।এই টাইমে যে কোন আউরতকে দখল করতে পারলেই গনিমতের মাল। তার সঙ্গে মেলামেশা-সঙ্গম হালাল। সেটা জেনা হবে না। না, না, না। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে এই শরীয়তি ফায়দা সংকোচিত হয়ে পড়বে। তাই এখন রেপিং,বলাৎকার আসলে বলাৎকার নয়। এটা জায়েজ। হালাল এ আঈন। আমি একজন প্রফেসর। ফিলসফির প্রফেসর। ইসলামোলজি এন্ড লজিক আমারও সাবজেক্ট। মলানা মদুদিও কাছে থেকে শরীয়া পাঠ করেছি। আই নো ইট ভেরি মাচ। আই এম এ্যান এক্সপার্ট শরীয়ান। এটা আমার চেয়ে কেউ ভাল জানে না। গোলামের বয়ান শুনে টিক্কা চোখ টিপছিল। বহুৎ খুশদিল হয়ে গেল সে। লম্বা পায়ে নিয়াজি এগিয়ে এল গোলামের কাছে । পিঠ চাপড়ে দিল। ব্রেভো। বহোৎ আচ্ছে বোলা প্রফেসর। তুম তো বহোৎ কামওয়ালি লোগ আছো। জেনারেলস কো খুশ কর দিয়া। নিয়াজি হাসতে লাগল । তুম বাঙ্গাল লোগ যখন বলছে, হামরা ইয়ে নাফরমান নাপাক হারামজাদা কমজাত বাঙ্গালকো চেহারা বদলে দেব। নাক নকশা অঅকৃতি পাল্টায়া দিব। তুমকো পাঞ্জাবি জবরদস্ত ফিগার বানায়া দিব। ইয়ে ওয়াদা হ্যায় হামারা। গান ইজ দ্য আলটিমেট পাওয়ার। হামরা একলাখ মর্দ এসেছি। কেমন বুঝছ আমাদের মর্দানি। নিয়াজি গোলামের হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগল। গোলাম ভালই টের পাচ্ছে নিয়াজির মর্দানি। তার হাত মচকে গেল একরকম। নিয়াজি হাসছে।

রেপিং এন্ড ফাকিং ইজ এ মাস্ট ইন ওয়ার। পাঞ্জাবি ফৌজ ঝিলম সে ইধার আয়া। বিবি আউরত ঝিলম সে রহে গয়ে। ইধার হাম কেয়া করে গা। কেয়া শোয়েগা। ফাইট ইধার করে গা। ঔর শোয়েগা ঝিলম মে, ইয়ে ক্যায় সে হোগা মেরে ইয়ার। হাম ইধার মৌজ বানায়েগা। শোয়েগা। তুম হারা বিবি আউরত কো হাম শিকার করে গা। গনিমতের মাল বানায়েগা। তুমহারা বিবি কিতনে হ্যায় শেরা। সুন্নতি চার বিবি মজুদ হ্যায় তুমহারা মকান মে!বলে নিয়াজী ঠা ঠা করে হাসতে লাগল।ইশতাক নামে এক মেজর ছিল অদূরেই। তার মুখ শুকনো। সে খুবই অস্বস্তি বোধ করছিল। বাঙালি অফিসার। নিয়াজি স্বরগ্রাম উচু কওে বলল, ইশতাক, বাচ্চে ইধার আও। কিতনে আউরত তুম রেপ কিয়া। ইশতাকের চোখ মুখ আরও শক্ত হয়ে উঠল। কঠিন নজরে হারামজাদা গোলামকে দেখছে সে। গোলাম বেশ কুকড়ে মুকড়ে গেল। ব্যাপারটা চোখ এড়িয়ে গেল না নিয়াজির । সে হাসছে। বোলো বাচ্চে, কিতনে রেপ কিয়া। তুম তো বাঙ্গাল ক্যাট হো। বিল্লি আছ। বোল বেটা বোল কিতনে কিয়া। জো রেপ কিয়া ;উয়ো বিল্লি নেহি শেরা হোতা হ্যায়। ইশতাক বেশ রুষ্ট গলায় বলল, নো স্যার। আই ডু নট ক্যারি দিস অর্ডার। নিয়াজির চেহারা মুহুর্তেই পাল্টে গেল। কেয়া বোলা হারামজাদে। ইউ মাস্ট ক্যারি মাই অর্ডার। ইউ মাস্ট ফাক এন্ড রেপ দিস ব্লাডি বাঙ্গাল আউরত। দিস ইজ এ জেনারেল’স অর্ডার। ইশতাক এবার পরিষ্কার গলায় বলে, নো স্যার। আই কানট। নিয়াজির চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। জেনারেলদের ভরা জলসায় তার অর্ডার ক্যারি করতে অস্বীকার করছে পুয়োর ব্লাডি বাঙ্গালটা। এর একটা স্পট পানিশমেন্ট হওয়া দরকার। কোর্ট মার্শাল না করলে অন্য জুনিয়ররাও অবাধ্য হবে। আর্মির কমান্ডিং-এ বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কোমর বন্ধনী থেকে পিস্তল বের করল নিয়াজি। দুম করে গুলি করে দিল সে। রক্তারক্তি কান্ড। ইয়াজুজ মাজুজরা ছুটে এল। ধরাধরি করে সরিয়ে নিয়ে গেল ইশতাককে। গুরুতর আহত। শরাব জলসায় সামান্য এই রক্তপাত বিশেষ কোন প্রভাব ফেলল না। নিয়াজি এবার সদম্ভে লম্বা লম্বা পায়ে অন্য জুনিয়র অফিসারদের কাছে গেল। ক্যাপ্টেন, মেজর , জুনিয়র লেফটেন্যান্ট , কর্নেল কেউ বাদ গেল গেল না। সবার কাছে নিয়াজির মৌজী প্রশ্ন। কিতনে রেপ কিয়া শেরা। বেশ হাসিঠাট্টা চলতে লাগল। একজন একজন এক একটা অঙ্ক বলছে। বড় অঙ্ক শুনলেই ঠা ঠা করে হাসছে। বহোৎ আচ্ছে কিয়া। তুম তো পাঞ্জাবকা শেরদিল হ্যায় বাচ্চে। বাঙ্গাল খুন সাথ পাঞ্জাবিকা খুন মিলা দো। হাম ইস্ট পাকিস্তান কো জান্নাত বানা দেগা। কেয়া বোলো প্রফেসর। বিবি, আউরত , রান্ডি লে আও। খুব সুরত লেড়কি লে আও। হাম তুমকো শরীফজাদ বানা দেগা। মালাউন কো হাম মুসলমান বানায়েগা। ইয়াজুজ খান হ্যায় ইধার। ও খতনা করায়েগা। তুম লোগ মহফিল করো; ওয়াজ মফেল এনতেজাম করো। মালাউন কো কলেমা পড়াও। পিটো। ডান্ডা মার। রেপ করো। জ্বালা দো। ইস্ট পাকিস্তান মে হার্ন্ডেড পার্সেন্ট ইসলাম কি আবাদ হোগা। জো মালাউন হ্যায়, ভাগো ইধার সে। ইয়ে মিট্টি শরীফজাদো কি, হারামজাদো কি নেহি। শেখ মুজিব হামারা মুঠঠি মে। হি মাস্ট বি হ্যংগড। জেনারেল-জলসায় হাসি ঠাট্টা থামছেই না। রহিম খা এক তরুন ক্যাপ্টেনের কাছে নিয়াজি কে নিয়ে গেল। বললো, ইয়ে হ্যায় আন্ডা খান। লাহোর কা আওলাদ। বহোৎ কামিয়াব কিয়া। পাঞ্জাব কা নাম বহোৎ রশন কিয়া। হি ইজ ইয়াং বাট রেপ স্পেশালিস্ট। আই হার্ড ফেম এবাউট দিস বয়। আন্ডা খান দেখতে অতি সুদর্শন। গায়ের রঙ আগুনের মত টকটকে। সে লাজুক হাসে। নিয়াজি হ্যান্ডশেক করে তার সঙ্গে। কিতনে রেপ কিয়া তুমনে; রহিম খান কি নাম ক্যায় সে রশন কিয়া!জবাব দেয় না তরুনটি। মাথা নীচু করে হাসে। রহিম খানের মুখে তুবড়ি ছুটছে। বলে, হি হ্যাজ এ গ্রেট স্পেশালিটি। হি ইজ এ স্পেশাল নিপল বাইটার। হোয়েন হি রেপড হি রিপড আউট দ্য নামিরা এন্ড কাট নিপল বাই হিজ টিথ। দিস ইজ হিজ ফান পার্ট। হাসির ফোয়ারা বয়ে গেল পুরো দাজ্জাল জলসায়। হাসির হট্টগোল। নিয়াজি ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে চাইল, কেমন করে কান্ডটি সে করে, সেটা দেখাতে। আন্ডা খান এবার লজ্জা পায় না। কুৎসিত মুখ-ভঙ্গি করে সে দেখাতে থাকে তার মহাকীর্তির বিবরণ। দমা দম মাস্ত কলন্দর অবস্থা। সবাই ভিড় করল আন্ডাকে ঘিরে। জেনারেল-ক্যাপ্টেন-লেফটেন্যান্ট সবার গলা এক হয়ে গেল। সবাই শিৎকার করে চেচাঁচ্ছে। রান্ডি লে আও। আউরত লে আও। আন্ডা খান কো এক লেড়কি দো। গনধর্ষণের সেই মচ্ছব শেষ হতে চায় না। আন্ডাকে ঘিরে সব ফৌজী অফিসারগুলো গ্যাং রেপের মহড়ায় লিপ্ত হল। রহিম খা অবশ্য খাদিম রাজাকে নিয়ে এসেছে এক পাশে। সে জানতে চায়, হামারা গার্লফ্রেন্ড কো লিস্ট কিস কি পাস হ্যায়। তুমহারা পাস খুব সুরত বেগম হ্যায়। দি জিয়ে না ফোন নম্বর। দিজিয়ে না বেগম-মহল কি চাবি। জেনারেল জাঞ্জুয়া ছিল পাশে। তার দিকে তাকিয়ে খাদিম হাসে। কিছু বলে না। মৃদু হাসে জাঞ্জুয়াও। পরের দিন। ইয়াজুজ খান আর মিয়াজুজ খান অন ডিউটি। ফৌজীশালার পেছনেই মড়কখোলা। কেউ বলে লাশখোলা, মুর্দাখোলা। কসাই কাদের মোল্লার এলাকা। কসাইর মানুষ মারার বিল। সে এখানে জবাই করে, গুলি দেয়। বিরান এলাকা। জায়গাটা পুরোপুরি বিহারী ও রেজাকারদের নিয়ন্ত্রনে। বেশ কয়েকটা মালাউন আর জয় বাংলা লোক ধরে এনেছে কসাই কাদেরের লোকজন। বেশ কয়েকটা মাগীও এনে চালান দিয়েছে ফৌজী-বেগম মহলে। মালাউন ও জয়বাংলাগুলোকে সোপর্দ করা হয়েছে ইয়াজুজ-মাজুজের হাতে। আজ তারাই দন্ড মুন্ডের কর্তা। কাদেরের সঙ্গে ওদেও দুজনারবিশেষ খাতির-তোয়াজ । কাদের ওস্তাদজী বলে ডাকে। মালাউন আর জয় বাংলাগুলোকে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে। পিন্ডির দন্ড রক্ষায় বিশেষ কোন কসরত করতে হচ্ছে না। একটা জয় বাংলা আনা হয় ইয়াজুজ-মাজুজের সামনে। কাদের বলে, এইটা মুজিবের লোক। মুক্তিবাহিনীর আদমী। পিন্ডি মার্শাল সঙ্গে সঙ্গে। ইয়াজিজ বেয়োনেট দিয়ে কারও পেট কেটে দেয়। নাড়ি ভুড়ি সব বেরিয়ে পড়ে বাইরে। কোনটার গলা কেটে দেয়। তুলে দেয়া হয় কসাইর বিহারী গুন্ডাদের হাতে। ওরা খুচিয়ে খুচিয়ে মারে। বিভৎস কান্ড। কেউ কেউ এই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান। তাকে ফায়ার করে মিয়াজিজ। নো মার্সি। নো মিসফায়ার। মালাউন হলে দন্ডবাজি খানিকটা ভিন্ন। মালাউন কেস ইয়ার আজিজের জন্য বরাদ্দ। সে হ্যাচকা টানে মালাউনের লুঙ্গি বা পাজামা খুলে ফেলে। কাদের কসাই বসে দেখে লোকটার লিঙ্গ। বলে, ওস্তাদজী, ইয়ে টা মালাউন হ্যায়। খতনা জরুর হ্যায়। কলেমা জরুর হ্যায়। ইয়াজুজও লোকটার লিঙ্গ নিরীক্ষণ কর। মাথা নাড়ে। তার সুরমা-সুরভিত চোখ দুটি পিট পিট করে। তার হাতে রয়েছে একটা ছুরিকা। সে চোখের পলকে মালাউনের লিঙ্গের বাড়তি চামড়া ব্যবচ্ছেদ করে। রক্তে ভরে যায় স্থানটি। ককিয়ে ওঠে। আর্তনাদ ওঠে। কিসের কি আর্তনাদ। কসাই তখন মহানন্দে চেচাচ্ছে। কলেমা পড় মালাউন। কলেমা পড় মালাউন। লা ইলাহা ইল্লালাহ.. ..। হাম লোগ মুফতে মে তুমকো মুসলমান বানা দেগা। প্রাণ বাঁচানোর অন্তিম ঐশী আশ্বাসে কেউ কেউ তীব্র যন্ত্রনা ও আর্তনাদ ভুলে করুন কন্ঠে কাদেরের সঙ্গে কন্ঠ মিলায়। ক্ষীণ নির্বল গলায় বলে, লা এ লাহা .. এল্লালাহা..।

ঐশী আশ্বাস নিমিষেই নিষ্ফল। হারামজাদা কলেমা পড়তে পারেনা ঠিক মত। কাট কাট। হারামজাদাকো কাট কর ফেক দো। সদ্য ধর্মান্তরিত নও মুসলিমের জায়গাও হয় লাশের শিবিরে। লম্বা লাইনের একদম শেষ দিকে ছিল কুর্মিটোলার দুই বাল্য বন্ধু। একটার নাম মিলন ঠাকুর। অন্যটা তাপস গাইন। দুটাকে দাগি হিসেবে ধরে এনেছে কাদের মোল্লা। দুটাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে সে মারতে চায়। মহাবজ্জাত। মিলন গলাবাজ। স্বরগ্রাম অনেক উচুতে। সে কথা বললে মাইক লাগে না। লোকজন বলে, মিলন মাইক। কুর্মিটোলায় বহুত মশহুর। শেখ মুজিবকে অবিকল নকল করে। লোকজনকে সাতই মার্চের ভাষন শোনায়। তর্জনি নেড়ে নেড়ে বলে, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। শুধু কি তাই । তাজিয়ার দিন সে মিছিল দিয়েছে এলাকায়। বেশ কিছু পোলাপান জুটিয়ে নিয়েছে। বুক চাপড়ে চাপড়ে তারা বলেছে, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। তোমার আমার নেতা, শেখ মুজিব। বুক চাপড়ে সবাই চিৎকার করে দৌড়েছে, জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। কুর্মিটোলার রাস্তায় রাস্তায় দৌড়েছে পোলাপান নিয়ে। মাতম করেছে মুজিবের নামে। এই হারামজাদাকে আর বাঁচিয়ে রাখা যায় না। তাপস গাইন আরেক কাঠি সরেস। সে গান গায়। কবিতা বানায়। জয় বাংলা নিয়ে গান গায়। কবিতা বানায়। জয়বাংলার জয়দ্রথ/ সারা বাংলার একই পথ/শেখ মুজিব মহাপ্রাণ/ইয়াহিয়া পারবে না করিতে বধ।এইসব ফালতু কথা বার্তা লিখে তাতে বিকট সুর করেছে হারামজাদা। সেটা সে বিকট কন্ঠে গায়। হারামজাদা বাঙ্গাল কওম সেই গান কবিতা রাস্তায় ভিড় করে শোনে। মহাবদ। দুই হারামজাদাকে আজ চুন চুনকে মরবে কাদের কসাই। কিন্তু দুই হারামজাদাকে নিয়ে অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিল। ইয়াজুজ মাজুজের সামনে হাজির করতেই নাম জিজ্ঞেস করা হল। নাম কেয়া হ্যায় ! মিলন ঠাকুর।মালাউন হ্যায়। হ্যাচকা টানে লুঙ্গি খোলা হল। ইয়াজুজ ছুরি হাতে এগিয়ে গেল। থমকে গেল। কেয়া হুয়া ওস্তাদজী। এই লোগ তো মালাউন নেহি কাদারভাই! ইয়ে আদমী খতনা কর চুকা। ইয়ে তো মুসলিম হ্যায়। মোচলমান! কাদের সবিস্ময়ে এগিয়ে যায়। কি নাম তোর! ঠাকুর। খতনা করছোস , নাম রাখছো মালাউনের। র‌্যাবেন্দ্রা ঠাকুর তোর বাপ লাগে। জবাব দেয় না মিলন। তোর কওম কি! মজহাব কি! বল হারামজাদা, কলেমা বল। লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। হারামজাদা, জয় বাংলা করোস। মুসলমান হইয়া নাম রাখছো মালাউনের। তুই তো একটা নাস্তিক। কাফির। ইয়াজুজের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে কাদের মোল্লা জানান দেয়, ওস্তাদজী, এই একটা নাস্তিক। কাফির। মুশরিক। এইটার পুন্দে বেয়োনেট ঢুকায়া দিন। ঝুলাইয়া মারন দরকার এইটারে। তাপস গাইনকে নিয়েও সমস্যা কম নয়। চেহারা সুরতে পাক্কা মুসলমান। প্রায় এক বিঘত লম্বা ঘন কালো কুচ কুচে দাড়ি। দেখলে মনে হয় এই মাত্র নামাজ কালাম করে এসেছে। কি নাম তোর হালার পুত। তাপস গাইন। লম্বা দাড়ি রাখছোস কেন মালাউনের বাচ্চা। নাকি মুসলমানের আউলাদ হয়ে মালাউনের নাম লইছোস। জবাব দেয় না তাপস। তারও লুঙ্গি চেকিং চলে। হ্যাচকা টান মেরে খুলে দেখে। ওস্তাদজী, এইটার অকাট। মুসলমানি হয় নাই। মালাউনের বাচ্চা আগা কাটে নাই; আবার দাড়ি রাখছে লম্বা। জান বাচাইতে মুসলমান ভড়ং লইছে। ছুরি হাতে চোখের পলকে সুন্নতি কারবার সেরে দেয় ইয়াজুজ। কলেমা পড় । কলেমা পড়। তাপস বিড় বিড় করে কিছুই বলতে পারে না। মানুষমারার বিলের কিনারায় মড়কখোলায় সেদিন সূর্যাস্তের আগেমিলন ঠাকুর আর তাপস গাইনকে নিয়ে উৎসব হয়। মিলন ঠাকুরের পশ্চাদদেশ দিয়ে বেয়োনেট অলা বন্দুক ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নাস্তিকের বাচ্চা। মরলেই তো গিয়া জাহান্নামের আগুনে গিয়া পুড়বি। আজরাইলে তোরে আগুনের পিপার মধ্যে চুবাইবে আর উঠাইবে। কাপড় কচলানোর মত আছড়াইবে। তার আগে দুনিয়ার আজাব ভোগ কইরা যা। ওই পারে আছে আজরাইল। এই পারে আছে কাদের মোল্লা। মালাউন হয়ে দাড়ি রাখার অপরাধ অতি গুরুতর। মালাউন কেন মুসলমানের লেবাস ধরবে। তাহলে হিন্দু-মুসলমান ফারাক কোথায় থাকবে। তাপস গাইন সেই গুরু-অপরাধ করেছে। গুরুদন্ড হওয়া দরকার। কসাইরা তার দাড়ি ধরে টানতে লাগল। লম্বা দাড়ি টেনে খামচে ছিড়তে লাগল। কতই বা ছিড়বে। শেষে পেট্রল মাখিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল দাড়িতে। এক লহমায় ঝলসে গেল মুখটা।

প্রতিটি দিনই যেন মহাদীর্ঘ। রাতগুলো অনন্ত কালরাত্রি। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে কষ্টের সেই সব দিনরাত্রি। মহাকালের রোজনামচার পৃষ্ঠায় রক্তের অক্ষরে লেখা যন্ত্রনা-নির্যাতন-হত্যার লাল-কালচে অধ্যায় বুঝি আর শেষ হবার নয়। বাবার পদচিহ্ন এই বাংলায় আর পড়বে কিনা বলা মুশকিল। প্রতিদিনই কোনও না কোন অঘটন। প্রতিদিনই কোন না কোন দু:সংবাদ। খারাপ খবরের দু:সহ আশঙ্কাগুলো ভারী করে রেখেছে চারপাশ। শোকাবহ করে রেখেছে পরিবেশ। জীবন তবুও থেমে থাকবার নয়। বর্ষায় ঘোর বৃষ্টি চলছিল। কখনও কখনও ভারী জলধারা। দুদিন তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি। জলে কাদায় রাস্তা ঘাট একাকার। বাদল দিনে ফুটল অজস্র কদম ফুল। ফুল ফুটবেই। শিউলি ফুলের পাপড়ি হাওয়ায় উড়ে উড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে অনেকদূরে। জীবনের এই স্পন্দনই যেন বেঁচে থাকবার পরম অবলম্বন। এই সময়টাতে হাসিনার কোল জুড়ে এলো ফুটফুটে এক শিশু। জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে জানিয়ে দিল তার আগমন। আগুন জ্বলছে শহরে। ভস্ম হচ্ছে বাড়িঘর। ট্যাঙ্ক মর্টারের হত্যার উৎসব আনাচে কানাচে। তার মাঝেই এক পশলা বকুল ফুলের সুগন্ধ। কি নাম রাখা যায় সদ্যজাত শিশুটির। টিক্কা চাক্কা ফৌজীরা সব কাজে বাগড়া দিতে জোরকদম মুখিয়ে আছেই। নবজাতকের জন্য চাই শুশ্রুষা। চাই যত্ন। শকুন সৈন্যদের নজর বাচিয়ে বড় কষ্টে শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন চলছিল। তার নাম রাখা হল জয়। বাবারই দেয়া নাম। তিনি সুখস্বপ্ন দেখেছিলেন একটি শুভ্র-সফেদ মানুষ আসবে পৃথিবীতে। ছেলে হলে নাম হবে জয় বাংলার জয়। আর কন্যা হলে নাম হবে জয়া। শত্রুকবলিত দেশে জয়ের বার্তা নিয়ে আসবে শিশুটি। নবজাতকটি হবে মহাবিজয়ের বার্তাবহ। আম্মা নবজাতককে কোলে তুলে বললেন, সত্যিই ও আমাদের জয়। আমার কোন ভাই নেই। জয় আমার ভাই। নামকরণের খবর পৌছে গেল দজ্জালদের কাছে। ধানমন্ডির সেই বন্দিশালাকে ঘিরে ব্যাপক প্রহরা। ওয়াজেদ যা একটু বাইরে বেরুতে পারেন । অন্যরা অনির্দিষ্ট বন্দি। জামাল রাসেল রেহানা আম্মা কারও বাইরে পা ফেলার অনুমতি নেই। যতক্ষণ না লয়ালপুরে শেখ মুজিবকে কতল করা হচ্ছে,এই মানুষগুলোর আয়ুর পেন্ডুলাম সেই পর্যন্ত অনিশ্চয়তায় দুলছে। মুজিব যখনই শেষ। এদেরকেও তখন এখানে চিরকবর দেয়ার বন্দোবস্ত চুড়ান্ত। সেই মৌজ-মুহূর্তের অপেক্ষায় প্রহরীরা। তারা কাল গুনছে। দিন গুনছে। হুকুম পেলেই হল। সবগুলোকে ট্যাঙ্কের চাকার নীচে গুড়িয়ে মারিয়ে হত্যা করা হবে। কোন চিহ্ন রাখা হবে না। কেবল ধুলো উড়বে বিধ্বংস ভিটায়। ধুলাই হবে সর্বশেষ ও একমাত্র সাক্ষী। চলবে…

অলংকরণ: শিল্পী শাহাবুদ্দিন