প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজনৈতিক তর্কে জড়িয়েছেন বিএনপির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘কেমন বাজেট চাই’ ২০১৭-২০১৮ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তথ্য নিয়ে তারা তর্কে জড়ান। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সেখানে এফবিসিসিআইর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। অর্থনীতি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে দুইটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
মাতলুবের কথার রেশ ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বলা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সঠিক নয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র নয় এটি।
বর্তমান প্রবৃদ্ধিকে জবলেস প্রবৃদ্ধি হিসেবে উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি এখন স্থবির হয়ে আছে। এখন প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির একটা চিত্র দেওয়া হচ্ছে। আসলে এটা জবলেস প্রবৃদ্ধি। তবে বর্তমানে যেটুকু হচ্ছে তা বিএনপির আমলের ধারাবাহিকতা। বিএনপির শেষ সময়ে প্রত্যেক খাতের প্রবৃদ্ধিই ইতিবাচক ছিল।
দেশের মেগা প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে কি হচ্ছে বাংলাদেশে। চীনে যে প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়, ইউরোপে যেখানে ২৮-৩০ কোটি টাকা খরচ হয়, সেটা আমাদের এখানে কেন ৩০ কোটি টাকা লাগে?
এসময় সত্যিকার অর্থে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমির খসরু আরো বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পরেছে।অবকাঠামো খাতে কোনো উন্নয়ন নাই। শিক্ষায় শুধু পাশের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেধা অর্জন হয়নি। এসব শিক্ষিতদের ভবষ্যিতে কোথাও ভাল চাকরি করতে পারবে না।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির দেড় বছর পার হয়ে গেলেও কেন এখন পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি?
রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন কবে প্রকাশ করা হবে মানুষ তা জানতে চায়। ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছে, নানা রকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন কর্মকর্তারা।ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে ব্যাংকিংসহ সবখাতে।
তবে অনুষ্ঠানে আমির খসরুর এসব বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনি যে ডাটা দিচ্ছেন তার কোন বাস্তবতা নাই। সঠিক তথ্য দিয়ে কথা বলেন। এগুলো রাজনৈতিক কথা। দু:খের বিষয়, আমাদের আলোচনা রাজনৈতিক হয়ে যাচ্ছে।
এর একটু পর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীও খসরুর বক্তব্যের বিরোধীতা করে বলেন, আপনার সরকার একটা মোবাইল কোম্পানিকে লাইসেন্স সুবিধা দিয়ে অনেক স্বার্থ হাসিল করেছে। আমাদের জন্য আজ বাংলাদেশের মানুষ বলতে গেলে ফ্রি মোবাইল সেবা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনারাই সব লুটেপুটে খেয়েছেন।বহু উদাহরণ আছে। কোনো ভিশন ছিল না আপনাদের। শুধু ব্যালেন্স শীট মিলিয়েছেন।একশ প্রকল্প হাতে নিয়ে সেগেুলো কেটে কেটে ৬০-৭০ এ নিয়ে আসতেন। সেগুলেও ঠিকমতো বাস্তবায়ন করেননি।
বাজেট নিয়ে এই আলোচনায় দুই পক্ষ্যের মধ্যে কিছুক্ষণ রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক হলেও রিজার্ভ চুরির বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি অর্থমন্ত্রী। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে মান নয়, প্রসারকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার খুব বেশি বলার নাই। কারণ এটা শিক্ষামন্ত্রী বলতে পারবেন।
সভায় এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, প্রতিবেশি দেশ ভারতে এক বছরে পর পর চারবার ভারতে তেলের দাম কমানো হলেও বাংলাদেশে একবারও কমেনি। তাহলে আমাদের সক্ষমতা কোথা থেকে আসবে। তেলের কারণে আমাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা চরম অসম প্রতিযোগিতায় রয়েছে। আমরা টিকে থাকতে চাই।
এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ আমরা তেলের দাম কমাতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। তেলের দাম কমাতে পারলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়তো।
এফবিসিসিআইর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান প্রমুখ।