২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতারের মামলায় বাদল কুমার পালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাহাল রেখে রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বাদলকে খালাস দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশই বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ আজ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তার সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তি নুরুল।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবনাথ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,’হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন নিসিদ্ধ “কোডাইন ফসফেট” এবং “ক্লোরফেনিরামিন” এর উপাদান ফেনসিডিলের মধ্যে আছে। তবে যেহেতু ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ফেনসিডিল রাখা বা বহন করাকে বেআইনী বলা হয়নি, সুতরাং আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করার এবং সাজা দেয়ার কোনো আইনী ভিত্তি আমরা খুঁজে পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালতকে এটা দেখিয়েছি যে, ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আফিম থেকে উৎপন্ন কোন পদার্থ কাছে রাখা বা বহন করা বেআইনী। এক্ষেত্রে ফেনসিডিলের মধ্যে থাকা ওই “কোডাইন ফসফেট” আফিম থেকেই উৎপন্ন হয়।’
‘‘এছাড়া আমাদের দেশের এবং উপমহাদেশের বিভিন্ন রায় তুলে ধরে আমরা সর্বোচ্চ আদালতকে এটা দেখানের চেষ্টা করেছি যে, ফেনসিডিল কাশির সিরাপ বিবেচনায় নিতে হলে তা কেবলমাত্র রোগীর রোগ উপশম বা সুস্থতার জন্য (থিরাপিউটিক পারপাসে) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাবহার করা যাবে। এর বাইরে এটি (ফেনসিডিল) ব্যাবহার করলে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাকসহ সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। যা একজন মানুষকে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।’’
যশোরের বেনাপোল থেকে ২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার বাদল কুমার পালের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে বাদলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে বাদল কুমার পাল হাইকোর্টে আপিল করেন।
বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ ও বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়ার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাদলের সে আপিল মঞ্জুর করে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বাতিল করে তাকে খালাসের রায় দেন। ২০০৩ সালের ১২ মার্চ দেয়া ওই রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘২৫০ বোতল ফেনসিডিল রাখার বা বহনের জন্য আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করার এবং সাজা দেয়ার কোনো আইনী ভিত্তি আমরা খুঁজে পাইনি।’
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের এই রায়টি স্থগিত করেন। অবশেষে গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়। আদালত রায়ের জন্য ১ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী আজ রায় ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত।