তিন দশক ধরে ক্লাসিক্যাল এবং আধুনিক বাংলা গানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। তার সঙ্গে একান্ত আলাপে জানা গেলো জনপ্রিয় এই শিল্পীর অনেক অজানা কথা।
চ্যানেল আই অনলাইন: বর্তমানে কোন অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছেন?
ফাহমিদা নবী: নির্ঝর’র ‘১০১’ অ্যালবামে কাজ করছি। ৪৫ জন শিল্পীর মধ্যে আমার মোট ৯টি গান থাকবে এই আ্যালবামে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই অ্যালবামের কোনো সিডি বিক্রি হবে না। অনলাইন থেকে কিনে গান শুনবেন দর্শক। এছাড়া কিছু মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করেছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: অ্যালবামগুলো কি রোজার ঈদে আসবে?
ফাহমিদা নবী: আমি আসলে ঈদকে সামনে রেখে কাজ করি না। কাজ করি দর্শকদের জন্য। আমি যেটাই করি খুব সময় নিয়ে কাজটি শেষ করি। অ্যালবাম বাজারে আসা প্রোডাকশন হাউজের উপর নির্ভর করে। হয়তো তারা ঈদকে সামনে রেখেই অ্যালবামগুলো প্রকাশ করবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: গান নিয়ে কাজ হঠাৎ কমে গেছে মনে হয়।
ফাহমিদা নবী: আসলে আগে কাজ করতাম নিজের জন্য। আর এখন কাজ করি মানুষের জন্য। একজন শিল্পীর কাজ হলো কণ্ঠকে ধারণ করা আর মানুষের কানকে হরণ করা। তাই বেছে বেছে গান করি। যেই গানটাই করি না কেনো বেশি সময় নিয়ে কাজটি শেষ করি। কারণ আমার কাছ থেকে শ্রোতারা অনেক কিছু আশা করে। জানি না শ্রোতাদের কতোটুকু দিতে পারি। তবে পুরো শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি।
চ্যানেল আই অনলাইন: গান নিয়ে এই যে আপনার সাধনা, নিশ্চয়ই আপনার বাবা জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মাহমুদ-উন নবী এ নিয়ে অনেক কিছু বলতেন!
ফাহমিদ নবী: বাবা সবসময় বলতেন, তোমরা ভেতর থেকে গান করো। এটাকেই সত্য বলে ধারণ করি। মা এখনও বলেন। বাবা বলতেন, তোমাদের পথচলায় এই গানই পুরো জীবনে বয়ে নিয়ে যাবে। আর বলতেন, ভালো মানুষ হবা। সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করবা।
চ্যানেল আই অনলাইন: ছোটবেলা থেকেই কি সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিলো?
ফাহমিদা নবী: আমার ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা ছিলো। পড়াশুনা আমার ভালো লাগতো না। ছোট্ট থেকেই আমি গানের প্রতি পাগল ছিলাম। কিন্তু মায়ের ইচ্ছা ছিলো শিক্ষক বানানোর। মায়ের কল্পনার জায়গায় ছিলো পুরো বাড়িজুড়ে বই থাকবে। কিন্তু আমাদের বাসায় তেমন বই নেই। তবে আমি দশ বছর শিক্ষকতাও করেছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: বাবা মাহমুদ-উন নবী সর্ম্পকে আরো কিছু শুনতে চাই।
ফাহমিদা নবী: বড় অভিমানী ছিলো বাবা। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর বাবাকে রাজনীতির শিকার হতে হয়। এরপর চলচ্চিত্রে গান করা বন্ধ হয়ে গলো বাবার। অভিমানে বাবা আর গানই করলো না। বাবার মতো আমিও অভিমানী ছিলাম। কিন্তু এখন অভিমান করি না। অভিমান করলে নিজের ক্ষতি। কারণ শ্রোতারা আমার গান থেকে বঞ্চিত হবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: তারপরও প্লেব্যাকে কেনো কাজ করছেন না?
ফাহমিদা নবী: আসলে আমার গানের ক্যারিয়ারে প্লেব্যাক করা কম হয়েছে। ‘আহা’ সিনেমায় ২০০৭ সালে ‘লুকোচুরি’ গানটা গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। হঠাৎ করে চলচ্চিত্রে গান গেয়ে পুরস্কার পাওয়াটা আমার কাছে সৌভাগ্যের। তবে বাবার মতো ধারাবাহিকতা মানতে গিয়ে প্লেব্যাকে’র কাজটা খুব কম হচ্ছে। সামিনা আবার বেশি প্লেব্যাক করছে। আমি খুব কম গান করেছি। মাঝখানে তো ১২ বছর গানই করিনি। জানি না কেনো ফিল্মের গান এতো কম হচ্ছে।
চ্যানেল আই অনলাইন: বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় শিল্পীকে তেমন গান করতে দেখা যায় না কেনো?
ফাহমিদা নবী: আসলে এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। যারা কণ্ঠ নিয়ে কাজ করে তাদের আসলে এই প্রশ্নটি করতে হবে। কারণ তারা আমাদের কণ্ঠকে বিক্রি করে। আমাদের কাজ হচ্ছে একটি গানকে সুন্দর করে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। কম বাজেটে যদি তারা শিল্পীদের দিয়ে গান করিয়ে নেয়, সেক্ষেত্রে বেশি বাজেটে তারা কেনো যাবে! এজন্য শত শত গান হচ্ছে কিন্তু মনে জায়গা করে নিতে পারছে না।
চ্যানেল আই অনলাইন: বাপ্পা মজুমদার’র সঙ্গে আপনাকে ডুয়েট কোনো অ্যালবামে দেখছি না অনেকদিন।
ফাহমিদা নবী: আসলে আমার পক্ষ থেকে বাপ্পার সঙ্গে কাজ করার কোনো আপত্তি নেই। দর্শক যে আমাদের চায় এ ব্যাপারটা বাপ্পাকেই ভাবতে হবে। কারণ এতো সহজেই জুটি হওয়া যায় না। জুটি তৈরি করেন শ্রোতারা। আমাদের জুটি আমি বা বাপ্পা তৈরি করিনি। এটা শ্রোতারা করেছেন। তাই বাপ্পাকে ভাবতে হবে। বাপ্পা যদি চায় তাহলে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। কারণ আমি গান গাই আর বাপ্পা সুর করে। ও না চাইলে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হবে না।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনি অনেক মানুষের প্রিয় শিল্পী। আপনার প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কে?
ফাহমিদা নবী: আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী সামিনা চেীধুরী। আসলে বোন বলে বলছি না। ও যে গানটাই গায়, সেই গানকে মানসম্মত করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করে। তা হলে তার গান ভালো লাগবে না তো কার গান ভালো লাগবে! এছাড়া ছোটবেলা থেকে শাহনাজ রহমতউল্লাহর গান আমাকে বেশি টানতো। বর্তমানে কিছু শিল্পীর গান খুব ভালো লাগে।
চ্যানেল আই অনলাইন: বোনের সঙ্গে ছোট বেলায় গান নিয়ে ঝগড়া-ঝাটিও নিশ্চয়ই হতো?
ফাহমিদা নবী: ছোটবেলায় সামিনা’র সঙ্গে গান নিয়ে ঝগড়া হতো। রিকশায় আমরা দুজন দুজনের চুল টানতাম।
চ্যানেল আই অনলাইন: মেয়ে আনমোলকে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
ফাহমিদা নবী: আসলে নিজের ইচ্ছা জোর করে কখনো আনমলে’র উপর চাপিয়ে দেইনি। ওর যেটা করতে পছন্দ সেটাই করছে। আইন বিষয়ক পড়াশুনা করছে। ব্যারিস্টার হলে খুশি হবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: এ জীবনে অনেক ভালোবাসা, অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন। এখন জীবনের টার্গেট কি?
ফাহমিদা নবী: জীবনের টার্গেট ভালো টিমের সঙ্গে মানসম্মসত গানে কাজ করে যাবো। কারণ শ্রোতারা আমার কাছে যে ধরণের গান আশা করেন, সারাজীবন সেই ধরনের গান গেয়ে যাবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ফাহমিদা নবী: আপনাকেও ধন্যবাদ।