২০০৮ সালে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানাধীন আমার দেশ পত্রিকার চরম আর্থিক দুর্দশার সময়ে দায়িত্ব নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে জনাব মাহমুদুর রহমান তার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের সকল শ্রেণীর একটা প্রজন্মকে গুজব শব্দের কৌশল, প্রচার, প্রকাশ, প্রতিষ্ঠিত করার যাবতীয় কলা কৌশল শিখিয়ে দিয়ে গেছে। যার ঋণ বাঙ্গালী জাতী কোনদিন পরিশোধ করতে পারবে না। ১২৫ মামলার বোঝা কাঁধে নিয়েই হয়তো কোন এক লগ্নে মাহমুদুর রহমান বিদায় নিবে এই গ্রহ থেকে। কিন্তু তার দেখিয়ে যাওয়া গুজবের যাবতীয় কলা কৌশল থেকে যাবে এই দুনিয়ায়। স্যালুট না জানিয়ে পারছি না গুজব কিং জনাব মাহমুদুর রহমান কে।
মাহমুদুর রহমান ইস্যুতে বাংলাদেশের আইন আদালত নিরপেক্ষ কতটুকু এই প্রশ্নটা রাখতেই চাই, একটা ব্যক্তির নামে ১২৫ টা মামলা থাকার পরেও উনি কিভাবে এইদেশে প্রতিদিন প্রতি নিয়ত এখনো গুজব ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচার করেই চলেছে….. যার সর্বশেষ সংযুক্তি ছিল দিল্লির হাইকোর্টের রায় কে বাংলাদেশের হাইকোর্টের রায় বলে আমার দেশ পত্রিকায় প্রচার।
জনাব মাহমুদুর রহমান গিয়েছিলেন কুষ্টিয়াতে, অবশ্যই কোন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে নয়, গিয়েছিলেন একটা মামলার প্রধান আসামী হিসেবে আদালতে হাতজোড় করে জামিন চাইতে। কাজেই এমন অবস্থায় আদালতের বাইরে মাহমুদুরের প্রটেকশন নিশ্চিত করার দায়িত্বটা যে সরকার বা পুলিশের নয়, সেটা মনে হয় আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তথাকথিত মানবিক ভয়কাতর সুশিলরা ভুলেই গেছে। আবার ভয়কাতর এইসব মানবিক সু-শীলদের আরেকটা যুক্তি বেশ হাস্যকর মনে হলো, তাদের ভাবনার রাডারে ধরা খেয়েছে যে, মাহমুদুরের এ যাবত কালের সকল অন্যায় অপরাধ কুষ্টিয়া থেকে নিষ্পাপ দুধের বাচ্চা হয়ে যাওয়ার চান্স তৈরি হয়েছে। তাদের কে বলছি, একদম এমনটা ভাববেন না, কারণ ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া জনাব মাহমুদুর রহমান সাহেব গিয়ে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হলেই উনার সকল স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত অপরাধ গুলো ক্ষমা হয়ে যাবে না। অপরাধ অপরাধের জায়গায়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটনার জায়গায়। আরো সোজা ভাবে বললে অপরাধের মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে, আর হামলাকারীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত হতে পারে, জড়িতদের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে পারে। কাজেই কুষ্টিয়াতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির কারণে মাহমুদুর রহমানের সকল অপরাধ হালকা বা ক্ষমা হওয়ার কোন চান্স নেই।
তবে একটা প্রশ্ন রাখছি, জনাব মাহমুদুর রহমানের মত কারো কারো কাছে এতো গুরত্ত্বপূর্ণ ব্যক্তি ৯০-৯১ মডেলের টয়োটা কারিনা গাড়ি নিয়ে কুষ্টিয়া গিয়েছিল কেন ? যেখানে উনি উনার নিরাপত্তা একটা ফ্যাক্ট, তাছাড়া ইতিপূর্বেই সারাদেশে বেশ কিছু ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবেও উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সেখানে এতোটা সাদা মাঠা ভাবেই মাহমুদুর রহমান কেন কুষ্টিয়া গিয়েছিল, এই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে দেখার দরকার আছে।
একটা পক্ষ অর্থাৎ মাহমুদুর পক্ষের অভিযোগ এবং সু-শীল কিছু লোকের মন্তব্য, মাহমুদুরের উপরে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। জিজ্ঞেস করছি কেন অভিযোগ তুলছেন বা কেউ কেউ কেন মন্তব্য করছেন ? কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এই মামলার বাদী ছিল এই বলে নাকি সেখানে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী গিয়েছিল এই বলে ?
অবশ্যই মনে রাখতে হবে যা একদম ভুলে গেলে চলবে না, সেটা হচ্ছে জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে উক্ত মামলার বাদী ছিল কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত তুষার। আর তুষার যখন জেলার সাংগঠনিক নেতা হিসেবে কোথাও যাবে তখন তার সাথে ছাত্রলীগের কিছু নেতা কর্মী যেতেই পারে। হা, সেদিন মাহমুদুর রহমানের জামিন চাওয়ার দিনে তুষার আদালতে গিয়েছিল, এবং সাথে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ছিল। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করতে হচ্ছে, মাননীয় আদালত যখন মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করে তারপরে মামলার বাদী কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত তুষার তার সাথে থাকা সকল নেতা কর্মী নিয়েই বিকেল ৩ টার মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে চলে যায়। এর ভিতরেই আবার আদালত প্রাঙ্গণে মাহমুদুর রহমান ফেসবুকে লাইভ করে সরকার, প্রধানমন্ত্রী, আদালত, পুলিশ ও দেশের সার্বভৌমত্ত্ব কে ইন্ডিয়ার অংশীদার বানিয়ে বেশ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।বিকেল ৪ টার পরে মাহমুদুর রহমান আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হলে ঐ সময় আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি জামাত দলীয় আইনজীবী ছাড়া আর তেমন কেউ মাহমুদুর রহমানের সাথে ছিল না।
হ্যাঁ ঠিক আছে মাহমুদুর রহমানের অভিযোগ, যেহেতু আদালতে প্রবেশের আগে বাইরে ছাত্রলীগের কর্মীদের উপস্থিতি দেখেছিল, সেহেতু তার ধারনা সে প্রকাশ করতেই পারে, কিন্তু এটাও সত্যি যে এই হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত ছিল, এই অভিযোগ শুধু মুখে বললেই প্রমাণ হবে না, হতে পারে না। যেখানে মামলার বাদী ছিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার, বাদী হিসেবে আদালতে উপস্থিত থাকাটা ছিল খুব জরুরী, সেখানে যদি তুষার মামলার আসামীর শরীরে হাত তোলার সাহস রাখে তাহলে কষ্ট করে তুষারে মামলা করলো কেন ? আইনের কাছে বিচার চাইলো কেন ? তুষার নিজেই তো আরো এক বছর আগেই মাহমুদুরের বিচার করতে পারতো , তাই না ?
দেখুন, একটা লোক জনাব মাহমুদুরের কথা বলছি, দিনের পর দিন সেই ২০০৮ সাল থেকে শুরু এখন ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের এমন একটা দিন বাদ রাখেনি এর মধ্যে অপপ্রচার, বিভ্রান্তি, ধর্ম অবমাননা, স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন, রাষ্ট্র বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা, স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্ষার চেষ্টা সহ বহু অপরাধ করেই চলেছে, সেখানে সারাদেশেই মাহমুদুর মিত্রে গিজগিজ করছে, এমনটা ভাবছেন কি মনে করে ? একটু বলবেন…
কেন অন্য কেউ মনের আক্রোশ মেটানোর জন্য মাহমুদুরের উপরে হামলা চালাতে পারে না? ঐ যে বললাম জনাব মাহমুদুর রহমান ৪ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন, সন্দেহ তো এটাও করা যায় যে মাহমুদুর রহমান সাহেব পরিকল্পনা করেই কুষ্টিয়া গিয়েছিলেন কি না ? আর ভিডিও ফুটেজে যা দেখলাম, মূলত মাহমুদুর রহমানের শরীরে কেউ কোন আঘাত করেনি, এমনকি মাহমুদুরের গাড়িতে সঙ্গে থাকা আরো তিন জন(চালক সহ) তাদের উপরেও কেউ হামলা করেনি, হামলাকারীদের মুখে মুখোশ ছিল এবং তারা শুধু গাড়িতেই ভাংচুর চালিয়েছে, যা থেকে মনে মনে হলেও সন্দেহ আসতে পারে যে কুষ্টিয়ার আদালতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পিছনে জনাব মাহমুদুর রহমানের কোন পরিকল্পনা আছে কি না ? এক ডিলে তিন পাখি হামলার হামলাও হলো, কমদামের গাড়িটা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, এবং মিডিয়ায় আবারো লাইম লাইট টপিকে আলোচনায় এলো। আশাকরি ভেবে দেখবেন।
আরেকটা বিষয় দেখেন অবশ্যই একজন নাগরিক হিসেবে আপনার সেই অধিকার আছে বিভিন্ন পাপের পাপী অপরাধী মাহমুদুর রহমানের উপড়ে হামলা কারা চালিয়েছিল, সেটা রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাইতেই পারেন। কিন্তু অপরাধ প্রমাণ না করেই যদি খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছিল এই কথা বিশ্বাস বা মেনে নিতে আপনার কষ্ট হয়, তাহলে আপনি কোন যুক্তিতে মাহবুবুর হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত ছাত্রলীগের নামে জাজমেন্ট দিচ্ছেন ? কেন দিচ্ছেন ? আর অপরাধী মাহমুদুরের নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা যদি উল্লেখই করতে চান, তাহলে কেন সরকারের কাছে জবাব চাচ্ছেন না, ১২৫ টি মামলার আসামী হিসেবে কেন এখনো মাহমুদুর রহমান কারাগারের বাইরে ? কেন তার বিচার দ্রুত শেষ করা হচ্ছে না ? এই বিষয়ে সরকার কেন ভূমিকা পালন করছে না ? বলবেন, কেন জানতে চাচ্ছেন না।
একটা কথা বলি, জনাব মাহমুদুর রহমান ইস্যুতে মানবতা দেখান হাজার বার দেখান কোন সমস্যা নাই। তবে ২০০৮ সাল থেকে এখন ২০০৮ পর্যন্ত জনাব মাহমুদুর রহমানের চালানো বাক স্বাধীনতা বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)