নতুন বছরের প্রথম দিন শুরু হতে যাওয়া মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) সাত্যকি কবিরাজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন তিন পালায় পুলিশ ফোর্সসহ এক হাজার ৬৯ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থায় থাকছে জানিয়ে সাত্যকি বলেন: এখন পর্যন্ত ১শ’ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, তবে আয়োজকদের আমরা জানিয়েছি প্রায় দেড় শ’ ক্যামেরা মেলার ভেতরে ও বাইরে স্থাপন করতে হবে।
‘মেলার ভেতর ওয়াচ টাওয়ার, মেলায় ঢোকার সময় আর্চওয়ে, বাইরে চেক পোস্ট, ফুট পেট্রোলিং, অন্তঃবেষ্টনী ও বহিঃবেষ্টনীর নিরাপত্তায় থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ’, বলেন তিনি।
জানা যায়, মেলায় ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে ইভটিজিং, ছিনতাই, অজ্ঞান ও মলম পার্টি প্রতিরোধে সদা প্রস্তুত থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম। দর্শনার্থীদের জন্য আনন্দঘন পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করবেন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন: দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরে ভিন্ন কিছু করতে যাচ্ছি, যা দেখে দর্শনার্থীদের চোখ আটকে যাবে। এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মূল গেট সাজানো হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল স্প্যানের আদলে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হবে। চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এবারও বাণিজ্য মেলায় তৈরি করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও ছবির পাশাপাশি থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা ছবি। মেলার মূল ফটকেই থাকবে ডিজিটাল স্ক্রিন। এই স্ক্রিন থেকেই এক ঝলকে দেখে নেয়া যাবে পুরো মেলা।
মেলাকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতে এবার থাকছে ফিশ ও বার্ড অ্যাকুরিয়াম প্রদর্শন, শিশুদের জন্য পার্ক, গেমিং জোন ও খেলার উপকরণ। এছাড়াও থাকছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বিদ্যুতের সাব স্টেশন এবং মেলার বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান।
মেলা প্রাঙ্গণের ৩১ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ২৩তম এই মিলনমেলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তবে আয়োজকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূল ফটকে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরায় সেখানে দর্শনার্থীদের চোখ আটকে যাবে।
এবারের মেলায় ১৪ ক্যাটাগরিতে দেশ-বিদেশের ৫২০টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে থাকছে- ৬৪টি প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন, ৩৬টি মিনি প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন, ১৭টি জেনারেল প্যাভিলিয়ন, ২৫টি মিনি জেনারেল প্যাভিলিয়ন, চারটি রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, ছয়টি মিনি রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, ২৭টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন এবং ৮টি মিনি বিদেশি প্যাভিলিয়ন। এছাড়া ৬৭টি প্রিমিয়ার স্টল, ১৮টি বিদেশি স্টল, ২৬০টি সাধারণ স্টল ও ২৪টি ফুড স্টল।
বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, নেপাল, হংকং, জাপান, আরব আমিরাত, মরিশাস, ঘানা, মরক্কো এবং ভুটান। অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করবে।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন