ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে মুখিয়ে ছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাও চেয়েছিল টাইগারদের হারিয়ে দুই পয়েন্ট ঝুলিতে নিতে। বৃষ্টির কারণে বিশ্বকাপে হয়নি দুই দলের শক্তির পরীক্ষা। তাতে আক্ষেপ ঝরেছিল দুই অধিনায়কের কণ্ঠেই। বিশ্বকাপ শেষ হতেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এবার বাঘ-সিংহের লড়াই। মাঠেই প্রমাণ হবে ইংল্যান্ডের মাঠের বৃষ্টির জল আসলেই কোন দলের জন্য আক্ষেপের!
শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডের ভেন্যু কলম্বোতেও আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। আবহাওয়া বার্তা জেনেও লঙ্কান দর্শকরা খুব করে চাইবেন দিনটি যেন শুষ্ক থাকে। এদিনই যে লাসিথ মালিঙ্গার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। টেস্ট ক্রিকেট থেকে আগেই অবসর নেয়া মালিঙ্গা প্রেমাদাসায় বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলে তুলে রাখবেন রঙিন পোশাকও। থামবে ১৫ বছরের ক্রিকেট-অধ্যায়। ২০০৪ সালের ১ জুলাই ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল ব্যতিক্রমী বোলিং-অ্যাকশনের জন্য আলোচনার জন্ম দেয়া এ পেসারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
গত কয়েকবছরে চোটজর্জর হয়ে পড়ায় শ্রীলঙ্কা দলে অনিয়মিত হয়ে যান মালিঙ্গা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে খেলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে। তার পরপরই দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়ে মনে করছেন মোক্ষম সময় এটাই। বয়স ৩৬-এ পড়ার আগেই বিদায় বলে দিচ্ছেন ক্রিকেটকে।
ব্যতিক্রমী অ্যাকশন, আগ্রাসী মনোভাব, নিখুঁত ইয়র্কার, ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার মতো স্লোয়ার, ঝাঁকড়া চুলের প্রদর্শনীতে ক্রিকেট আঙিনায় খুবই দ্রুত পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মালিঙ্গা। এ পেসারের বিদায়ের মঞ্চে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে টাইগার ওপেনার তামিম ইকবালের। চোটের কারণে সফরের আগমুহূর্তে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ছিটকে যাওয়ায় দলনেতার দায়িত্ব দেয়া হয় তামিমকে। নিউজিল্যান্ডে টেস্টে নেতৃত্বে দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও রঙিন পোশাকে এটিই হবে তার নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচ।
অধিনায়কত্ব নিয়ে খুব একটা রোমাঞ্চিত নন তামিম। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টাইগার ওপেনার জানিয়েছেন দল জিততে পারলেই দায়িত্বটা হবে উপভোগ্য, ‘বিষয়টা আমি ওইভাবে চিন্তা করি নাই। তবে আপনারা (সাংবাদিক) যখন বলছেন অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হচ্ছে, তখন শুনে ভালো লাগছে। তবে অধিনায়কত্বটা তখনই ভালো লাগে যখন দল ভালো খেলে এবং জিততে পারে। আমি এটা নিয়ে মোটেও উত্তেজিত নই, বরং একটা চিন্তা করছি, বোর্ড আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছে সেটা যেন ভালোভাবে করতে পারি।’
বিশ্বকাপ ভালো যায়নি তামিমের। করতে পারেননি প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স। এ বাঁহাতির ব্যাট হাতে নিজেকে কক্ষপথে ফেরানোর চ্যালেঞ্জও থাকবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে। অধিনায়ক হিসেবেও থাকবে কঠিন চ্যালেঞ্জ, বড় দায়িত্ব। বিশ্বকাপে খেলা দলের সেরা পারফর্মার সাকিব আল হাসান নেই স্কোয়াডে। ছুটিতে আছেন আরেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান লিটন দাস। নেই অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। তাদের বিকল্প হিসেবে যারা আছেন তাদের নিয়েই জয়ের মিশনে নামবে বাংলাদেশ। যে পথে ভালো শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অধিনায়ক।
‘আমি সবসময়ই বলি যে, স্টার্টিং লাইনের আগেই যদি ফিনিশ লাইন দেখে ফেলি তাহলে সমস্যা। বল বা ব্যাট যাইহোক না কেনো, শুরুটা ভালো করা, ম্যাচ জেতার টার্গেট অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। এটা আমার ক্ষেত্রেও যেমন, ওদের (শ্রীলঙ্কা) অধিনায়ককে জিজ্ঞেস করুন তার ক্ষেত্রে একই রকম।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলেই যেমন ওয়ানডেকে বিদায় বলবেন শ্রীলঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা, এই সিরিজের পর তেমনি লঙ্কানদের সঙ্গে থাকবেন না কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে। সিরিজ শুরুর আগে এ দুটি বিষয় স্পষ্ট ও বেশি ফোকাস হওয়ায় একটু হলেও ‘অপ্রস্তুত’ থাকবে শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের এই ‘অপ্রস্তুতি’ বাংলাদেশের জন্য কোনো সুযোগ কিনা এবং সুযোগ হলে বাংলাদেশ সেটা নিতে পারবে? কিছুটা জটিল এমন প্রশ্নের কৌশলী উত্তরই দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক।
‘এই দুটি বিষয় মাঠের বাইরের ঘটনা, ফলে সেটা বাইরেই থাকবে। তারা যখন ১১জন মাঠে খেলতে নামবে, তখন একজনের (মালিঙ্গা) কথা তাদের মনে থাকবে না। আর নিজের শেষ ম্যাচ হলেও মালিঙ্গার মাথায় এটা থাকবে না যে, এটা আমার (মালিঙ্গা) শেষ ম্যাচ, আমি যা খুশি তাই করব। ওরা আসলে একটা জিনিসই চিন্তা করবে, কীভাবে আমাদের হারানো যায়, আমরাও সেটাই করব। ফলে মনে করি না, এটা (মালিঙ্গা-হাথুরু ইস্যু) ম্যাচে খুব একটা প্রভাব ফেলবে। যদি প্রভাব পড়ে তো আমাদের জন্য সেটা ইতিবাচক।’
শুক্রবারের ম্যাচের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে মুহূর্তেই। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম থাকবে দর্শকে পরিপূর্ণ। তবে সেটি কেবল বাঘ-সিংহের লড়াই বলে নয়, মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচ হওয়ায় প্রেমাদাসার গ্যালারিতে থাকতে ভক্তদের বিপুল হৈ-চৈ, উপস্থিতি।