বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন টি-টুয়েন্টি এবং টেস্ট সিরিজ ঘরের মাঠেই খেলতে অনড় পাকিস্তান। নিজেদের হোম সিরিজগুলো আর দেশের বাইরে খেলতে চায় না তারা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বিশেষ সূত্রে এমনই জানাচ্ছে সেদেশের জিও নিউজ অনলাইন।
অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের আসন্ন পাকিস্তান সফর। খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের অনিচ্ছার কারণে সফরে নারাজ বাংলাদেশ। সফর হলেও সেটা কেবল টি-টুয়েন্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। স্বল্প সময়ের জন্য পাকিস্তান সফরে যেতে চাইলেও সেখানে লম্বা সময় অবস্থান নিয়ে দলের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সূত্রে দিনকয়েক আগে এমন খবর দেয় ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ওই খবরে প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার পিসিবির অনড়ের খবর জানা গেল।
তিন টি-টুয়েন্টি ও দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ২০২০’র জানুয়ারিতে পাকিস্তানে যাওয়ার সূচি রয়েছে বাংলাদেশের। এরমধ্যে টেস্ট সিরিজ আবার আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। সফরে না গেলে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হারাবে বাংলাদেশ।
বিসিবির এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, ‘যদি আমরা সফরে না যাই, তাহলে আমরা পিসিবিকে একটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সিরিজ আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করতে পারি। যদি বিষয়টি আসে, আমরা আশা করছি আইসিসি আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
পিসিবির মুখপাত্র জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বিদেশের মাটিতে আর কোনো হোম সিরিজ না খেলার জন্য আমরা আমাদের নীতিতে অনড় আছি। বাংলাদেশের আসন্ন সফর সম্পর্কিত প্রাথমিক পরিকল্পনা তাদের কাছে (বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট) পাঠানো হয়েছে। শুধু ভেন্যু এবং তারিখগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
প্রথম অংশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হওয়ার কথা। তারপর সূচি রয়েছে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টির। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়ার কথা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এ সিরিজ।
বিসিবির মতে, এই সফর হলেও এটি কেবল টি-টুয়েন্টিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। বিসিবি এখনো সফর নিয়ে কোনকিছু প্রকাশ করেনি। ফলে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে।
বিসিবির ওই কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘খেলোয়াড়রা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ট্যুরের জন্য পাকিস্তানে যেতে রাজি নয়। কোচিং স্টাফরা এরইমধ্যে তাদের অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন। তিনটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ ঠিক আছে, কারণ সেটা সাত-আট দিনের মধ্যে শেষ হবে। তবে তারা সেখানে ২১ দিনের (তিন সপ্তাহ) জন্য যেতে চান না।’
পিসিবি বলছে, ‘সিরিজের অর্ধেকটি এক জায়গায় এবং অন্য অর্ধেক আরেক জায়গায় খেলা সম্ভব নয়। এ নিয়ে আর ভাবাও সম্ভব নয়, কারণ যদি তেমনটা হয়, তাহলে পিএসএল এবং ভবিষ্যতে যেকোনো হোম সিরিজ পাকিস্তানে খেলার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তারা আরও বলছে, ‘পিসিবি মনে করছে, বাংলাদেশের পুরুষদের দলের এখন পাকিস্তান সফরে কোনো সমস্যা নেই। কারণ বাংলাদেশ থেকে দুটি দল ইতোমধ্যে পাকিস্তান সফর করে গেছে।’
চলতি মাসেই অবশ্য বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দল পাকিস্তান সফর করে এসেছে। নারীদের ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টি সিরিজ হয় লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে, আর অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ম্যাচগুলো হয় রাওয়ালপিণ্ডিতে। ওই সিরিজের আগে বিসিবির নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফর করে।
পিএসএল’র পঞ্চম সংস্করণের পুরোটাই পাকিস্তানে খেলা হবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং সাউথ আফ্রিকার মতো বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের পাকিস্তানে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পিসিবি বলছে, ‘যদি এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিদেশে হোম সিরিজ খেলি, তাহলে আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো পিছিয়ে যেতে পারে।’
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা টিম বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রায় দশ বছর পাকিস্তান সফর থেকে দূরে থাকে ক্রিকেট দলগুলো। তবে সম্প্রতি সেদেশ সফর করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। গত মাসেই সেখানে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলেছে লঙ্কানরা। ডিসেম্বরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তান যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
গত বছর নিউজিল্যান্ড সফরের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তারপর থেকে বিদেশ সফরে আরও বেশি সতর্ক বিসিবি।