প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত পৌঁছেছেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম নয়াদিল্লি সফর।
নয়াদিল্লিতে ৩ ও ৪ অক্টোবর ২ দিনের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। প্রথম দিনে বিশ্বের ১০০টি বাণিজ্যিক ফোরামের সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
কী কী বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হবে? তা নিয়ে আলোচনা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষনের শেষ নেই। বহুল আলোচিত তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু, আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং সীমান্ত হত্যার বিষয় আলোচনায় থাকবে কিনা, তা নিয়েই বেশি আগ্রহ জনমনে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কোনো অফিশিয়াল কর্মসূচি নেই দিল্লীতে, সেজন্য ধারণা করা হচ্ছে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি হয়তো আলোচনা হবে, যৌথ বিবৃতিও আসবে, কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হবে না। তবে সম্ভাব্য কী কী বিষয়ে আলোচনা ও চুক্তি হতে পারে, তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন কিছু তথ্য।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নৌপরিবহন, অর্থনীতি, সমুদ্র গবেষণা, পণ্যের মান নির্ধারণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। সেইসঙ্গে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, চোরাচালান বন্ধে নানা উদ্যোগ, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ রোধ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, রফতানি পণ্যের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিংসহ নানা প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার, বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতে অনুমোদনের উদ্যোগ, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ট্রানজিট, বিবিআইএন এমভিএ প্রটোকলসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা ও চুক্তি হতে পারে বলে ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনের উদ্যোগ থাকবে আলোচনায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিচারে ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। পাশাপাশি রাষ্ট্র হবার কারণে সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাও রয়েছে অনেক। ভারতের আভ্যন্তরীণ কোনো সিদ্ধান্ত অনেকসময় চেইন-ইফেক্টের মতো বাংলাদেশেও এস পড়ে, সম্প্রতি ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা ও ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ার পর বাংলাদেশে তার প্রভাব লক্ষ্য করলে বিষয়টি বোঝা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর পর তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়, আর ভারতেও নরেন্দ্র মোদি পর পর দুইবারের মতো ক্ষমতায় আছেন। সেই হিসেবে কূটনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক থেকে দু’দেশের মধ্যে একটি সুন্দর বোঝাপড়া থাকার কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রোহিঙ্গা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় সামাল দিয়ে অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় থাকা অমীমাংসিত বিষয়গুলোর একটা সমাধান আসবে বলে আমাদের আশাবাদ।