২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি ও ভোগ্য পণ্যের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাবে প্রভাব পড়েনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার গুলোতে। বাজেট প্রস্তাবের পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি ও আঁখের গুড়, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, বার্লি, ভূট্টা, গম ও ভুট্টার তৈরি সুজি, লবন ইত্যাদিসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেন। এরপর থেকে জনসাধারণের মনে আশা জেগেছিলো হয়তো রমজানের লাগাম ছাড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে কিছুটা হলেও লাগাম পড়বে।
কিন্তু সবজীর বাজার ছাড়া অন্য সকল বাজার পণ্যমূল্য উর্ধ্বগতির দিকে। রাজধানীর কাওরান বাজার, রায়ের বাজার এবং নতুন বাজার ঘুরে দেখা গেছে: রমজানে অন্যতম প্রয়োজনীয় বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যেখানে অন্যান্য বছর এ বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া করলা ৪৫-৫০, ঝিঙ্গা-চিচিঙ্গা ৪৫-৫০, শশা ৩৫-৪০, পটল ৪০, ভেণ্ডি ৩০, মরিচ ২৫-৩০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
সবজির দাম অন্যান্য রমজানের তুলনায় কম হওয়া প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কাওয়ার মহাজন বলেন: বাজেট-টাজেট বুঝি না! এখন আমদানি ভালো আছে তাই দাম কম। তবে ঈদের পর সবজির বাজার আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে মাছের বাজারে অস্থিরতা রয়েছে আগের মতোই। যেখানে প্রতিকেজি রুই-কার্ফ জাতের মাছ রমজানের আগে কেনা যেতো ২২০ তেকে ২৫০ টাকা কেজির মধ্যে সেখানে রামজানে সেটি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩৫০ তেকে ৪০০ টাকা।
এছাড়া, কই মাছ ২২০ টাকা, শিং মাছ ৭৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৭২০ টাকা এবং তেলাপিয়া মাছ আকৃতি ভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারে অস্থির আগের মতোই। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। খাসির মাংস ৭৫০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি ৩৬০ , পাকিস্থানি লেয়ার মুরগি ১৮০ এবং ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা দরে।
চালের বাজারের অস্থিরতাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। মোটা ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা প্রতি কেজি এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে। এছাড়া, কাটারিভোগ প্রকার ভেদে ৬৫ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
প্রস্তাবিত ভ্যাট আইনের ফলে কোনো অবস্থায়ই কোনো পণ্যমূল্য বাড়বে না বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিদ্যমান মূল্য অনেকাংশে কমবে। এ প্রসঙ্গে নতুন আইনে ভ্যাট অব্যাহতির আওতা বাড়ানোর কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
গতকালের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের আইনে ৫৩৬টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের পরিবর্তে নতুন আইনে প্রায় ১ হাজার ৪৩টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এছাড়া মৌলিক খাদ্য যেমন— চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, ভুট্টা, গম ও লবণসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে।
পাশাপাশি ৯৩ ধরনের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এবং গণপরিবহন সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এর বাইরে কৃষি, গবাদিপশু ও মত্স্য চাষ খাতসংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০৪টি ক্ষেত্রে এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও অলাভজনক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে আগের মতো ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।