‘বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহে তারল্য সংকট বাড়বে’
‘খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না’ অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও ১৭ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি অর্থপূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহের যে কথা বলা হয়েছে তাতে ব্যাংকের তারল্য সংকট আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মেনন বলেন, আর্থিক খাতের দূর্গতি উন্নয়নের পথে কাঁটা হয়ে রয়েছে। যেমন- ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য, লুটপাট, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি। ঋণ খেলাপির কারণে ব্যাংকগুলো নুঁয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলোতে চলছে তারল্য সংকট। করের টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য এবারও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকা দূরে থাক ব্যাংকগুলোকে নজরদারি করতেও অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া, ব্যাংক মালিকদের আবদারে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিকভাবে হাতে তুলে দেয়া, একই ব্যাক্তি একাধিক ব্যাংকের মালিক বলে ব্যাংক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যাংক মালিক অ্যাসোসিয়েশন কতৃক সিআরআর নির্ধারণ করা-এসব কিছু ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।’
এমনকি সুদের হার এক অংকে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়েও তারা সেই কথা রাখেননি। কেবল ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বলেছে, হুকুম দিয়ে সুদের হার ঠিক রাখা যায় না। এসবও বলেছেন ব্যাংক মালিকরা।
বর্তমান মহাজোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে ব্যাংক খাতে সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠনের বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আলোচনা সাপেক্ষে উল্লেখ করে রেখে দিয়েছেন। অপরদিকে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও মাত্র কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের সম্পর্কে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা ঋণ খেলাপিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সেদিন হাইকোর্ট যদি স্থগিত না করতো তাহলে মে মাস থেকেই তা কার্যকর হতো।’
গত ১৬ মে ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, খেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এক্ষেত্রে প্রথম ১ বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।
এই নির্দেশনার সুবাদে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাও ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ পেতেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করলে নিয়মিত গ্রাহকদের চেয়েও খেলাপি গ্রাহকদের কম সুদ দিতে হবে। ঋণখেলাপিদের সুদ গুনতে হবে মাত্র ৯ শতাংশ হারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সার্কুলারের উপর আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট।
মেনন বলেন, ‘সেদিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন- এক টাকাও ঋণ খেলাপি বাড়বে না কিন্তু এরপর ১৭ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকার উপরে চলে গেছে। যা এই বাজেটের এক পঞ্চমাংশ। অর্থাৎ বাজেটের ৫ ভাগের ১ ভাগের সমান। আর ঋণ খেলাপি কিভাবে নির্দিষ্ট হবে তা জানি না। বিনীতভাবে বলতে চাই সাবেক অর্থমন্ত্রী যেমন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে পারেনি। এবারও এটা নিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। কারণ তারাই (ব্যাংক মালিকরা) বর্তমানে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে।’
চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, বাজেটের ঘাটতি অর্থপূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহের যে কথা বলা হয়েছে তাতে ব্যাংকের তারল্য সংকট আরো বাড়বে। বেসরকারি বিনিয়োগ আরো কমে যাবে, কর্মসংস্থান হবে না। কারণ এসবই একইসূত্রে গাঁথা।
পুঁজিবাজার বিষয়ে মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পুঁজিবাজারের উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রীও বলেছিলেন, তার হাত এত লম্বা নয় যে, তিনি পুঁজিবাজারের অপরাধীদের ধরতে পারবেন।