১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ট্রাক চাপায় নিহত শহীদ ইব্রাহিম সেলিমের একমাত্র সন্তান ডরোথী ইব্রাহিম তার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এবিষয়ে প্রশাসনের উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ডরোথী ইব্রাহিম বলেন, ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা ইব্রাহিম সেলিম শহীদ হন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি।
আমার ছোট চাচা ইব্রাহিম ফারুক ও তাঁর স্ত্রী আমাকে আমার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে তা আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন।
তারা আমার দাম্পত্যজীবনেও বিভিন্নভাবে অশান্তি সৃষ্টি করাসহ আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়ে আসছেন। এমনকি আমার বিয়ের রাতেও আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তারা।
এ বিষয়ে আমি পটুয়াখালী জেলাধীন আমার নিজ এলাকার বাউফল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচতে চাই এবং এজন্য আপনাদের মাধ্যমে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
১৯৮৪ সালের এই দিনটি ছিল এ দেশের ছাত্রসমাজের জন্য এক দুঃখজনক অধ্যায়। তখন দেশে ছিল সামরিক শাসন। বিকালে ছিল ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলের কর্মসূচি। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আহূত ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত সব ছাত্র সংগঠনের পৃথক পৃথক মিছিল বিকাল ৪টার মধ্যে মধুর ক্যান্টিন এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় পৃথকভাবে সমবেত হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা মধুর ক্যান্টিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন, সমাবেশকে উজ্জীবিত করেন। এরপর মূল মিছিল শুরু হয়।
মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দিয়ে রোকেয়া হল পেরিয়ে টিএসসি দিয়ে কার্জন হলের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলের সামনে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা, ডাকসু ভিপি আক্তারুজ্জামান, খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক, মুনির উদ্দীন আহমেদ, ফজলে হোসেন বাদশা, আনোয়ারুল হক, আবদুল মান্নান, শিরীন আখতার, মোস্তাক হোসেন, মুকুল বোস, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ। মিছিলটি কার্জন হল পার হয়ে ফুলবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়।
দাঙ্গা পুলিশ মিছিলের সামনে ও পেছনে অবস্থান নেয়। এ যেন মিছিল নয়, পুলিশি ঘেরাওয়ের মধ্যে একটি জেলখানা। তার পেছনেই ছিল পুলিশের পুলিশবিহীন ট্রাক। মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে, আকস্মিক পুলিশের পুলিশবিহীন ট্রাকটি মিছিলের মধ্যে উঠিয়ে দেওয়া হলো খুনি জান্তার নির্দেশে।
ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীম সেলিম ও দেলোয়ার হোসেন। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেল বাসদ ছাত্রলীগের নেতা আবদুস সাত্তার খান, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবীবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রকর্মী। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র অর্জনের লড়াইয়ের এক রক্তাক্ত অধ্যায়।
মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল, পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করল, নির্বিচারে লাঠিচার্জ করল, কে নেতা কে কর্মী সেই লাঠিচার্জে কোনো বাছবিচার ছিল না। ইব্রাহীম সেলিম ও দেলোয়ারের লাশ পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। সেই লাশগুলো তাদের গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাহারায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো এবং দাফন করা হয়।